Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

বাস্তব জীবনের সংযোগগুলোকে সাহিত্যের রূপ দিতে চেয়েছিলাম: অ্যান্ড্রু ও’হেগান

Icon

মেজবাহ উদ্দিন

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সমাজ-মাধ্যমের এই বাড়বাড়ন্তের যুগে সাহিত্যও কি তার পরিচিত সীমার মধ্যেই আটকে থাকবে? নাকি পরিবর্তিত সময়ের হাত ধরে নিজেকে নিয়ে আসবে নতুন এক দর্পণের সামনে? এ জিজ্ঞাসাই জোরালো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্কটিশ ঔপন্যাসিক অ্যান্ড্রু ও’হেগান তার সর্বশেষ বই ‘ক্যালেডোনিয়ান রোড’র মাধ্যমে পরিবর্তিত সময়ের হাত ধরতে চেয়েছিলেন বলেই মনে হয়। ৫৬ বছর বয়সি পুরস্কারজয়ী এ ঔপন্যাসিক বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন, যা তার সর্বশেষ বই ‘ক্যালেডোনিয়ান রোড’র পটভূমি। এ বইটি গত বছর অরওয়েল পুরস্কারের জন্য রাজনৈতিক কথাসাহিত্য বিভাগে মনোনীত হয়েছিল। ৬৫০ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসে ৬০টি চরিত্র রয়েছে এবং এটি সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সমালোচক মার্গারেট ড্রাবল একে ‘খুবই আকর্ষণীয় সমকালীন জীবনচিত্র’ বলেছেন, আর ইয়োতাম ওটোলেঙ্গি লিখেছেন এটি ‘লন্ডনের বিশৃঙ্খল, বহু-সাংস্কৃতিক গৌরবকে অনন্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছে’। গার্ডিয়ান’র সঙ্গে অ্যান্ড্রু ও’হেগানের সাম্প্রতিক কথোপকথনটির তুলে ধরা হলো।

‘ক্যালেডোনিয়ান রোড’ সম্পর্কে আমাদের বলুন

: আমি লন্ডন রিভিউ অফ বুকস-এর জন্য অনেক বড় বড় প্রতিবেদন লিখছিলাম-জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে কাজ করছিলাম (একটি স্মৃতিকথার ওপর, যা অ্যাসাঞ্জ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা নিয়েও আমি লিখেছি), এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিলাম যিনি দাবি করেছিলেন তিনি বিটকয়েন আবিষ্কার করেছেন এবং আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম যারা ইন্টারনেটে নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তুলছিল। এসব গবেষণা একসঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি করেছে ক্যাম্পবেল ফ্লিন চরিত্রটি, যে আধুনিক লন্ডনের দুর্নীতির কেন্দ্রস্থলে থাকা এক পতনশীল মানুষ।

আমি ব্রিটিশ অভিজাত সমাজের সঙ্গে রাশিয়ার কালো টাকার সংযোগ সম্পর্কে কিছু ধারণা পেয়েছিলাম, আর সেই অর্থের গতিপথ অনুসরণ করতে গিয়ে পৌঁছে যাই স্ট্রিট গ্যাং, মানব পাচারকারী, ফ্যাশন ব্র্যান্ড এবং উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের জগতে। আমার মনে হচ্ছিল যেন ডিকেন্স (চার্লস ডিকেন্স) এবং জোলা (এমিল জোলা)’র শক্তি আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে স্পন্দিত হচ্ছে। গবেষণাটি বিশাল হয়ে উঠল : এক মুহূর্তে আমি উইন্ডসরে পোলো ম্যাচে রানি এলিজাবেথের সঙ্গে ছিলাম, পরের মুহূর্তে র‌্যাপ গ্যাংদের মাঝে বা লেস্টারের ঘাম ঝরানো কারখানার ভেতরে। বাস্তব জীবনের এ সংযোগগুলো দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম এবং এগুলোকে সাহিত্যের রূপ দিতে চেয়েছিলাম।

গবেষণাকালে যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে?

: কয়েকজনের সঙ্গে আছে। কেউ কেউ মারা গেছেন, কেউ জেলে, কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন; আর কেউ এখনো প্রকাশ্যে ভালোভাবে টিকে আছেন-তবে এতটাই বদলে গেছেন যে তারা নিজেরাও নিজেদের চিনতে পারেন না, বা চিনতে চান না। মানুষ কীভাবে নিজেদের চেহারা আড়াল করতে পারে, তা দেখলে আপনি অবাক হবেন।

আপনার সঙ্গে ক্যাম্পবেল ফ্লিন চরিত্রটি মিল আছে ?

: কিছু মিল অবশ্যই রয়েছে, যেটা তার অভিজ্ঞতাকে গল্পের জন্য লোকালাইজ করেছে; তবে আমি আমার অনেক কিছুই এ বইয়ের বাকি ৫৯টি চরিত্রের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছি। বেশিরভাগ গল্পেরই একটি কেন্দ্রীয় চেতনা বা কেন্দ্রীয় কণ্ঠ থাকে এবং ক্যাম্পবেলের জীবনকে আমার নিজের অভিজ্ঞতার ছাঁচে ফেলার কাজটি আমার স্বাভাবিক লেগেছে। তবে তার মানসিক পতনের গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এটা এক ধরনের নাচ-যেখানে গভীরভাবে ব্যক্তিগত ও পুরোপুরি অপরিচিত অভিজ্ঞতা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, আর আমি ঠিক এ ধরনের কাজ করতেই ভালোবাসি।

গত এডিনবার্গ বই উৎসবের মঞ্চে বলেছিলেন যে, আপনার জীবনে আপনি Strange Case of Dr Jekyll and Mr Hyde বইটি হয়তো ৩৫ বার পড়েছেন

: রবার্ট লুই স্টিভেনসন যেন এ বইয়ের মাধ্যমে এক ধরনের আত্মিক পথপ্রদর্শক হয়েছেন। আমি তার লেখার ধরন ভালোবাসি-কী স্বাভাবিকভাবে তিনি তার ব্যক্তিগত মোহগুলোকে এক অন্য জগতের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলিয়ে দেন, প্রথম খসড়া থেকেই স্টিভেনসনের সূত্র-লিপি সেখানে রেখে যান। আমার গল্পে ক্যাম্পবেল দ্বিধাগ্রস্ত, তার বর্তমান অতীত সত্ত্বার ছায়াযুক্ত, যা হয়তো তার মধ্যে এক ধরনের বিপর্যয়ের ক্ষমতা জাগিয়ে তুলছে। ব্যক্তিগতভাবে, আমি সময়ের অতিবাহিত হওয়া এবং কোথা থেকে শুরু করেছি তা নিয়ে সব সময় বেশ নির্ভার থেকেছি; কিন্তু ক্যাম্পবেল তা নয়, এবং আমার Dr Jekyll and Mr Hyde বইটি বারবার পড়ার ফলে তার ভেতরে এক ধরনের অন্তর্নিহিত অশুভতার অনুভূতি জেগে উঠেছে বলে মনে হয়, যা তার স্বভাবসুলভ নিরুদ্বেগ প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিরোধী

কখন ঠিক করেন প্রতিবেদনটি উপন্যাস হিসাবে লিখবেন?

: সাধারণত যখনই কোনো গল্পের মুখোমুখি হই তখনই তার রূপ ঠিক করে ফেলতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাসাঞ্জের গল্পটি কখনোই আমার কাছে উপন্যাস হিসাবে লেখা উচিত বলে মনে হয়নি। আমি ভেবেছিলাম, এর শক্তি নিহিত থাকবে ব্যক্তিগত রিপোর্টিংয়ের মধ্যে। পরে, জোনাথন ফ্রাঞ্জেন আমাকে বলেছিলেন যে, এটি তাকে তার উপন্যাস Purity লেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল, যেখানে অ্যাসাঞ্জ-সদৃশ একটি চরিত্র রয়েছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন আমি নিজে এটি উপন্যাস হিসাবে লিখিনি? আমি তাকে সোজাসাপ্টা বলেছিলাম যে, আমার মনে হয়েছে গল্পটি ননফিকশন হিসাবেই বেশি প্রাণবন্ত থাকবে। এটা কখনো কখনো সত্যি হয়, কখনো হয় না। আপনি এটাকে অনুভব করতে শিখবেন। আপনি যদি ভালো লেখার বিষয়ে আগ্রহী হন, তবে কখনো মান কমাবেন না; আপনি এমন বাক্য গঠনের চেষ্টা করবেন যা বিষয়বস্তুর সঙ্গে মানানসই হয় এবং যদি এটি ননফিকশন হয় তবে তা যেন বাস্তবতা ও সত্যের মানদণ্ডে টিকে থাকতে পারে। লেখার গুণগত মান এতটুকুও কমে যাওয়া উচিত নয়।

এমন কিছুর বলুন, যা আপনার কাজের জন্য প্রয়োজন

: এটা সময়ের সঙ্গে বদলেছে। আমার প্রথম বই ‘দ্য মিসিং’ আমি প্রায় সম্পূর্ণটাই লিখেছিলাম শীতের এক কঠোর মৌসুমে, বিছানায় শুয়ে, যখন আমি ২০-এর কোঠায় ছিলাম। আমার উপন্যাস ‘আওয়ার ফাদার্স’ আমি শুরু করেছিলাম ওয়েস্ট কর্কে ভাড়া করা একটি বাড়িতে, যা প্রয়াত জেনি ডিসকি আমাকে ধার দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আমি ডেস্কে বসেই লিখি। আমি সুন্দর ল্যাম্প আর পুরোনো টাইপরাইটার পছন্দ করি। লন্ডন আর স্কটল্যান্ডে দুটি লেখার ঘর তৈরি করেছি, যেখানে এমন সব জিনিস রেখেছি যা আমাকে কাজ করতে সাহায্য করে। আমি চিত্রকলা ও ফটোগ্রাফ ভালোবাসি।

আপনি সম্প্র্রতি কী পড়ছেন?

: কিছু বই নতুন করে পড়ছি-হেনরি জেমসের ‘দ্য টার্ন অব দ্য স্ক্রু’, শেমাস হিনির ‘স্টেশন আইল্যান্ড’। পাশাপাশি এমন কিছু বইয়ে সময় কাটাচ্ছি যা শৈশবের উজ্জ্বলতা ধারণ করে : ‘দ্য লিটল প্রিন্স’, ‘শার্লটস ওয়েব’, ‘এ চাইল্ডস গার্ডেন অব ভার্সেস’।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম