Logo
Logo
×

অল্পকথা

সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কেন জরুরি

Icon

এ টি এম মোস্তফা কামাল

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কেন জরুরি

সীমান্ত এলাকায় জিরো পয়েন্টে তিন স্তরবিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে ভারত তাদের অংশে মহাসড়ক নির্মাণ করেছে এবং সড়কবাতি লাগিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সীমান্ত সুরক্ষা এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ভারত অনেক সুবিধা ভোগ করছে।

এখন বিএসএফকে রাইফেল কাঁধে নিয়ে খেতের আইল দিয়ে কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে হেঁটে সীমান্ত পাহারা দিতে হয় না। তারা এখন গাড়িতে চড়ে টহল দিতে পারে। তাদের সীমান্ত চৌকিও কমিয়ে আনা হতে পারে। যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে ভারতের অনেক সুবিধে হয়েছে। ভারতীয় চোরাকারবারিরাও তাদের সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে।

মোটরসাইকেল বা গাড়ি ব্যবহার করে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক নির্ধারিত পয়েন্টে দ্রুত এসে চোরাই পণ্য, মাদকদ্রব্য, ফেনসিডিল কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে ছুড়ে মেরে তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারছে। আর সীমান্তের এপারে বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা খেতের আইল দিয়ে হেঁটে ওই চোরাই পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিএসএফের গুলি খেয়ে মারা যাচ্ছে।

বিএসএফের মনোবলও অনেক চাঙা, কারণ তারা জিপ গাড়িতে চড়ে কিংবা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তদুপরি সীমান্তে কোনো পয়েন্টে বিএসএফের শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে অতি দ্রুত তা করা সম্ভব হচ্ছে।

২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য-ট্রাফিক হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে সিলেট, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় জেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় আমাকে অনেকবার যেতে হয়েছিল। নিজের ইচ্ছাতেই আমি অনেক বিওপি পরিদর্শন করেছি। তখনকার বিডিআরের জওয়ানরা কত কষ্ট করে তাদের দায়িত্ব পালন করে, তা স্বচক্ষে দেখেছিলাম। তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনেছিলাম। যেখানেই গিয়েছি, সেখানে তারা আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। দেখেছিলাম বিডিআর জওয়ানরা কত কষ্ট করে হেঁটে রাইফেল কাঁধে নিয়ে খেতের আইল দিয়ে ঘুরে ঘুরে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।

তাই কাঁটাতারের এপারে বাংলাদেশ অংশে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। এতে আমাদের বিজিবির পক্ষে সীমান্ত পাহারা দেওয়া অনেক সহজ হবে। চোরাচালান বন্ধে তারা আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে, মাদকের চোরাচালানও কমে যাবে। বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। দুদেশের সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণেও এ সড়ক ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ আর ভারত দুটি স্বাধীন-সার্বভৌম প্রতিবেশী দেশ। ভারত যেহেতু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে তার অভ্যন্তরে সীমান্ত মহাসড়ক নির্মাণ করেছে, সেহেতু বাংলাদেশের জন্যও একইভাবে কাঁটাতার থেকে সমদূরত্বে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় কোথায় কী সমস্যা আছে, সরেজমিনে তা দেখেশুনে প্রতিকারমূলক কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নির্ধারণে কর্মকর্তা/নীতিনির্ধারকদের মাঝেমধ্যে ফিল্ড ভিজিটে যাওয়া প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব যারা বিজিবির বিষয়টি দেখভাল করেন, তাদের সীমান্ত সফরে যাওয়া উচিত।

বছর দুই আগে ‘মাছের দাম মাদকে পরিশোধ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় মাছ পাঠানোর পর অনেক ক্ষেত্রে পেমেন্টের বিষয়টি মীমাংসা করা হচ্ছে মাদকের মাধ্যমে। কী ভয়ানক খবর! আমরা মাদক খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি। সীমান্তজুড়ে একই ধরনের অবস্থা বিরাজমান বলে মনে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আর ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। সীমান্ত সফরে যেতে হবে, সমস্যা বুঝতে হবে এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ টি এম মোস্তফা কামাল : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম