Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

আমি আগ্রহী সেই অদৃশ্য বোঝা নিয়ে, যা মানুষ সবসময় বয়ে চলে, কিন্তু কখনো নামিয়ে রাখতে পারে না: ক্যারিল ফিলিপস

Icon

মেজবাহ উদ্দিন

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমি আগ্রহী সেই অদৃশ্য বোঝা নিয়ে, যা মানুষ সবসময় বয়ে চলে, কিন্তু কখনো নামিয়ে রাখতে পারে না: ক্যারিল ফিলিপস

‘যদি পথ খুঁজে না পাও, খুঁজতে থাক। যদি পথ খুঁজে পাও, সাহসী হও। যেন ভুল করার সাহসটুকু থাকে। মনে রেখ তোমার হতাশা, যন্ত্রণা, ভেঙে পড়াগুলোই সাফল্য গড়ে নেবার সিঁড়ি। তাই ভুল কর।’ এলকেমিস্টের লেখক পাওলো কোয়েলহোর কথা মতো ভুল করার সাহসই যেন ৬৬ বছর বয়স্ক ক্যারিল ফিলিপসকে একজন সফল ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং প্রাবন্ধিক বানিয়েছে। তার উপন্যাসগুলোর জন্যই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। লেখার পাশাপাশি ফিলিপস অ্যামহার্স্ট কলেজ, বার্নার্ড কলেজ এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটিসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক হিসাবে কাজ করেছেন। দুবার কমনওয়েলথ লেখক পুরস্কার এবং মার্টিন লুথার কিং মেমোরিয়াল পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। তার নতুন উপন্যাস ‘অ্যানাদার ম্যান ইন দ্য স্ট্রিট’-এর প্রকাশ উপলক্ষ্যে কথা হয় গার্ডিয়ানের সঙ্গে।

এই বইটি কীভাবে শুরু হয়েছিল তা জানতে চাই

: কয়েক বছর আগে আমি এ রাস্তাগুলো দিয়ে হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম, এটি আগের সেই জায়গার মতো আর নেই, যেখানে আমি ছাত্র অবস্থায় ঘুরে বেড়াতাম : কোনো রেগে শপ (বিশেষ ধরনের মিউজিকের দোকান) নেই, কোনায় দাঁড়িয়ে স্মোক করা ছেলেরা নেই। এখন এখানে বেকহ্যাম থাকে! ডেভিড ক্যামেরনেরও এখানে একটি বাড়ি আছে। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, নটিং হিল কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং সে পরিবর্তনের প্রকৃতি সঙ্গে আমার নিজের সম্পর্ক, যা এক সময় আমার জন্য একেবারে ভিন্ন অর্থ বহন করত।

উপন্যাসের কোন চরিত্রটি প্রথম এসেছিল?

: জমিদার চরিত্রটি। ২০১৯ সালে আমি পিটার র‌্যাচম্যান নামে এক কুখ্যাত জমিদারের ওপর একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম, এর মূল কারণ আমি কখনো কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের মুখে তার সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনিনি, যদিও তার নাম অর্থপিপাসু আচরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে নিয়ে যত বেশি জানলাম, তত বেশি বুঝতে পারলাম, সংবাদমাধ্যমে তাকে অন্যায়ের প্রতীক হিসাবে প্রচার করা হয়েছে। এটা ছিল অভিবাসীবিরোধী মনোভাব এবং ইহুদিবিরোধিতা। আমি একজন পোলিশ হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির গল্পটি খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম, যিনি এমন সময়ে অভিবাসীদের আবাসন দিয়েছিলেন যখন অন্য কেউ তা করছিল না। সে নিবন্ধটি লিখতে গিয়ে, আমি তাকে কল্পনায় ভাবতে শুরু করলাম এবং যখনই আমি তার অভ্যন্তরীণ জগৎ নিয়ে নিজেকে সহানুভূতির প্রশ্ন করতে থাকি সেটা তার কথাবার্তা ও কাজের সঙ্গে মিলছিল না; তখনই গল্পটি কথাসাহিত্যের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।

একজন ঔপন্যাসিক হিসাবে আপনাকে সবচেয়ে অনুপ্রাণিত করে কী? কারও গল্পটি আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি জটিল হতে পারে, এ চিন্তাটি?

: আমি আগ্রহী সেই অদৃশ্য বোঝা নিয়ে, যা মানুষ সব সময় বয়ে চলে, কিন্তু কখনো নামিয়ে রাখতে পারে না। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান প্রেক্ষাপটে নয়-আমি যে শহরে বেড়ে উঠেছি সেখানে প্রচুর আইরিশ ও ইহুদি অভিবাসন ছিল, এবং আমি জীবনে সবচেয়ে বড় যে যাত্রাটি করেছি তা ছিল ১৯৮০ সালে উত্তরের শহর থেকে লন্ডনে আসা। আমি ভাবতাম অভিবাসন আপনাকে মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে, এই স্থির বিশ্বাস নিয়েই আমি বেড়ে উঠি-দাদি, দাদা, কাকু, ফুফুদের জানা : আমি ভাবতাম আমি অস্বাভাবিক, কারণ আমার সেই বিশাল বড় পরিবারটি ইয়র্কশায়ারে ছিল না। কিন্তু যত বড় হয়েছি, তত বুঝতে পেরেছি অভিবাসনই মূল ধারার গল্প। যখন আমি আমার বাড়ির দরজা দিয়ে বের হই, আমি এলিস দ্বীপ এবং স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে সরাসরি দেখি : এটি প্রতিদিন আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ বিদেশ থেকে অজানা গল্প নিয়ে আসে।

১৯৯৩ সালে গ্রান্টার দশকে একবার করা সেরা তরুণ ব্রিটিশ ঔপন্যাসিকদের তালিকায় নাম উঠে যাওয়ায় আপনি যে কতটা অস্বস্তি অনুভব করেছিলেন, তা আপনি সম্প্রতি লিখেছিলেন...

: আমি আমার সমসাময়িকদের মধ্যে অনেককেই খ্যাতির কারণে ভুগতে দেখেছি-আমি কারও নাম বলব না! আলোচনায় থাকা, প্রোফাইল হওয়া, সময়ের ধারায় থাকা-এ সবকিছুই আকর্ষণীয়, কিন্তু একজন লেখকের জন্য সবচেয়ে খারাপ জায়গা হলো মঞ্চের মাঝখানে, যখন আলো সরাসরি মুখে পড়ে : তখন কিছুই দেখতে পান না। আমি সৌভাগ্যবান ছিলাম যে, প্রথম যে প্রকৃত লেখকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, তিনি ছিলেন জেমস বল্ডউইন। তিনি খানিকটা খ্যাতির আকর্ষণে ছিলেন- অত্যন্ত উদার একজন মানুষ, কিন্তু তিনি আলো ভালোবাসতেন। আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটা খুব ক্ষতিকর হতে পারে।

আপনি কি এ খ্যাতি এড়ানোর জন্য আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন?

: প্রথমদিকে, হ্যাঁ। আশি এবং নব্বইয়ের দশকে যখনই কোনো কৃষ্ণাঙ্গ লোক কোনো পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছুড়ত, তখনই বিবিসি বা দ্য গার্ডিয়ান থেকে কেউ ফোন করত আমাকে উদ্ধৃতি দেওয়ার জন্য। ‘আপনি কী বোঝাতে চাইছেন : আমি এ বিষয়ে কী ভাবি?’ ‘আমি কিছুই ভাবি না!’ পরিচয়হীনতা ভালো। চাপমুক্তভাবে নিজের কাজ করা দরকার। এটি খুব বড় চাপ ছিল না-আমি বলছি না যে সবাই খুব আগ্রহী ছিল-কিন্তু কাজ করার সুযোগটা দারুণ ছিল। আমি কখনোই ব্রিটিশ সমাজ নিয়ে আমার চিন্তা থেকে দূরে যেতাম না, কারণ ব্রিটেনই আমাকে একজন লেখক বানিয়েছে। অ্যাল্যান্ড রোডের গ্যালারিতে বসেই এসব উদ্বেগ আমার অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল! আমেরিকায় সেটা হয়নি।

কতদিন পরপর আপনি লীডসে ফিরে যান?

: খুবই নিয়মিত। আমি বর্তমানে আমার পুরোনো ইতিহাস শিক্ষকের সম্পর্কে কিছু লিখছি। তিনি ১৯৩৯ সালে বার্লিন থেকে এসেছিলেন। সম্ভবত এ উপন্যাসের কারণে তিনি আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছেন। তাই আমি সেখানে নিয়মিত যাচ্ছি, তার সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করছি। তিনি একটি সিনাগগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা এখনকার কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মাঝখানে অবস্থিত। আমার ১২ বছর বয়সে আমি এগুলো জানতাম না-তখন আমি শুধু ভাবতাম তিনি ছিলেন এক কঠিন মানুষ, যিনি আমাকে শাস্তি দিতেন এবং মাথায় আঘাত করতেন। এখন বুঝতে পারছি, তিনি এটা করতেন কারণ তিনি আমাকে নিয়ে ভাবতেন : তিনি একজন অভিবাসীকে চিনতে পেরেছিলেন।

আপনি তো একজন শিক্ষক। আপনার ছাত্রদের শেষবার কোন উপন্যাস পড়তে দিয়েছিলেন?

: আমার পড়া সবচেয়ে ভালোগুলোর একটি : উইলিয়াম ট্রেভরের রিডিং তুর্গেনেভ। এটি একজন তরুণ আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্ট মেয়ের গল্প, ১৯৫০-এর দশকের একটি গ্রামে প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তাই সে একটি খুবই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে করে এবং এর ফলে ৩০ বছর ধরে কষ্ট পায়। আমি এ উপন্যাসের গঠন ভালোবাসি। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করবেন, কীভাবে আমি এ রকম দারুণ কিছু লিখতে পারব? আমি মনে করি এটি অনুভব করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ-যে মানটা এত উঁচুতে রয়েছে, আমি কীভাবে সেটা অর্জন করব?

সূত্র : দি গার্ডিয়ান

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম