Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

বই আলোচনা

সাকুরা থেকে গুলে লালা স্মৃতির প্রতিবিম্ব

Icon

উম্মে সায়মা

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাকুরা থেকে গুলে লালা স্মৃতির প্রতিবিম্ব

স্মৃতিরা জমা হয় মেঘের মতো। জীবন তার নিজস্ব গতি নিয়ে সরে যায়, সময়ের প্রবাহে কেউই পারে না ঘড়ির কাঁটার দাপট এড়াতে। তবে সময়ের বিপরীতে জমতে থাকে স্মৃতিরা কখনো কখনো ঝরে পড়ে লেখকের কলমের আঁচড়ে। আবদুল্লাহ খানের ‘সাকুরা থেকে গুলে লালা’ যেন সেই ঝরে পড়া স্মৃতির রঙিন কাব্য, বিনি সুতোর সময় যাপনের এক অপূর্ব শিল্প।

‘গুলে লালা’র সঙ্গে লেখকের দেখা চল্লিশ বছর আগে। নিজের উঠতি যৌবনে এমন মোহনীয় আর্য সুন্দরী নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করেছিল তাকে। তারও দশ বছর পর জাপানি অনিন্দ্যসুন্দরী ‘সাকুরা’র সঙ্গে লেখকের পরিচয়। চর্ম চোখে দেখে, হৃদয় ও মগজে উপভোগ্য করে, কাগজ ও কলমের রঙিন রেকাবিতে পরিবেশনের চেষ্টাই ‘সাকুরা থেকে গুলে লালা’। সাকুরা এবং গুলে লালা রূপক অর্থে যথাক্রমে জাপান এবং ইরানের প্রতিনিধিত্ব করে। এ গ্রন্থে মোট ২১টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে; যেগুলো ‘গুলে লালা’ এবং ‘সাকুরা’ নামের দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত। ইরান সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো স্থান পেয়েছে ‘গুলে লালা’ অংশে এবং ‘জাপান’ সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো স্থান পেয়েছে সাকুরা অংশে।

বাংলাদেশে পড়তে বা অন্যান্য কারণে আসা ইরানিদের সঙ্গে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে ছাত্রাবস্থায়। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সেমিনার বা আড্ডায় অংশগ্রহণ করা, দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো মাধ্যমে বাড়ে হৃদ্যতা। পরবর্তিতে কাজের কারণে ইরানে গিয়ে তাদের আন্তরিক আতিথ্য এবং ইতিহাস ঐতিহ্যে মুগ্ধ লেখক প্রেমে পড়েন ‘গুলে লালা’র। এ বইয়ের ‘গুলে লালা’ অংশের ইরানের জাহানি মজমা ও অন্যান্য, দোসরা সফর, তেহরানের আঙুর বাগানে, শহিদ মালালা ও বিয়ের হিজাব দিয়ে বানানো তার জিহাদের পতাকা ইত্যাদি শিরোনামের প্রবন্ধগুলো মূলত সে সবেরই স্মৃতি চারণ।

এর দশ বছর পর কাজের কারণে লেখকের ঠিকানা হয় জাপান। এখানেই লেখক খুঁজে পান প্রিয় ‘সাকুরা’কে। আমিনের ল্যাব, পরবাসের সংসার, সোগো সান, ইওশিদা, সুইবারার হংস হ্রদ ও হাঁস চাচা, ফুজি মিয়া, জাপানের চিঠি, সাইয়োনারা জাপান ইত্যাদি শিরোনামের প্রবন্ধগুলো মূলত জাপানে কাটানো লেখকের সুখস্মৃতির টুকরো। আর সেগুলোই স্থান পায় এ বইয়ের ‘সাকুরা’ অংশে।

লেখকের জাপান ও ইরান সফর সম্পর্কিত এ বইয়ের নামে দুদেশের জাতীয় ফুল যথাক্রমে ‘সাকুরা’ ও ‘গুলে লালা’ ওরফে ‘চেরি’ ও ‘টিউলিপ’কে আনা হয়েছে, যদিও বইয়ের কোথাও এ নাম দুটি নির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এদের সৌন্দর্য নিয়ে মাতামাতি সারা দুনিয়ায় মশহুর। স্থান-কাল-পাত্র বয়স ও ভূগোল কিছুই তা আটকে রাখতে পারেনি। তীব্র অনুভূতির বর্ণনা ও বিশ্লেষণের অভাব এখানে নেই। তাই তো পড়া শেষে বিচ্ছেদ না খুঁজে রচনার সামগ্রিক কাঠামো এবং বর্ণনা আমাকে কীভাবে প্রভাবিত, এমনকি নিয়ন্ত্রিত করে; তার আলোচনা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। আবদুল্লাহ খানের ‘সাকুরা থেকে গুলে লালা’ গ্রন্থটি এ অন্বেষণেরই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

আমরা জানি না, বইয়ের ছিঁড়ে যাওয়া পাতা কখন আবার আমাদের হৃদয়ে আন্তরিক কষ্টে আঘাত হানবে। তবুও বই বন্ধ করতে করতে এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভাবি-দৃশ্য-মাধ্যমের এ ক্রমাগত বিস্ফোরণ আর অস্থির মনোজগতের বিপন্ন দিনগুলোতেও জয় হোক বইয়ের।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম