
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৫ এএম

সেলিম কামাল
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের অভ্যুদয়-পূর্ববর্তী ১৯৬৯ সালের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন সুলেখক সিরাজ উদ্দিন সাথী। বাংলাদেশের প্রথম বিসিএস-এর মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়া এই লেখক সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশকেও। দেশের পূর্বাপর রাজনীতিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরখ করেছেন অর্থনীতি ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করা এ লেখক। এরই মধ্যে হাত পাকিয়েছেন অর্থনীতি, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র নিয়ে লেখা নানা বই প্রকাশের মাধ্যমে। বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়েছে বত্রিশ। তার তেত্রিশতম বইটির নাম ‘বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনীতি : মওলানা ভাসানী ও বেহাত বিপ্লব’।
মওলানা ভাসানী বাংলাদেশের এক মহিরুহ রাজনীতিকদের নাম, এক সংগ্রামী গণমানুষের নেতার নাম। ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-তিন প্রেক্ষাপটেই সমান দাপটে মানুষের নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলিত করেছেন গণমানুষকে, নেতৃত্ব দিয়েছেন অকুতোভয়ে। এই জনপদে তিনি ছিলেন বামপন্থি রাজনীতির বটবৃক্ষ। তার ছায়ায় ও অভিভাবকত্বে বিকশিত হয়ে গতি পেয়েছে এ অঞ্চলের রাজনীতির বামধারা। বস্তুত তিনি ছিলেন সমাজবিপ্লবের অনুঘটক। চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে সান ইয়াৎ সেন যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, এখানে তার সবই করেছিলেন ভাসানী। কিন্তু এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য একটাই-ওখানে ইয়াৎ সেনের হাল ধরতে একজন মাও সে তুং ছিলেন, এখানে ভাসানীপরবর্তী কান্ডারি হবেন এমন কেউ ছিলেন না। সেই গৌরব ও ব্যর্থতার ইতিহাসকেই এ বইয়ে অভূতপূর্ব ও ব্যতিক্রমী বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী অনেকটা গবেষণাগ্রন্থের আদলে।
তিনটি ভাগে বইটি লিখেছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী। প্রথম ভাগে রয়েছে বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনীতির উত্থান, গঠন, ভাঙন ও পতনের ইতিবৃত্ত। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস। এবং তৃতীয় ভাগে বিধৃত হয়েছে বামপন্থি রাজনীতির মাধ্যমে সংঘটিত ও সংগঠিত সমাজ বিপ্লব বেহাত হওয়ার নেপথ্য কারণ ও দায়ভার। প্রথম ভাগের অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছে-রাজনীতির ডান-বাম : বাংলাদেশ, পাকিস্তানের বাম রাজনীতি, বিভক্তির ঢেউয়ে হারা কীরিতে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও বামপন্থিরা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে। দ্বিতীয়ভাগের অধ্যায়গুলো-আজন্ম বিদ্রোহী, বিশ্ব পরিমণ্ডলে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক, মুক্তির সোপান তলে, বাংলাদেশে। আর তৃতীয় ভাগের অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছে-যখন যেভাবে বেহাত, ব্যর্থতার দায়ভার, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংগ্রামী জীবনের সময়রেখা।
বইটির সূচিপত্রই বলে দেয় এ বইয়ে কী বলতে চাওয়া হয়েছে। অথবা, বইয়ের শিরোনামেই স্পষ্ট হয়ে যায়- বইটির বক্তব্য কী? এ প্রেক্ষিতে মোটাদাগে লেখকের বই থেকে একটু উদ্ধৃতি না দিলেই নয়। ব্যর্থতার দায়ভার অংশে তিনি লিখেছেন-‘মওলনা ভাসানী ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উনিশ শ উনসত্তর সালে যে অগ্নিগর্ভ গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল তা বিপ্লবী সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। এ সময়টা এশিয়া ও অন্যত্র সমাজ বিপ্লবের উত্তাল সময়। সমাজতন্ত্রের জন্য দেশে দেশে তরুণদের টগবগে আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এর শক্তিশালী স্রোতোধারা ঢেউ তুলেছে। পূর্ব পাকিস্তানে এর ছোঁয়া লেগেছিল। একে অভিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল কমিউনিস্ট পার্টির। কিন্তু তারা তা পারেনি। মওলানা ভাসানী তাদের প্রতি ভরসা করেছিলেন। তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতি তার আস্থা ছিল। কিন্তু তারা চলল বিভক্তি আর পরস্পরবিরোধী ভুল পথে। এমনকি মওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে গেল তাদের বড় অংশ। এমনটা ছিল আত্মঘাতী। প্রকৃতপক্ষে তারা আত্মঘাতী পথেই এগোল। আর তাতে নেতৃত্ব বেহাত হলো। হুজুগের ঢেউয়ে নেতৃত্ব গেল সুবিধাবাদী উঠতি বুর্জোয়াদের কর্তৃত্বে।’ অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ২৯৬ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৬০০ টাকা।