
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৬ এএম
আদানির এক ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে দুটি ইউনিট থেকে ১৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ৮ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়েছে শুক্রবার রাত ১টার দিকে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে শনিবার সন্ধ্যায় একটি ইউনিট চালু হলেও দ্বিতীয় ইউনিট কবে চালু হবে তা কেউ জানাতে পারেনি। প্রথম ইউনিট চালু হলে রাত ১০টা পর্যন্ত ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে এসেছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ আসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে আদানি কান্ট্রি ম্যানেজারের অফিস থেকে।
পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি) ও পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরোপুরি সরবরাহ শুরু না হলে আজ লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি। পিডিবি জানিয়েছে, আদানি পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের অভাবে বন্ধ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো হবে। তবে সন্ধ্যায় পিজিসিবি মুখপাত্র বদরুদ্দোজা সুমন যুগান্তরকে বলেন, প্রথম বন্ধ হওয়া ইউনিটটি শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় চালু করা হয়েছে। এ ইউনিটটি ৮ এপ্রিল থেকে মেরামতের কাজ চলছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৮ এপ্রিল বন্ধ হওয়া ইউনিটটি আরও কয়েকদিন পর চালু করার কথা ছিল। দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে সেটি চালু করা হয়েছে। এ কারণে যে কোনো সময় এ ইউনিটটি ফের বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা করছে আদানি। প্রথমে বন্ধ হওয়া ইউনিটটি দ্রুত চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আদানির ঘাটতি মেটাতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এ কারণে শনিবার কোথাও লোডশেডিং করতে হয়নি। গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করা হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ পাওয়া গেলে চাহিদামতো উৎপাদন করা যাবে। তাতে লোডশেডিং হবে না। এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের রাষ্ট্রীয় সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিসিবি) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ১৪শ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। ৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো বিদ্যুৎ যুক্ত হয়নি।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও পিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি। গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে। ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করে পিডিবি। মার্চের শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা।
পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। যে কারণে দেশের কোথাও বড় লোডশেডিং দেখা যায়নি। শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছিল ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ সময় ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আজ আরও লোডশেডিং বাড়ার কথা। তবে আজ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকার কারণে চাহিদা আরও বাড়বে। তাতে লোডশেডিং ১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।