Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

সালেহ উদ্দীন আহমেদের

উন্নয়ন কল্যাণ অর্থনীতি : বিচিত্র চিন্তা

Icon

এম এন আমীন

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়ন কল্যাণ অর্থনীতি : বিচিত্র চিন্তা

বাংলাদেশে যে কয়জন বিবেকবান মানুষ বিবেকের তাড়নায় ও নিজের দায়িত্ববোধ থেকে দেশ, জাতি, সমাজের কথা বলেন, তাদের কল্যাণ চিন্তা নিয়ে কথা বলেন, লিখেন তাদের অন্যতম ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি একজন বিদগ্ধ মানুষ-একজন অর্থনীতিবিদ, একজন শিক্ষক, একজন লেখক, একজন সমাজ সংস্কারক।

অর্থনীতির নিরস, খটমটে বিষয়গুলোকে সহজ করে বলা, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা করতে পারা সহজ কথা নয়। অর্থনৈতিক জটিল ভাবনালোকে তত্ত্বীয় আলোচনার বাইরে এনে সাধারণ মানুষের বোঝার সীমার মধ্যে আনতে তিনি সদাই সচেষ্ট এবং তাতে তিনি বহুলাংশে সক্ষম হয়েছেন। তিনি দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনগুলোর কথা গল্পের মতো করেই বর্ণনা করেছেন সহজবোধ্য ভাষায়। অর্থনীতি কীভাবে আমাদের জীবনযাপন, আচরণ নিয়ন্ত্রণ করছে তা আমরা সহজেই জানতে পারি, বুঝতে পারি তার এ গ্রন্থ পাঠে। তা আমাদের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ছে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক একজন গভর্নর রঘরাম রাজনের কথা। তিনি তার অর্থনৈতিক ভাবনাগুলোকে সহজ করে সবার উপলব্ধির কাছাকাছি নিয়ে আসতে পেরেছেন। এসব বিষয় নিয়ে অনেক গ্রন্থও রচনা করেছেন। সবাই তা থেকে উপকৃত হচ্ছে। অর্থনীতির ছোটখাটো ঘনটনাগুলো কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব রাখছে, কোথায় কি ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটছে, কার, কোথায় কি ভূমিকা ইত্যাদি অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে; অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ সেসব আলোচনা।। ‘দি ফল্টলাইনস’, ‘ডু হোয়াট আই ডু’, ‘ব্রেকিং দি মউল্ড’, ‘প্রগ্রেস অ্যান্ড কনফিউশন’ ইত্যাদি তার বহুল আলোচিত গ্রন্থ।

একইভাবে সালেহ উদ্দিন আহমেদও নির্মোহ ভাষায় স্বদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও তাদের কল্যাণের জন্য অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং করছেন। সেখান থেকে আমরা উপকৃত হচ্ছি। বর্তমান গ্রন্থটি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। অর্থনীতির ছাত্র না হয়েও কেউ তা পড়ে জ্ঞান লাভ করতে পারেন, সচেতন হতে পারেন। অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডগুলো কীভাবে সম্পর্কিত তা জানতে পারেন। নীতি-নির্ধারকরাও নীতি প্রণয়নে পেতে পারেন দিকনির্দেশনা।

তিনি তার গ্রন্থটির নাম রেখেছেন ‘উন্নয়ন কল্যাণ অর্থনীতি : বিচিত্র চিন্তা’। এতে তিনি জানুয়ারি ২০২১ থেকে অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে লেখা ৩২টি নিবন্ধ সন্নিবেশিত করেছেন। এ নিবন্ধগুলো তার বস্তনিষ্ঠ ও পরিপক্ব চিন্তার ফসল। কেননা, তিনি তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার আলোকেই এগুলো লিখেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে কাজ করার সময় দেশের অর্থনীতি বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ লাভ করেছেন। তার বিভিন্ন বক্তব্য ও লেখায় এসবের সুস্পষ্ট ছাপ বিদ্যমান। এখনো মানুষ গভর্নর হিসাবে তার সময়কালের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

নিবন্ধগুলোর শিরোনাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও সেগুলো একটা সমন্বিত রূপরেখা তুলে ধরে। তা তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে উল্লেখও করেছেন। অর্থনীতি জীবনের কথা বলে, জীবনমানের উন্নয়নের কথা বলে। তিনি তার সব নিবন্ধে নানাভাবে সে কথাই বলার চেষ্টা করেছেন। তার ভাষায়, ‘আমার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের কল্যাণ, সমাজের কল্যাণ এবং মানুষের সার্বিক উন্নয়ন, অর্থাৎ শুধু প্রবৃদ্ধি, আয়-ব্যয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তার বাইরে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা এসব, অর্থাৎ সার্বিক উন্নয়ন’। এখানেই তিনি শেষ করেননি। ওসবের সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা, তার কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, তার পছন্দমতো কোনো বস্তু কেনা ও ভোগ করা, এগুলোও মানুষের সার্বিক চাহিদারই অংশ’। দেশ, কাল, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সর্বোপরি মানুষ সবই একসূত্রে বাঁধা। সে সবকিছুই তার লেখার অনুসঙ্গ।

তাই বলা যায়, সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও নিবন্ধে উদ্ধৃত বিষয়গুলোর আবেদন সার্বজনীন, চিরায়ত; আর তাই সবার জন্যই পাঠযোগ্য এবং পঠনীয় বলে মনে করি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম