
প্রিন্ট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৮ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
গত বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কমেছে। ১৫ দিনে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত এবং ৮২৬ জন আহত হয়েছে। তবে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছে। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক-মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী-বিগত সময়ের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ২১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, নিহত ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আহত ৪০ দশমিক ৯১ শতাংশ কমেছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত এবং ৮৩৫ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছে। নৌপথে চারটি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত এবং একজন আহত ও একজন নিখোঁজ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবার দীর্ঘ ছুটিতে ধাপে ধাপে বাড়ি ফেরার সুযোগ থাকায় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে-দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো ছিল, সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছিল যাত্রীবান্ধব ও দৃশ্যমান। তবে যাত্রীসাধারণ অসংগঠিত ও সচেতন না হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছেছিল। গণপরিবহণগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাস ও ট্রেনের ছাদ, খোলা ট্রাক, পণ্যবাহী পরিবহণে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি যেতে হয়েছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৪ মার্চ থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত, ৮২৬ জন আহত হয়েছে। গত বছর ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত এবং ১৫৫ জন আহত হয়েছে। ৭০ জন চালক, ৪৭ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৫০ জন পথচারী, ৬০ জন নারী, ৪০টি শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ছয়জন শিক্ষক, চারজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও একজন সাংবাদিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের মধ্যে রয়েছে-৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে, শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক, ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়ক, ৩৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরী, শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
এবারের ঈদে সংঘটিত দুর্ঘটনার সাতটি কারণ হিসাবে বলা হয়, এগুলো হলো-১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল। ২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা। ৩. সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, অন্ধবাঁকে গাছপালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। ৪. মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা। ৫. উলটোপথে যানবাহন, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ। ৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন। ৭. বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়-১. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা। ২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। ৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান। ৪. গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে সার্ভিস লেইনের ব্যবস্থা করা। ৫. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা। ৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা। ৭. সড়ক পরিবহণ আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা। ৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা। ১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহণ ও দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া। ১১. ঈদের ছুটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।