Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

গল্প

জীবনস্মৃতি

Icon

ফরিদুল ইসলাম নির্জন

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উপচে পড়া লাল চালের ভাতের মাড়ের মতো রক্তিম আভার দেখা নেই। ক্রমশ কালো আঁধার ঘিরে ধরছে। শিমুলগাছে, বাঁশ ঝাড়ে পাখিদের কলতান নেই। বাড়ির দক্ষিণ পাশ থেকে ভেসে আসছে ছাতিম ফুলের সুবাস। রিমি জানালা খুলে প্রতিদিনের মতো এ সুবাসে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে। মাঝে মধ্যে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। প্রতিটি শ্বাস যেন তার ইন্দ্রীয়গুলো জাগিয়ে তুলছে। তাকে নতুন করে আনন্দ দিচ্ছে এ ছাতিম ফুলের পাগলপারা সুবাস। পাঠ্যপুস্তকে এক সময় পড়া হতো ছয় ঋতুর বাংলাদেশ। এখন কী আর তা আছে? হ্যাঁ আছে তবে সেটা সেই পুস্তকের পাতাতে। মানুষের মন বদলের সঙ্গে সঙ্গে ঋতুও বদলে গেছে। গ্রীষ্মকালে গরম হয় না, বর্ষাকালে বৃষ্টি না ঝরে, খরায় কাটে। শরৎকালে জোছনার দেখা মেলে না, কাশফুল ফোটে না, হেমন্তকালে ধান পাকে না, নবান্ন উৎসব মেলে না, শীতকালে কুয়াশার চাদর দেখা নেই তেমন, আর বসন্তে কোকিল ডাকে না, নতুন পাতা গজায় না। হেমন্তকালের কার্তিক মাসের শেষের দিকে, শীতের কোনো রকম দায়সারা ভাব। অথচ এ কার্তিক মাসের সময় রোজা হতো এক সময়। কী রকম কুয়াশার প্রলেপ পড়ত। শীতল বাতাস বহিত। শীতের পোশাক ছাড়া বেরোনো যেত না, রাতে ঘুমানো যেত না। অথচ এ মাসেও ফ্যান ঘুরছে। ‘এই রিমি, সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। তবুও জানালা খুলে হাঁ করে তাকিয়ে আছিস। তোকে কত দিন বলেছি, সন্ধ্যার পর জানালা খুলে রাখবি না। কথা শুনতে পাস না। তারপর আবার তুই পোয়াতি।’ সাহেরা বানু বললেন।

‘অহ দাদি। ভুলে গেছি। এসো শুতে। গল্প শুরু করি।’

তারপর সাহেরা বানু চলে আসে। শাড়ির আঁচলে আপেল পেঁচিয়ে এনেছে। চার ফালি আপেল রিমির হাতে দিয়ে বলে, ‘খেয়ে নে। তারপর গল্প শুরু করি। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে শুরু হয় গল্প। আজও শুরু হলো।

‘তোর বাপ যখন আমার পেটে, তখন আমি টেরই পাইনি। তোর মেজো ফুপুর সময় এমন হয়। আগে তো আর এত সচেতনতা ছিল না। হিসাব করে তো আর সব লিখে রাখতাম না। তাছাড়া হিসাব করব কহন। কাজ কইরা হুঁশ পাইতাম না। চৈত্র মাস এলে ধান কাটার ধুম পড়ত। কোনো সময় সরিষা কাটার ধুম, শীতের দিনে আবার সবজিতে পানি দেওয়ার ধুম পড়ত। গরুর খাবার দেওয়া লাগত, সব ময়লা পরিষ্কার করা লাগত। রান্না-বান্না করতে হতো। তারপর সন্তানদের যত্ন। নিয়মিত কুরআন পাঠ। পাশাপাশি তোর দাদার যত্ন। এত কাজের চাপে থাকতাম বমিও হইত না। যখন দেখতাম পেট বেড়ে গেছে, তখন মনে হইত কিছু একটা হইছে। মানে পেটে বাচ্চা হইছে। কোনো ভিটামিন খাইতাম না। খাইতাম না বললে মিথ্যা কথা হয়ে যাবে, পাইতাম না ভিটামিন। আর শরীরের পুষ্টির জন্য মাঝে মধ্যে ডিম খাইতাম। তবুও সেটা খাওয়া হইত না। তোর বাপ-চাচা আর ফুপুদের সামনে রেখে খাওয়া হতো না। ভাতই কোনো কোনো দিন কম পড়ত। তার কারণ তোর বাপ-চাচা ছিল নয়জন আর ফুপুরা মিলে দুজন। তারপর কোনো হাসপাতালে যাইনি। গ্রামের সাধারণ মানুষ দিয়েই নরমাল ডেলিভারি হইছে। সেসব সময়ের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তোদের সময়তো কি খাবি, তা জানার জন্য পিছু পিছু ছুটছে সবাই। একটু সমস্যা হইলে ডাক্তার দেখাতে চইলা যাইতেছিস। সামনের যে রাস্তা দেখস বা গ্রামের ভেতর যে রাস্তা দেখস তা খুব জঘন্য ছিল। এ রাস্তা এত জঘন্য ছিল তার একটি ঘটনা তোকে বলি। তোর দাদার সঙ্গে আমার যখন বিয়ে হয়, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র এগারো বা বারো বছর। আমার বাবা ছিল বেশ শিক্ষিত। আমিও বেশ ভালো ছাত্রী ছিলাম। পড়াশোনায়, কথাবার্তায়। কিন্তু সে সময় কম বয়সে বিয়ে দেওয়াটই একটা নিয়ম ছিল। তো যাই হোক বিয়ের দিন রিকশা নিয়ে যায়। বিয়ে শেষে রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরতে থাকি। পুরো রাস্তা ধুলাবালিতে ভরপুর। আমি আর তোর দাদা রিকশাতে। কেউ কোনো কথা নেই। আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে বসে আছি। তোর দাদার শরীরে ছোঁয়া যেন না লাগে, সেজন্য রিকশার পাশ ঘেঁষে বসে। হঠাৎ ধুলার ভেতর রিকশা আটকে যায়। আমি তো পড়েই গিয়েছি, তোর দাদা আমাকে ধরে কোনো মতে।’ সাহারা বানু এসব কথা বলতেই রিমি থামিয়ে দেয়।

তারপর রিমি বলে, ‘দাদি তুমি তো প্রবন্ধকারের মতো কথা বলেই চলছ। কথা বললে আর থাম না। তোমার কাছে সেজন্য কেউ আসতে চায় না। আমার আবার কথা শুনতে ভালো লাগে। একটা সত্য কথা বলবা। তোমাকে যখন দাদা হিরো হয়ে পড়ে যেতে দিল না, তখন শরীরে কেমন অনুভূতি হয়েছিল।’

সাহেরা বানু এবার থেমে যায়। লজ্জাবতীর মতো নিজেকে গুটিয়ে নেয়। চোখ মুখ ডুবন্ত সূর্যের মতো হয়ে যায়। এমন প্রশ্ন কখনো কেউ করেনি। উত্তর কী দেবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার এ নীরবতা দেখে রিমি বলল, ‘দাদি এখনো কি নতুন বউ ভাবছ নাকি। চামড়া ঢিলে হয়ে গেছে, সেসব খেয়াল নেই। আর বললে তোমার সব প্রাইভেসি শেষ হয়ে যাবে। তাই না?’

‘আরে অনুভূতি! তোদের মতো আমাদের এত অনুভূতি ছিল না। ভয়ে হাত পা কাঁপত। শীতের দিনে গোসল করার পর মানুষ যেমন করে, ঠিক তেমনভাবে আমার হাত পা কাঁপত।’

‘দাদি থাম এবার। এত ভাব দেখালে হবে না। যত লজ্জা তোমাদের ছিল। আমাদের সময় কিছু নেই বুঝি।’

‘বাদ দে সেসব কথা। এখন তোর যত্ন ঠিকঠাক মতো নিবি। ডাক্তার যেভাবে নিয়ম মেনে চলতে বলেছে, সেভাবে চল।’

‘তুমি এবার আমার আরেকটি কথার উত্তর দাও। বাসররাতে দাদা তোমাকে কী বলেছিল। প্লিজ দাদি বল না। খুব ইচ্ছা করছে শুনতে।’

‘তোদের মতো ফোন ছিল না। জামাই বাসরঘরে কী করবে। সেটা আবার ভিডিও করে, বান্ধবীদের ইনবক্সে দিবি। তোদের লজ্জা-শরম বলতে কিছু কি নেই। এমন বেহায়া কেন তোরা। একটুও শরম লাগে না। জামাই কী কইছে, কীভাবে আদর করছে সেইটা আবার বান্ধবীদের অবলীলায় ফোনে বলে বেড়াস।’

‘দাদি, তোমার এত লেকচার দিতে হবে না। তোমাকে যেটা বলেছি, সেইটা বলো। তোমরা এ প্রজন্মের মানুষ না। বুঝবে না এসব। বাসররাতের কাহিনি না বললে, আমি ভাত খাব না। আমার ওজন কমে যাবে, বলব দাদি ঠিকঠাক মতো আমার যত্ন নেয়নি। তাই এমন হয়েছে।’

‘আরে শয়তান! আমার দাদি ছিল না, নানি ছিল। সে বলে দিয়েছিল, বাসরঘরে প্রবেশ করে যেন দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিই। তারপর জামাইয়ের পা ছুঁয়ে সালাম করি। আমি নামাজ শেষে পা ছুঁয়ে সালাম করতেই তোর দাদা বুকের ভেতর জড়িয়ে নেয়। আমি ভয়ে চিৎকার দিই। প্রশস্ত বুকের আলিঙ্গন আমাকে ভয় বাড়িয়ে দেয়। সারা রাত বসে থাকি। লোকটির চাহনি দেখে ভয়ে ভয়ে দূরে থাকি। না জানি কখন আবার আমাকে বুকে নিয়ে চাপ দিয়ে ধরে। তোর দাদা শুধু বলে, এসো ঘুমিয়ে পড়। আমি কিছু করব না।’ তার কথাতে বিশ্বাস ছিল না। তাই চুপচাপ বিছানার এক কোণে বসে ছিলাম। তারপর সেখানেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যাই। সকাল না হতেই জোরে জোরে দরজায় নক দেয়। আমি পায়ে ছোঁয়া দিই তোর দাদার। তারপর তার ঘুম ভাঙে। আমি গিয়ে দরজা খুলে দিই। তারপরের ঘটনা আরও করুণ। তোর দাদা সকালে সেই যে বেরিয়ে গেল আর এলো না। আমাকে দেখার জন্য ধুম পড়ে গেল। অমুক বড় বুবু, অমুক খালা, অমুক খালার মেয়ের চাচাতো ভাই ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমার পেটে ক্ষুধা। কেউ খেতে বলে না। আমার সঙ্গে নানি এসেছেন, তিনিও দেখি চুপ করে আছেন। নানিকে ভীষণ মনে পড়ল।’

‘দাদি তোমাকে বলছি বাসরঘরে দাদা কী করল। আর তুমি কিনা চলে এসেছ পেটে ক্ষুধা। কেউ খেতে দেয়নি। এসব হাবিজাবি গপ্প। তোমার আর গল্প শুনব না।’ বলে কিছুটা অভিমান নিয়েই রিমি চলে গেল। সাহেরা বানু হেসে দিল। বিড়বিড় করে কী যেন বলেও থেমে গেল। রিমির অভিমানগুলো খুব ছোট। বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। সত্যিকারভাবে অভিমান ছোট হওয়াই ভালো, অভিমান দীর্ঘ হলে দূরত্ব বাড়ে। সম্পর্কে ফাটল ধরে। বিশ্বাসে ভাইরাস ধরে! রিমির কথা বলার মতো অনেকে থাকলেও, সে দাদির কাছেই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কোনো দিন এসে বলবে দাদি, তোমাদের বিয়ের সময় পালকি ছিল না ক্যান? রিকশাতে করে কীভাবে গেলে? তখন তার দাদি শীতলভাবে জবাব দেবে।

একদিন গভীর রাতে রিমি চোখের জলে বুক ভিজিয়ে ফেলে। তার দাদি ঘুমাচ্ছন্ন। হঠাৎ রিমির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে জেগে ওঠে। রিমির চোখের জল দেখে, তার বুকের ভেতর আটলান্টিক মহাসাগর বয়ে চলে। ঘটনা কী হয়েছে জানতেই রিমির কান্নার আওয়াজ বেড়ে যায়। দাদি বুঝতে পারে তার কান্নার কারণ। তারপর বলে, ‘কিরে সৌরভের সঙ্গে কোনো ঝগড়া হয়েছে। তার কথা খুব বেশি মনে পড়েছে।’ রিমি শাড়িতে চোখ মুছতে মুছতে বলে, ‘দাদি, ওর কথা মনে পড়েনি।’

‘তাহলে তার সঙ্গে ঝগড়া করেছিস বুঝি।’

‘না দাদি। ঝগড়া হয়নি। ওর তো পরীক্ষা। ভীষণ ব্যস্ত। কথা তেমন হলে তো ঝগড়া হবে।’

‘রাখ তোর পরীক্ষা। সন্তানের বাবা হবে। সেটাই হলো বড় পরীক্ষা। খোঁজ নেয় না। শয়তানটাকে কাল সকালে ভিডিও কলে আমাকে ধরিয়ে দিবি। তারপর মজা দেখাব।’

‘দাদি, ওর সঙ্গে কোনো রকম মান-অভিমান নেই। সে পরীক্ষার জন্য কম খোঁজ নিচ্ছে। তাছাড়া রেগুলার খোঁজ নেয়। দিনে কয়েকবার কথা হয়।’

‘ওরে মাবুদ। এত কিছু। আর আমি কিছুই জানি না। ডুবে ডুবে জল খাও তাহলে। তবে এ সময় প্রিয়জন পাশে থাকা জরুরি। এখন বল এভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছিস ক্যান।’

‘দাদি, আমার মা-বাবাকে ভীষণ মনে পড়ছে। তারা কীভাবে মারা গেল। কোনো স্মৃতি মনে পড়ছে না। ফোনের ছবি ছাড়া তাদের সঙ্গে কোনো রকমের ছবি নেই আমার সঙ্গে।’

রিমির এ কথাতে কী জবাব দেবে, তা বুঝে উঠতে পারে না। খুব নীরব হয়ে যায়। কিছুটা নীরবতা ভেঙে বলে, ‘আরে পাগলি। এ দুনিয়াতে কেউ সারা জীবন বাঁচতে পারে না। আসার সিরিয়াল আছে কিন্তু যাওয়ার সিরিয়াল নেই। এই দেখ আমাকে। কত বয়স হয়েছে, দাঁত পড়ে গেছে। চামড়া ঢিলা হয়ে গেছে। ঠিকঠাক মতো চোখে দেখি না। তবুও বেঁচে আছি। অথচ তোর দাদা, তিন চাচা, তোর বড় ফুপির স্বামী মারা গেছে অথচ আমার মতো বুড়ি মানুষ বেঁচে আছি। কী আজব। তাই নয় কি!’

‘দাদি এভাবে কথা বলো না। খুব কষ্ট লাগে। তুমি আর ছোট ফুপি আমার ভীষণ প্রিয়। তোমরা দুজন না থাকলে আমি আত্মহত্যা করে মারা যেতাম। এ মুখ আমি কখনো দেখাতাম না।’

‘এমন কথা বলিসনে পাগলি মেয়ে। তোর ছোট ফুপির ভাগ্যটা আসলে মন্দ। না হলে কী এমন হয়।’ রিমির ছোট ফুপি মানে আদুরী। সবার ছোট হওয়ার সুবাদে বেশ আদরে রাখতো। আহ্লাদ করে নাম রেখেছে আদুরী। কোনো কিছুর চাহিদার কমতি ছিল না, সবকিছু চাওয়ার আগেই তার সামনে হাজির হয়ে যেত। সে যখন ডিগ্রির ফাইনাল ইয়ারে, তখন প্রেম করত। কেউ জানত না। একদিন রাতে আদুরীকে খুঁজে পাওয়া গেল না। কোথায় গেল, কীভাবে গেল কেউ কিছুই জানে না। পরিবারের লোকজন হতভম্ভ। সাহেরা বানু কান্নায় বুক ভাসিয়ে দিল। তার সবাই পুকুরে, বিলে, খেত-খামারে কোথাও খুঁজে পেল না। পরে পুলিশকে জানায়। একদিন যায়, এক সপ্তাহ যায়, এক মাসের মাথায় আদুরী ফোন দিয়ে জানায়, সে কোর্ট ম্যারেজ করেছে। পরিবার মেনে নেবে না, সেই ভয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। সবার ভীষণ রাগ থাকলেও, মায়ের মুখের দিকে চেয়ে মেনে নেয়। তবে আগের মতো স্নেহ, মায়া, আর আদর সেভাবে করতো না। সে স্বামীর বাড়ি থেকে এসেছে, তাকে খাওয়াতে হবে। সে সুবাদে খেতে দিত। সেভাবে কেউ বসতে বলত না। ‘আজকে থেকে যাও’ এমন আদুরে আবদার কেউ করত না।

আদুরীর জামাই ব্যবসা করত। তার সম্মানের কোনো ঘাটতি রাখেনি। এক সময় সব ভুলে তারা খুব কাছের হয়ে যায়। রক্তের বন্ধন কি ছিন্ন করে থাকা যায়। আদুরী ও তার জামাই বেশ সুখে দিন কাটাতে থাকে। সংসারে কোনো অভাব নেই। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় কয়েক বছর যাওয়ার পর। তাদের ঘরে কোনো সন্তান আসে না। কত ডাক্তার, কবিরাজ, পীর... ফলাফল শূন্য। সন্তান না হওয়ার জেরে দুজনের দূরত্ব বাড়ে। তার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে নানা রকমের খোটা শুনতে হয়। সে এতে কখনো কোনো প্রতিবাদ করে না। নিজেকে সামলে রাখে। যাকে বিশ্বাস আর ভরসায় নিজেকে সমর্পণ করে, সে কিনা পালটে যায় ধীরে ধীরে। তার এ পালটে যাওয়া ভীষণ রকমের আহত করে। এক সময় তার স্বামীকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়। আর তাতেই কিনা তার স্বামী বিয়ে করে ফেলে। পরিবারও বেশ খুশি হয়। আদুরী ভীষণ কষ্ট পায়। অনেক রাত অপেক্ষায় থাকে। তার স্বামী আসবে। একটু কথা বলবে। কিন্তু আসে না। আগের মতো কাছে ডাকে না। মন খুলে কথা বলে না। এই পীড়া সহ্য হয় না। কত রাত অপেক্ষায় কেটে যায়, অভিমানে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে। কখনো কখনো ভাবে সে আত্মহত্যা করবে। কারণ তার তো যাওয়ার জায়গা নেই। বাড়ি ফিরে কার কাছে দুঃখের কথা বলবে। কার কাছে মন খুলে এসব বলবে। সবাই তো তাকেই দোষ দেবে। সবাই বলবে, ‘পরিবার ছাড়া বিয়ে করলে এমনই হয়।’ এক কথায় সব থামিয়ে দেবে। দুঃখের সাগর থেকে বেঁচে থাকার একটাই পথ নিজেকে নিঃশ্বেষ করে দেওয়া। একটা সময় মনে করে সে দূরে কোথাও পালিয়ে চলে যাবে। কিন্তু আবার মনে করে পালিয়ে যাবে কোথায়, কার সঙ্গে পালিয়ে যাবে। সে যদি আবার এমন হয়। তাহলে তো অবস্থা খারাপ হবে! নারীদের জন্ম হয়েছে সব সহ্য করে থাকার জন্য। সংসার জীবনে যে নারী যত সয়ে যায়, সে নারী তত সবার কাছে প্রিয় হয়। আদুরীর স্বামীর আবার বিয়ের পর একই অবস্থা হয়। যাকে বিয়ে করে আনে তার বাচ্চা হয় না। আসলে সমস্যাটা আদুরীর বা নতুন বউয়ের নয়। সমস্যা ছিল তার স্বামীর। পরে তো অভিমানে আদুরী বাড়ি ফিরে আসে। সবাই মেনেও নেয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম