হেলাল হাফিজকে এভাবেও পড়া যায়
কুদরত-ই-হুদা
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছিয়াত্তর বছরের মোটামুটি দীর্ঘ জীবন পার করে হেলাল হাফিজ আজ ওপারে পাড়ি জমালেন। মৃত্যুর খবর শুনে মনে হলো, দীর্ঘ একটা জীবন পার করে তিনি কি কোনো প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যেতে পেরেছেন! অধিকাংশ মানুষ তো মৃতুবরণ করে প্রশ্নহীনভাবে। অধিকাংশের মৃত্যু আমাদের মধ্যে কোনো নতুন ভাবনাকে উসকে দেয় না।
হেলাল হাফিজ মনে হয় আর দশজন মানুষ, এমনকি আর দশজন কবির মতো নন। তিনি প্রশ্ন তুলে গেলেন, জনপ্রিয় বা অমর হওয়ার জন্য কি সারা জীবন অজস্র কবিতা লেখাটা খুব বেশি জরুরি। কবিতা না লিখেও কবিতার আলোচনায় থাকা যায় কিনা-এ প্রশ্নও তিনি সামনে রেখে গেলেন। কবির মৃত্যু তো এমন ধাক্কাময় ও প্রশ্নাকুলই হওয়া উচিত।
উনিশশ আটষট্টি সালেও হেলাল হাফিজ ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। তিনি দেশের রাজনীতির কেউ নন, শিল্পসাহিত্যেরও তেমন কেউ নন। ১৯৪৮-এ জন্ম নেওয়া ২০ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ এক ছাত্র মাত্র। এরকম ছাত্র তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারে হাজার। কিন্তু একবছর পরই হঠাৎ তিনি যেন হয়ে উঠলেন তারকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা করিডোরে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘ওই যে কবি হেলাল হাফিজ যায়, দ্যাখ্! দ্যাখ্!’ কারণ কী! তেমন কিছুই না। একটা কবিতামাত্র।
গত শতকের উনসত্তর সালের জানুয়ারি থেকে ঢাকা আর ঢাকার মানুষরা বদলে যেতে থাকে। মিছিলে স্লোগানে আগুনে দহনে ঢাকা জঙ্গি হয়ে উঠতে থাকে দশ বছরের আইয়ুবি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিকতার দাবানল দ্রুত ধাবমান হয় শহর ঢাকা থেকে গ্রাম-গ্রামান্তরের দিকে। বদলে যেতে থাকে বাঙালির দেহের ভাষা, মুখের ভাষা। একইভাবে বদলে যেতে থাকে বাংলাদেশের কবিদের একটা বড় অংশ কবির কবিতা। এলানো কবিতার কবিদের লেখার অক্ষরও খাড়া আর চোখালো হতে থাকে। কবিতার ভাষা, চিত্রকল্প, উপমান যতকিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে সব দাহ্য হয়ে উঠতে থাকে। মিছিলের তীব্র উন্মাদনা, বাঙালির আত্মাহুতির মহৎ বাসনা ব্যাকুল করে তুলেছিল হেলাল হাফিজের মতো ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকেও। সময় তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল অমর কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র সেই অমর পঙ্ক্তি, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ এই চরণ দুটি সমগ্র জনগোষ্ঠীর ব্যক্ত, অব্যক্ত, ব্যক্ত-ব্যাকুল ভাষাকে ঠিক ঠিক ধরতে পেরেছিল।
এ কারণে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি হয়ে উঠেছিল যেন ওই সময়ের ছাত্র-জনতার মনের ম্যানিফেস্টো। কবিতাটির বিভিন্ন পঙ্ক্তি দিয়ে ছাত্ররা রাতারাতি সয়লাব করে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়, রাজপথ, অলিগলির দেওয়ালের পর দেওয়াল। আর এর কবি হেলাল হাফিজ পা বাড়ান অমরার দিকে।
উনসত্তর বাঙালি কবিদের ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’ জুগিয়েছিল। এ কারণে দেখা যায় উনসত্তরের আগের আর পরের কবিতার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য তৈরি হয়েছিল। উনসত্তর যাদের কবিতার ময়দানে টান মেরে নামিয়েছিল তারা সবাই প্রায় প্রকাশের ব্যাপারে রাখঢাকহীন, স্পষ্ট, অনাবিল আর অভাবিত উচ্চারণে সিদ্ধহস্ত। হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ থেকে শুরু করে পরের যাবতীয় কবিতার মধ্যেই এ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। আসলে হেলাল হাফিজ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলের সব কবিতায়-ই উচ্চারণের ব্যাপারে ধারালো ছুরির মতো তীক্ষ্ণ, উজ্জ্বল, বিপজ্জনক, পস্ট, আর আবশ্যিকভাবে চাঁছাছোলা। তা সে প্রেমের কবিতাই হোক আর রাজনৈতিক কবিতাই হোক।
হেলাল হাফিজ প্রেমের কবিতার কবি বলেই সমাদৃত। সাধারণ্যে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার কবিও তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার প্রধান পরিচয় দাঁড়িয়েছে প্রেমের কবি হিসাবেই। একথা সত্য যে, প্রেমের অনুভূতির সোজাসাপটা অথচ কাব্যময় আন্তরিক আর্ত উচ্চারণে, অপ্রমিতের কোলঘেঁষে প্রমিত প্রেমানুভূতির উচ্চারণে তার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, তিনি বরাবরই রাজনীতি সচেতন কবি। যে-রাজনীতির হাত ধরে বাংলাদেশের কবিতায় উনসত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসের দুই তারিখে তার অভিষেক সেই রাজনীতি তার কবিতার পিছু ছাড়েনি কখনো। কারণ কবিতা তার কাছে কেবল ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাসের ব্যাপার নয়। সমষ্টির জন্যও কবিতার একটা দায় আছে। তিনি মনে করেন, ‘কবিতা কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,/নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,-/পথিক এ পথে নয়/ভালোবাসা এই পথে গেছে।’
হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। এর মধ্যে ১১টি কবিতা ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে রচিত হয়েছে। ১১টির মধ্যে প্রায় আধাআধি কবিতা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক কবিতা। বাকি অর্ধেক প্রেম বা প্রেমজাত ব্যক্তিগত অনুভব-অনুভূতির কবিতা। তার মানে, হেলাল হাফিজ একটিমাত্র রাজনৈতিক কবিতার কবি নন। তার মধ্যে রাজনীতি বরাবরই গভীরভাবে ছায়া ফেলে গিয়েছে। ওই সত্তর থেকে চুয়াত্তরের মধ্যে যে-রাজনৈতিক কবিতাগুলো তিনি লিখেছেন তার মূল সুর কখনো মুক্তিযুদ্ধ, কখনো স্বাধীনতা উত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতিজাত হতাশা, আশাবাদ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। নতুন স্বাধীন দেশের একজন কবির যা হওয়ার কথা তেমনই।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মার্চের শেষদিকে শুরু হলেও হেলাল হাফিজ ফেব্রুয়ারি মাসেই ‘দুঃসময়ে আমার যৌবন’ কবিতায় লিখে ফেলছেন, ‘মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে/এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই, উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো/আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ/শুধু যদি নারীকে সাজাই।’
স্বাধীনতার পর কিছু কবিতায় প্রেমের আর্তি প্রকাশিত হলেও তার প্রেমের মধ্যে হানা দিচ্ছে দেশ-জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা। ‘নিখুঁত স্ট্র্যাটেজী’ কবিতায় বলছেন, ‘অথচ পালটে গেল কতো কিছু,- রাজনীতি/সিংহাসন, সড়কের নাম, কবিতার কারুকাজ,/কিশোরী হেলেন।/কেবল মানুষ কিছু এখনো মিছিলে, যেন পথে-পায়ে/নিবিড় বন্ধনে তারা ফুরাবে জীবন।’ ‘অন্যরকম সংসার’ কবিতায় ১৯৭৩ সালে উচ্চারণ করে উঠছেন, ‘এই তো আবার যুদ্ধে যাবার সময় এলো/আবার আমার যুদ্ধ খেলার সময় এলো/এবার রানা তোমায় নিয়ে আবার আমি যুদ্ধে যাব/এবার যুদ্ধে জয়ী হলে গোলাপ বাগান তৈরী হবে/...স্বদেশ জুড়ে গোলাপ বাগান তৈরি করে/লাল গোলাপে রক্ত রেখে গোলাপ কাঁটায় আগুন রেখে/আমরা দু’জন হয়তো রানা মিশেই যাব মাটির সাথে।’ ‘অস্ত্র সমর্পণ’ কবিতাটিতে আগ্নেয়াস্ত্রের সাথে এমন তেরছা ভঙ্গিতে কথা বলেছেন যেন প্রয়োজনে আবারও এই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিতে হতে পারে। জমা দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রকে বলেছেন, ‘যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,/... ভেঙে সেই কালো কারাগার/আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।’ এভাবে সত্তর থেকে চুয়াত্তর কালপর্বে উদ্ধৃত কবিতাগুলোতে এবং ঠারে ঠোরে প্রেমের কবিতাগুলোতেও হেলাল হাফিজ তার রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে হেলাল হাফিজ কেবল প্রেমের কবিতার মধ্যে ফুরিয়ে যাচ্ছেন না। থাকছে সদ্য স্বাধীন হওয়া তার স্বদেশ ও স্ব-কালের মানুষের জন্য গভীর উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা, হতাশা আর আশাবাদ।
যে জলে আগুন জ্বলে কাব্যগ্রন্থে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সময় পর্বে আর কোনো কবিতা আমরা পাচ্ছি না; না প্রেমের কবিতা, না রাজনৈতিক কবিতা। আবার তিনি কবিতায় ফিরছেন ১৯৮০ সাল থেকে। লিখছেন ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত। অর্ধেক প্রেম ও আত্মজৈবনিক রচনা আর প্রায় অর্ধেক রাজনীতিশ্লিষ্ট কবিতা। তার মানে সংখ্যার দিক থেকে রাজনৈতিক কবিতা আগের সময় পর্বের মতোই আধাআধি। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের মধ্যে সাধারণ মানুষের অবস্থা ও অবস্থান, রাষ্ট্রের কাছে কবির প্রত্যাশা, আশাভঙ্গতা, দ্রোহ এ সবই এ সময়ের কবিতায় কখনো প্রত্যক্ষভাবে কখনো পরোক্ষভাবে উঠে এসেছে। তবে সব মিলিয়ে কবিতাগুলোতে রাজনৈতিক হতাশার সুরই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
আশি থেকে পঁচাশি সময় পর্বের কবিতাগুলো মূলতই যেন রাজনৈতিক। রাজনৈতিক কবিতার ফাঁকে ফাঁকে কবি ব্যক্তিগত প্রেমের বেদনার্ত নকশিকাঁথা এঁকে চলেছেন। ১৯৮০ সালে লেখা কবিতায় তিনি দেশবাসীকে সম্বোধন করে বলছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী;/আপনারা কেমন আছেন?’ আশির শুরুতে লেখা কবিতাগুলো দেখলে মনে হয় উনসত্তরের রাজপথে ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রত্যয়ের কবি কি অস্তিত্বের সংকট বোধ করছেন? তা না হলে তিনি কবিতায় কেন বারবার বলবেন, ‘আকালের এ কাল’। কেনই বা ‘ক্যাকটাস’ কবিতায় বলবেন, ‘পুড়েছে কপাল তার আকালের এই বাংলাদেশে’। তিনি বোধ করছেন যে, তার প্রেমিকা এবং কেউই তাকে ঠিকঠাক চিনে উঠতে পারছে না। ফলে ‘নাম ভূমিকায়’ কবিতায় তাকে যেন দাবি করতেই হচ্ছে যে, ‘আমাকে না চেনা মানে/মাটি আর মানুষের প্রেমের উপমা সেই/অনুপম যুদ্ধকে না চেনা।’ তবে কি যুদ্ধের চৈতন্য থেকে বাংলাদেশ দূরে চলে গিয়েছে বলে হেলাল হাফিজ দাবি করেছেন! এজন্যই বোধ করি দুঃখ করেই ‘বাম হাত তোমাকে দিলাম’ কবিতায় বলছেন, ‘স্বাধীনতা সব খেলো, মানুষের দুঃখ খেলো না।’ এসব অসহায় আর্ত আর তেরছা কবিতা হেলাল হাফিজের যে জলে আগুন জ্বলে কাব্যগ্রন্থে যে আছে তা অনেকের হয়তো খেয়ালই থাকে না। যে কারণে তিনি কীর্তিত আর বর্ণিত হন মূলত ওই ‘এখন যৌবন যার’-এর কবি আর প্রধানত প্রেমের কবিতার কবি হিসাবে।
কিন্তু কবিতায় হেলালের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘ঘটনা ঘটেছে এক মারাত্মক স্বাধীনতা-উত্তর এ দেশে।’ একটা শ্রেণির মানুষ ‘ভদ্রবেশে হিজলতলীর সুখ জবরদখল করে রেখেছে এদ্দিন’। ‘অবহেলা প্রপীড়িত মানুষ’দের সংখ্যা বেড়েছে। ‘কাঙাল কৃষক’ ‘ভজন গায়িকা সন্ন্যাসিনী সবিতা’, ‘ভূমিহীন মনুমিয়া’, ‘যুদ্ধের শিশু’ এদের ভিড় হেলাল হাফিজের কবিতায় সহজেই লক্ষ করা যায়। কবিতায় তিনি খুব সহজভাবেই বলেছেন যে, ‘নাড়ীর আত্মীয় এক সংগঠিত আর অসহায় কৃষক আছেন/ভেতরে থাকেন, যখন যেভাবে তিনি আমাকে বলেন/হয়ে যাই শর্তহীন তেমন রাখাল বিনা বাক্য ব্যয়ে।’ ‘অবহেলা প্রপীড়িত’ শ্রেণির সাথে একাত্ম হতেই যেন কবিতায় ঘোষণা দিয়েছেন, ‘গাভিন ক্ষেত্রের ঘ্রাণ, জলের কসম, কাক/পলিমাটি চেনা মানে আমাকেই চেনা।/আমাকে চেনো না?/আমি তোমাদের ডাক নাম, উজাড় যমুনা।’ এই কাব্যে রাজনীতিচেতন কবির চাওয়া মূলত ‘সম্পদের সুষম বণ্টন’ আর ‘মানুষের ত্রাণ’। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে তিনি লক্ষ করেছেন যে, দেশে ‘বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে’, ‘স্টেট ব্যাংক খেয়ে’, ‘সবুজের বনভূমি খেয়ে’, ‘ধাপ্পাবাজ’ একটা শ্রেণি গড়ে উঠেছে। এমনকি কবিতায় ‘বেদম মাইরের’ ব্যবস্থাটাও জারি রেখেছেন এই শ্রেণির জন্য। ফলে আবারো বলা দরকার, হেলাল হাফিজ শুধু প্রেমের কবিতার মধ্যে ফুরিয়ে যান না।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র আজো নানা অর্থে গঠমান। ফলে এর মধ্যে হয়ে ওঠার সংগ্রাম আজো লক্ষ করা যায়। এ কারণে এখানে কবিতা বরাবরই রাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে, এর ভালো-মন্দের সঙ্গে গভীরভাবে লিপ্ত হয়ে পথ চলে। অনেকে শুধু আর্টের কথা বলেন। আর্ট অবশ্যই কবিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে সেইসব কবিই টিকে গেছেন যাদের কবিতা আর্ট আর রাজনীতির মধ্যে একটা চলনসই মিতালি করতে পেরেছে। হেলাল হাফিজ সেই তালিকায় অগ্রগণ্যভাবেই থাকবেন। শুধু আর্টের কারবারি বাংলাদেশের অসংখ্য কবি ঐতিহাসিক উল্লেখের মধ্যে, শুধু কবি সমাজের স্মরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু হেলাল হাফিজের নাম ‘জনপ্রিয়তাবিরোধী’ আর্ট সর্বস্ব, জনবিচ্ছিন্ন কবিকুল ও ক্রিটিকরা না নিলেও টিকে থাকবে। কারণ, তিনি বাংলার রাজনীতির সঙ্গে পেন্ডুলামের মতো অনিশ্চয়তায় দুলতে থাকা সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে উৎকণ্ঠিত থেকেছেন সব সময়। হেলাল হাফিজের সৃষ্টিকর্ম তার অনুপস্থিতিতেও অতুল বিভা ছড়াক এই প্রত্যাশা করি।