প্যান্টের ডোর কিছুটা ঝুলে এসেছে। ডরে কিছু গুঁজে রাখার জন্যই এমন ঝুলে আসা। খালি পা, গায়ে একটা ময়লা গেঞ্জি। চিকন চিকন পা নিয়ে ডুমুরগাছ বেয়ে ওপরের দিকে উঠছে গেছো চিতার মতো। মামি রেনু কিছুতেই থামাতে পারলেন না দস্যি ফুপজানকে। গাছে উঠেই ডোরে গোঁজা ঝালা (লবণ, শুকনো মরিচের গুঁড়ার সংমিশ্রণ) বের করে কচি ডুমুরগাছের গা থেকে ছিঁড়ে ঝালাতে মেখে কচর মচর করে চিবিয়ে খেতে থাকে আর পা দুলাতে থাকে ফুলজান। সে জানে আজ নদী দিয়ে নৌকাবাইচের মহড়া দেবে বহুলী ও মুনসুমী গ্রাম। কারণ কাল তাদের ধোপাপাড়া নদীতে ফাইনাল বাইচ প্রতিযোগিতা আছে। সেখানে কেউ নিয়েও যাবে না, যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে সুযোগও হবে না। তাই আজ যেটুকু পারে বাইচ দেখে নেবে।
দুপুর পার হয়ে যায়। নৌকার অপেক্ষায় পুরো দিনই কেটে যায়, পেটে ক্ষুধারা হানা দিলেও ফুলজান ডুমুরগাছ থেকে নামবার না। একবার নামলে আর এ গাছে উঠে নৌকাবাইচের মহড়া দেখতে পারবেই না। কেন যেন নৌকার প্রতি ওর খুব টান। অদ্ভুত টান। ফুলজানের খুব ইচ্ছে ওদের নিজস্ব একটি নৌকা থাকুক। কিন্তু যে ঘরে থাকার জায়গা নেই, ঠিকমতো খাবার ব্যবস্থা নেই, সে ঘরে নিজেদের নৌকার স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই। দূর থেকে ভেসে আসতে থাকে...
দলবদ্ধ গানের সুর... নৌকা আমার আগে উইঠাছে এ... সখী পান বানায়া মুখে তুইলা দে।
পরপর একজন গাওয়ার পর নৌকায় থাকা সব বাইছাল গায়তে থাকে। শুনতে ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় নদী যেন এ দিনের অপেক্ষায়ই ছিল, তার বুকচিরে কখন নৌকার আগমন ঘটবে, জলের তরঙ্গ বৈঠার স্পর্শে বাড়ি খেয়ে দুই তীর স্পর্শ করবে, আর বাইছালেরা গান গায়বে নানা সুরে নানা ছন্দে।
দেখতে দেখতে আরেকটা নৌকার আগমন ঘটে এটি মুনসুমীর কোসা নৌকা। আগেরটা ছিল বহুলীর সরঙ্গা বা গ্রাম্য ভাষায় হরোঙ্গা নৌকা। কোসা নৌকা ছোট তবে লম্বা ও চিকনগোছের। কোসা নৌকার বাইছাল গান গাইছে..
রাম ছাগলের শিংগা মোটা হরিণ বলে নাহ আরে নাহ আরে নাহ...!
গানের তালে তালে গোলুইয়ের সামনে থাকা ব্যক্তি সামনের দিকে ঝুঁকে ঝুঁকে নাচের মতো করছে আর গাইছে। নৌকার মাঝখানে আরেকজন খঞ্জনির তাল তুলছে।
এসব দেখে আবারও আক্ষেপ হয় ফুলজানের ইসসস... একটা নৌকা যদি থাকত!
মহড়া শেষে নৌকা চলে যায়। নদীর তরঙ্গ মাখা ঢেউ শান্ত হয়। দুই কূল আবার শুকনো এবং স্তব্ধ হয়ে থাকে। কিছু বাদুড় উড়ে আসে ডুমুরগাছে। আশ্রয় নেবে সন্ধ্যায়। বাদুড় ও পাখিদের ঘর হলো গাছ, বন ও বাঁশঝাড়। নদীর ওপারে বাঁশঝাড়ে কিচিরমিচির শুরু হয়েছে পাখিদের। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফুলজানের মনটা ভারী হয়ে ওঠে। নৌকা এবং নদীকে একসঙ্গে আবার কবে দেখা হবে জানে না।
ঘোষ দিয়ে দিয়ে গাছ থেকে নিচে নামতেই পিঠের ওপর কঞ্চির বাড়ি পড়তে থাকে। ফুলজান ওমা গো ওমা গো বলে কাঁদতে থাকলে ওর হাত শক্ত করে ধরে ওর মা। টেনেহিঁচড়ে বাড়ির দিকে নিয়ে সন্ধেবেলায় গা কচলে জোর করে স্নান করিয়ে দেয়। তার পর সবুজ বল প্রিন্টের ফ্রক পরিয়ে গায়ে হাত-পায়ে সরিষার তেল দিয়ে টুকটুকে হলুদ ম্যানোলা স্যান্ডেল পরিয়ে দেয়। নতুন স্যান্ডেলের ঘ্রাণ ভালো লাগে ফুলজানের। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই জুতোর দিকে তাকায়। দেখতে পায় ফুলজানের চোখের জল জুতোর ওপর পড়তেই জুতো জোড়া এক হয়ে একটি হলুদ টুকটুকে নৌকা হয়ে গেল। সেই নৌকার মধ্যে একা দাঁড়িয়ে ফুলজান। নৌকার মাঝিমাল্লা হিসাবে নৌকার মতো দেখতে একটি অদ্ভুত প্রাণী। যার ফুলজানের মতো হাত-পা আছে। বৈঠা বেয়ে মাঝি ফুলজানকে নিয়ে এমন সুন্দর নদী পার হচ্ছে যে, নদীর দুই পাশে দেওয়ালের মতো করে বেত্তুরগাছ ছেয়ে আছে। পাকা পাকা বেত্তুর ফল ঝুলে আছে সবুজ বেত্তুরের পাতার মধ্যে! ফুলজান আজীবন এমন দৃশ্য দেখেই বাঁচতে চেয়েছে। যা চাওয়া যায় তা পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ সে আনন্দ খোদাকে পাওয়ার সুখের মতো!
বেত্তুরগাছের ফল ছিঁড়তেই বেত্তুরগাছের ডাল ফুলজানের গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসায়। ফুলজানের গাল থেকে সরে যাচ্ছে ওর মায়ের থাপ্পড় মারা হাত। সেই হাতে আবার ফুলজানের হাতের মধ্যে তুলে দিচ্ছে ৩য় শ্রেণির বই। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘরের মধ্যে যেতে বলে রান্নাঘরে চলে যান ফুলজানের মা। ফুলজান দেখতে পায় ঘরে হারিকেনের উষ্ণ আলো টিম টিম করে জ্বলছে। ছড়িয়ে পড়েছে কেরোসিনের গন্ধ। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে অন্যদের পড়ার সুর ভেসে আসছে মৌমাছির গুঞ্জনের মতো। ফুলজান চোখ মুছে বিশ্ব ও পররিচিতি বইটিতে হাত বুলায়। শুনেছে পড়ালেখা করলে ভালো মানুষ হওয়া যাবে, ভালো মানুষ হলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। ভালো চাকরি পেলে ফুলজানের মা আর তাকে মারবে না। ফুলজানের কাছে টাকা থাকবে। কারণ নৌকা বানাতে বা কিনতে টাকা লাগে। ফুলজান একটি সুন্দর নৌকা বানাবে। তখন নৌকা নিয়ে সারা নদী ঘুরে বেড়ালেও কেউ আর বারণ করবে না।
বইটি পড়তে গেলেই অক্ষরগুলো ঝাপসা হতে থাকে। একেকটি অক্ষর একেকটি নৌকা হয়ে যায়। নৌকাগুলো শূন্যে ভাসতে থাকে। নৌকার মধ্য থেকে সুর করে ডাকতে থাকে... ফু...ল...জান... ফুউউউ...ল....জা..ন।
ঘুম ভেঙে দেখে ফুলজানের সেজো ভাই ডাকছে।
বাইরে নু গেদি... নু যাই বরশি নিয়া, সেইপ্যা চ্যাড়া তুলছি (চিকন কেঁচো) মাছ মারমু। বান আইছে। নদী ভরা। উটানডোত পানি এইস্যা হাইরলো নু যাই। (বাইরে চল বোন, চল বরশি নিয়ে যাই, চিকন কেঁচো তুলেছি, মাছ ধরব। উঠানে পানি এসে পড়ল বুঝি, চল যাই)।
ফুলজান তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়ে। সত্যি বন্যার পানিতে ভরে গেছে চারপাশ। উঠান ছুঁই ছুঁই পানি। ফুলজান এবার মনে মনে খুশি হয় এইবার নিশ্চয় নৌকা আসবেই বাড়িতে নয়তো কলাগাছের ভেলাতো হবেই।
ফুলজানের মা-বাবা বড় ভাইবোন চিন্তিত। উনারা গবাদিপশুর জন্য উঁচু জায়গা বানাতে থাকেন বাঁশের সাহায্যে। ঘরের জিনিসপত্র যেটুকু যা আছে সেটুকুই টিনের ঘরের ধরনার ওপর মাচাল পেতে তুলে রাখতে আরম্ভ করেন।
নদীর পানিতে স্রোত আর গর্জন একসঙ্গে। ফুলজানের সুখের শেষ নেই। কাগজ দিয়ে অসংখ্য নৌকা বানিয়ে ছাড়তে থাকে ঘোলা জলের মধ্যে। যা ভেসে ভেসে ঠিকানা হীনতার দিকে যেতে থাকে।।
সেজো ভাই নিমিষেই এক ঘটি মাছ মেরে মায়ের কাছে দিয়ে জানতে পারে বিকালে তাদের বাবা মাছুয়াকান্দি যাবে। রজব ছুতারের বাড়িতে একটা পুরনো স্টিলের নৌকা আছে মেরামত করে নিলে চলা যাবে। রজত ছুতারের বাড়িটি ছোট্ট দীপের মতো। চারপাশে নিচু, পানি এবং উঁচু ঢিবির মতো তাদের বাড়িটিই হেসে উঠেছে যেন।
সেখানে অনেক অনেক নতুন নৌকা তৈরি হচ্ছে। যা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে ফুলজান। আহা কবে যে একটা নতুন নৌকা হবে তাদের! একটা নৌকার কাছে গিয়ে চোখ আটকে যায় পেয়ারাগাছের দিকে। গাছভর্তি পেয়ারা। চারদিকে চেয়ে টুপ করে গাছে উঠে পেয়ারা ছিঁড়ে কামড় বসায় তাতে। কি মিষ্টি, কি নরম। পেয়ারা চারপাশে সবুজ হলেও ভেতরটা অদ্ভুত গোলাপি। এমন পেয়ারা ফুলজান জীবনে প্রথম দেখছে। যেগুলো পারে খেতে থাকে। ফ্রকের আড়ালে প্যান্টের ডোরে গোঁজে।
গাছ থেকে নেমে লুকিয়ে সেজো ভাইকে খেতে দেয় কটা। কিছুক্ষণ বাদেই নৌকা নিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়েরা পেয়ারাগাছে হানা দেয়। বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে রজব মিস্ত্রির বউ। ফুলজান তার মাকে তিরতিরে নাকে একটি নাকফুল পরতে দেখেছে। কিন্তু মিস্ত্রির বউয়ের নাকে তিনটে নাকফুল। কথাও বলেন অদ্ভুত সুর করে! মিস্ত্রির বউ বকতে থাকে উদাহরণ দিতে থাকে ফুলজানের। বলতে থাকেন...
দ্যাহোছেন, কোহুন থেইক্যা এই গেদিডো এই গাছের ইহিনেই বোইস্যা আছে একখান হোরপিও ছেড়ে নাই। আর এরা কোন আখাইয়ার জাত বাপ-মাও হোরপি খায়া জন্মায় নাই এইস্যাই গাছথ্যান হোরপি ছেঁড়া নিছে। (দেখেছ, কখন থেকে এ মেয়েটা এ গাছের এইখানে বসে আছে, একটা পেয়ারাও পাড়েনি। আর এরা কোন খাদকের জাত, বাবা মা পেয়ারা খাইয়ে জন্ম দেয়নি, এসেই গাছে থেকে পেয়ারা পাড়ছে)।
উনার কথা শুনে ফুলজান আর ওর সেজো ভাই ফিক ফিক করে হাসতে থাকে। কারণ গোপনে ফুলজান আগেই পেয়ারাগাছে হানা দিয়ে সাধু সেজে বসে আছে। স্টিলের নৌকার মেরামত হয়ে যায়।
পুরনো নৌকার ছিদ্র দিয়ে পানি ওঠে। যা সেচার দায়িত্ব দিয়েছে ফুলজানকে। ফুলজান বিরক্ত হয়। এরকম নৌকা সে কখনোই চায়নি। একটা নতুন নৌকা, যাতে কাঠের নতুন ঘ্রাণ থাকবে। আলকাতরার কুচকুচে কালো প্রলেপ থাকবে! যে নৌকায় ইচ্ছামতো ভাসা যাবে। রজব ছুতারের বাড়ির পুরনো নৌকায় কোনোমতে বাড়ি ফেরে সবাই। ফুলজান কাস্তে হাতে বাড়ি থেক বেরিয়ে যায়। পালানে থাকা কলাগাছ কেটে তাতে ঘোড়ার মতো বসে ভেসে যেতে থাকে স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে। শুনেছে পাতালপুরীতে নাকি একটি জগৎ থাকে। সেখানে রাজা রানি সবাই থাকে, সেখানে কোনো কিছুর অভাব নেই। স্রোতের পাকের মধ্যে ডুবে গেলে ওর মাধ্যমে পাতালপুরীতে যাওয়া যায়। ফুলজান একবার ওর বাড়ির দিকে তাকায়। কলাগাছ পড়ার শব্দে বাড়ি লোকেরা পাড়ে এলেও ফুলজান তখন ভেসে যাচ্ছে স্রোতে। সবাই ডাকছে থামতে বলছে। কিন্তু ফুলজান শুনছে না। কারও সাহস নেই এত ঘোলা জল, স্রোত আর পাকের মধ্যে নদীতে নামার। ফুলজানের মা পানিতে ঝাঁপ দেন ফুলজানকে আটকাতে, কিন্তু তাকে টেনে তুলে নেন ফুলজানের বাবা। ফুলজান বাড়ি থেকে যত দূরে ভেসে যেতে থাকে মাথাটা ততো ঘুরতে থাকে এবং সাদা কালো চ্যানেলের মতো চারপাশ ঝিরঝির করে উঠতে থাকে। ফুলজানকে চারপাশ থেকে অসংখ্য নতুন নৌকা ঘিরে ধরে। সুড়ঙ্গের মতো একটি রাস্তা আলগা রেখে। ফুলজান মাথা ঝাঁকি দিয়ে ভালো করে চেয়ে দেখে সে ভরা নদীর মধ্যে একা একটি কলাগাছে ভেসে যাচ্ছে ঘোড়ায় চড়ার মতো বসে। ফুলজানের সামনে পানির স্রোত ও পাক...
ফুলজান এবার আপ্রাণ চেষ্টা করে পথ পালটিয়ে পাড়ের দিকে যেতে। কিন্তু একটি কুচ কুচে কালো রঙের ডিঙ্গি নৌকার দুটো হাত ফুলজানের পা টেনে ধরে পাকের মধ্যে নিয়ে তলিয়ে যেতে... যেতে... যেতেই থাকে। ফুলজানের বসে থাকা কলাগাছটি ভেসে ওঠে পানির ওপর। স্রোতে ভেসে যেতে থাকে ফুলজানবিহীন কলাগাছ। ফুলজান ছটফট করতে থাকে ওপরে উঠার জন্য। কালো রঙের নৌকাটির শরীরজুড়ে চুল ও হাত অসংখ্য হতে থাকে এবং ফুলজানকে আরও প্যাঁচিয়ে ধরে শক্ত করে। ফুলজানের ডান মগজে তখন ভেসে ওঠে মায়ের ছবি। ফুলজান দেখতে পায় ওর মা আস্তে আস্তে একটি নতুন নৌকা হয়ে যাচ্ছে এবং সেই নৌকার মধ্যে ফুলজানও আরেকটি ছোট্ট নৌকা হয়ে যাচ্ছে!
পানিতে ডুবে যাওয়ার পর থেকে ফুলজান বিগত ৮ বছর এ্যবনরমালের মতো বেঁচে থাকে। কিছু ঠিকঠাক বলতে বা বুঝাতে পারে না।
ফুলজানের গায়ে জামা। বুকে কেমন অদ্ভুত ব্যথা। মারবেলের মতো শক্ত কিছু একটা ছড়িয়ে যাচ্ছে তার বুকে!
১৪ বছরের মাথায় ফুলজান স্বপ্ন দেখে... সে হারিয়ে গিয়েছে। একটা অদ্ভুত সুন্দর গা ছমছমে জায়গায়। জায়গটার দুই পাশে সারি সারি গাছ সীমানার মতো দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি গাছের আকৃতি নৌকার মতো। তাতে সবুজ পাতা, ফল, ফুল সব ফুটে আছে। ফুলজানের সামনে তারই ছায়া, যা দেখতে নৌকার মতো। ফুলজান না এগোলেও ছায়াটা এগিয়ে যাচ্ছে। এবং সেই ছায়া ধরেই সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে ফুলজান। যেতে যেতে দুভাগ হওয়া নৌকার মধ্যে দাঁড়ায় ফুলজান। সে দেখতে অবিকল তার মায়ের মতো পূর্ণাঙ্গ একজন নারী। যেদিন তার মা প্রথম বিয়ে হয়ে এসেছিল তার বাবার বাড়িতে ছবিতে যেমন দেখেছিল তেমন পোশাক তেমন সাজেই তাকে দেখা যাচ্ছে। দুভাগ হওয়া নৌকাটি জোড়া লাগার সময় মাঝখানে ফুলজানও নৌকার সঙ্গে জোড়া লেগে যায়। আস্তে আস্তে মানুষ ফুলজান একটি নতুন নৌকায় পরিণত হয়।
ফুলজানের ঘুম ভেঙে যায়। জেগে উঠে সে স্বভাবিক হয়ে যায়। বাড়ির লোকেরা সুস্থ স্বাভাবিক ফুলজানকে ফিরে পেয়ে প্রচণ্ড খুশি হয়। সেদিনের পর থেকে ফুলজান খেয়াল করে তার সঙ্গে সঙ্গে একটি নৌকার ছায়া হেঁটে বেড়ায় কিন্তু কাউকে দেখাতে বা বলতে পারে না।
২১-এ পা দেয় ফুলজান। ২১-এ দেওয়া পা যে ২২-এ নিজের বাবার বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে ফেলতে হবে এ অদ্ভুত নিয়ম ফুলজানকে কাঁদায়!
ফুলজানের মায়ের আঁচল ছেড়ে আসার সময় তার একফোঁটা চোখের জল পড়ে আঁচলে।
ফুলজানের মা কাঁদতে থাকে খুব কাঁদতে থাকে।
ফুলজানের স্বামী দরজা বন্ধ করার সঙ্গে পুরো শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে হাতুড়ি, পেরেক, পাতাম, আলকাতরা হয়ে যায়। ফুলজানের পোশাক খুলে পড়ে, সে হয়ে ওঠে বৃক্ষ, বৃক্ষ থেকে কাঠ।
ঘরজুড়ে নতুন কাঠের গন্ধ ছড়ি পড়তে থাকে।
ঘরের মধ্যে দেখা যায় একটি নৌকো।
এদিকে ফুলজানের মায়ের আঁচল দিয়ে ফুলজানের পুঁতে রাখা শিউলি গাছের ডাল বেঁধে দেওয়ার পর গাছজুড়ে শিউলি ফুলের বদলে অসংখ্য নৌকা ফুটতে থাকে...