
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৪ এএম

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
দেশের প্রায় সবক’টি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাচীন জনপদ পটিয়াকে জেলায় রূপান্তর করা হয়নি। জেলা হওয়ার মতো সব ধরনের অবকাঠামো থাকার পরও কেবল রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে পটিয়ার জেলা হওয়ার ভাগ্য ঝুলে আছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হবেন তার কাছে পটিয়াবাসীর প্রত্যাশা- পটিয়াকে ‘জেলা’ হিসাবে দেখতে চাই।
দেশজুড়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এ আসনে বিএনপি থেকে সাবেক দুবারের এমপি গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ইদ্রিস মিয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সদস্য সৈয়দ শাদাত আহমেদ, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। সাবেক ছাত্রনেতা ও চিকৎসক নেতা ডা. ফরিদুল আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটির মনোনয়ন বোর্ড। এ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ ছোট ছোট দল প্রার্থী দিয়ে থাকে। এসব দলের প্রার্থীরাও আলোচনায় আসেন। সুন্নি মতাদর্শভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) ভোট ব্যাংক রয়েছে। ২০২৪ সালে এ আসন থেকে এ দলের চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিন নির্বাচন করেন। কেন্দ্র দখল করে এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ পেশিশক্তি প্রয়োগের অভিযোগ এনে তিনি ভোট বর্জনেরও ঘোষণা দেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আসতে পারবে কিনা সে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দল দুটির প্রার্থীরা কোনো আলোচনায় নেই।
১৯৯১ সাল থেকে পটিয়া আসনটি ছিল বিএনপির কব্জায়। এ মেয়াদে বিএনপির শাহনেওয়াজ চৌধুরী মন্টু আওয়ামী লীগ প্রার্থী এসএম ইউসুফকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। মন্টু মারা যাওয়ার পর বিএনপি নেতা গাজী শাহজাহান জুয়েল ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। জুয়েলকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সামশুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সামশুল হক নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন সামশুল হক। কেন্দ্র দখল করে মোতাহের নির্বাচিত হন। যদিও তিনটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, দল আমাকে অতীতে দুবার মনোনয়ন দিয়েছে এবং পটিয়ার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন পেলে আমি পটিয়ার উন্নয়নে আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব।
পটিয়া জেলা না হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, পটিয়া জেলা না হওয়ার পেছনে যতটা না প্রশাসনিক কারণ ছিল তার চেয়েও বেশি ছিল রাজনৈতিক কারণ। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদে পটিয়াকে জেলা করার প্রস্তাব উত্থাপন করি। আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে এবং আমি নির্বাচিত হলে আমার প্রথম এজেন্ডা হবে পটিয়াকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু তথা জেলায় রূপান্তর করা।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এনামুল হক এনাম যুগান্তরকে বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচন করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। কেন্দ্রে আমার এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ হত্যাকাণ্ডে উলটো আমাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়। ১৬টি মামলায় একাধিকবার কারাবরণ করেছি। ১৬ বছরে কখনো জেলে কখনো পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে দলীয় কার্যক্রম চাঙ্গা রেখেছি। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর দুই নেতাকে ইঙ্গিত করে এনাম বলেন, এখানে যারা দলের মনোনয়ন চাইছেন তাদের অনেকেই ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দালালি করেছেন। কেউ বিদেশে বিলাসী জীবন-যাপন করেছেন। আমার বিশ্বাস দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকেই মনোনয়ন দেবেন। আমি মনোনয়ন পেলে দলের জন্য এবং পটিয়াবাসীর জন্য নিজেকে উজাড় করে দেব।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ইদ্রিস মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। পটিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছাত্রনেতারা আমার সঙ্গে আছেন। এখন যারা মনোনয়ন চাইছেন তাদের কেউ কেউ আমার হাত ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, দল আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তার পক্ষে কাজ করব।
পটিয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহের পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা। রমজানজুড়ে ১৭টি ইউনিয়নে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গাজী সিরাজ বলেন, পটিয়ার তরুণ সমাজ আমার সঙ্গে আছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে তারুণ্যের অফুরন্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে পটিয়ার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করব। পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম যুগান্তরকে বলেন, দল আমাকে মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। টাকা দিয়ে ভোট কেনার রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে। পটিয়ায় ব্যাংকের শত শত কর্মী এখন বেকার। তাদের কিভাবে পুনর্বাসন করা যায় সেই চিন্তা আমার রয়েছে। বেকারত্ব দূর করা, তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করাই হবে তার প্রথম কাজ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদে শিবিরের পক্ষ থেকে কমনরুম সেক্রেটারি ছিলেন ডা. ফরিদ। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নির্বাহী কমিটির তিনবারের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন তিনি। শেভরন হাসপিটালের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পরিচালক, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. ফরিদ।