
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ এএম
এস আলম গ্রুপ
৬৪ হাজার কোটি টাকার জমি ও ফ্ল্যাটের সন্ধান
শুধু চট্টগ্রামেই মিলেছে ৫ হাজার বিঘা জমি * ১,৫৫৮ কোটি টাকার ১৭টি ফ্ল্যাট জব্দ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
ব্যাংক দখল করে শুধু টাকা লুট করেই ক্ষান্ত হয়নি এস আলম গ্রুপ। লুটের টাকা যেমন বিদেশে পাচার করেছে, তেমনি দেশে-বিদেশে বেআইনিভাবে বিনিয়োগ করার তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। লুটের টাকার একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার ভঙ্গ করে জমি ও ফ্ল্যাট কেনায় বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদন্তে এস আলম গ্রুপের নামে শুধু দেশের ভেতরে বিভিন্ন অঞ্চলে কেনা ও দখল করা ৬ হাজার ২৩১ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই পাওয়া গেছে ৫ হাজার বিঘা জমি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৭টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। সব মিলে এসব সম্পদের মূল্য গড় হিসাবে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। একাধিক সংস্থার সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এখন পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা লুট করার তথ্য পাওয়া গেছে। এর একটি অংশ বিদেশে পাচার করেছেন। কিছু অংশ শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। একটি অংশ জমিতে বিনিয়োগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে জমি কেনা যাবে না। এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা লুট করে সেই টাকার একটি অংশ দিয়ে জমি কিনেছে। পাশাপাশি কিছু জমি দখল করেছে। এভাবে গ্রুপের মালিকানাধীন জমির পরিমাণ বাড়িয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তদন্ত করে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছে, তাতে দেখা যায়-এস আলম গ্রুপের নামে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংক হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা থাকার তথ্যও মিলেছে। এ বিষয়গুলো এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও দুর্র্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আরও বিশদ তদন্ত করছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসাবে এস আলম গ্রুপ সরকারের সহযোগিতায় ব্যাংক দখল করে আমানতকারীদের টাকা লুট করেছে। সেই টাকার একটি বড় অংশের সুবিধাভোগী পতিত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা। সরকার পতনের পর প্রথমে এস আলম গ্রুপের জালিয়াতির তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে এতে দেশে-বিদেশে সম্পদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন তৈরি সম্পন্ন হলে সিআইডি চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের নামে ৫ হাজার বিঘা জমির সন্ধান পায়। যা প্রতিবেদনের শেষ অংশে সন্নিবেশিত হয়েছে। সিআইডি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে এসব জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। সেগুলো এখন দুদকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক ও সিআইডি যৌথভাবে আরও বিশদ তদন্ত করছে। কিভাবে জমি কেনা হয়েছে, টাকা এসেছে কোথা থেকে। কি পরিমাণ জমি দখল করা হয়েছে সেসব বিষয়ও তদন্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে দুটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সিআইডির মাধ্যমে শনাক্ত করা আরও অন্যান্য সম্পত্তির কাগজপত্র ও তথ্য দুদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুদক সেগুলো নিয়েও বিশদ তদন্ত করছে। এস আলম গ্রুপের নামে কেনা বিভিন্ন কোম্পানির ২৫ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে।
যৌথ তদন্ত দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালতের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা মূল্যমানের ১৭টি ফ্ল্যাটসহ ১ হাজার ২৩১ বিঘা জমি সংযুক্তি করা হয়েছে। ১৬ হাজার ৮০৭ কোটি ৮ লাখ টাকার কোম্পানির শেয়ার ও ২১২টি ব্যাংক হিসাবে ৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৯৮ কোটি টাকা ও ১ লাখ ৫৮ হাজার ডলারের স্থিতিসহ ৬৩৮টি ব্যাংক হিসাব, ৪২৬ কোটি টাকার শেয়ারসহ ২৪টি বিও হিসাব ও আরও কয়েকটি কোম্পানির ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে।