
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৭ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত সরকারের আমলে করা সাত হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। জামিনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে দায়ী করা হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে জামিন দেওয়া বা না দেওয়ার একক এখতিয়ার আদালতের। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই বিলিয়ন ডলার লুটের পরিকল্পনা ছিল। রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার শুরু হবে জানিয়ে উপদেষ্টা ড. আসিফ বলেন, আশা করছি শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তিনি বলেন, মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করে ডিটেনশন দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়াটি ঠিক হয়নি। মেঘনার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করে ড. আসিফ বলেন, তারা (প্রবাসীরা) যেভাবে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন তাতে তাদের প্রতি সরকার ও দেশবাসীর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ভোটার হওয়া তাদের নাগরিক অধিকার।
জরুরি সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ বলেন, আরও প্রায় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জমা আছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। তিনি বলেন, অনেক সময় এমন সব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশের জন্য আসে যা প্রকৃত পক্ষে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা নয়। অনেকে এসব মামলা তালিকায় কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ বলেন, মডেল মেঘনার ব্যাপারে কিছু অভিযোগ আছে, সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করা ঠিক হয়নি-এটা আমরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি। আমাদের কাজে ভুল হলে আমরা তা স্বীকার করব। এ ভুলের দায় কার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় তো আইন প্রয়োগ করে না।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন পরিবর্তনের পর মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণের মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে। এ অনুসারে ধর্ষণ মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে। এ ধর্ষণের ঘটনায় ডিএনএতে আলামত মেলায় আরও দ্রুতগতিতে তদন্ত শেষ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে জামিনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামিন হলেও বলা হয় আইন মন্ত্রণালয় কী করছে? উপদেষ্টা কী করছেন? তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মামলায় যেসব জামিন হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছেন। প্রায় সব মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা ব্যাখ্যা করার এখতিয়ার আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। যেমন-বগুড়ার ১৩০টি মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অধস্তন আদালত যে কাজটি করেন, যখন আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হয় তখন পুনরায় জামিন চাইতে গেলে অধস্তন আদালত থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই জামিনকে বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধস্তন আদালত থেকেও জামিন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসার পর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে-যারা জামিন পেয়েছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা এজাহারভুক্ত আসামি নন।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২ বিলিয়ন ডলার লুটের পরিকল্পনা ছিল। এটা ছিল বাংলাদেশকে লুট করার একটা পরিকল্পনা মাত্র। দুই বিলিয়ন ডলার লুট হলে আমরা দুর্ভিক্ষের ভেতরে পড়ে যেতাম। আগের সরকার রিজার্ভ লুটের ঘটনা তদন্তে গড়িমসি করেছে। রিজার্ভ লুটের বিষয়ে সিআইডি যে তদন্ত করেছিল, সেখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কর্মকর্তারা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদের নাম যেন তদন্ত রিপোর্টে না আসে। সিআইডির রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল সেটা জানতে চেয়েছি এবং পরবর্তী ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা আমরা জানতে চেয়েছি।
কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও বলেছি। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নিউইয়র্কে বিচার চলমান। বাংলাদেশে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে নিউইয়র্কের বিচারের কোনো সমস্যা হবে কিনা, বিষয়টা আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের ল’ ফার্মের মতামত নেওয়া হবে এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রিজার্ভ চুরির ঘটনা রিভিউয়ের জন্য গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দুই সপ্তাহ পর আবার রিভিউ কমিটির বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। ২৭ বা ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।