
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৬ পিএম
সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান
টিউলিপকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে
মামলায় আসামি হতে পারেন সাকিব আল হাসান

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রবল সমর্থন থাকা সত্ত্বেও দেশটির দুর্নীতি নিবারণ মন্ত্রী টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, টিউলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বা তার আইনজীবীর পত্রের জবাব দেওয়া হয়নি-এমন অভিযোগ সত্য নয়। সম্পূর্ণ দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি দুদক আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে জানানো হয়েছে। টিউলিপকে আদালতে হাজির হয়ে মামলা মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তিনি মামলায় আসামি হতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান। আসামি সাকিব একসময় দুদকের শুভেচ্ছাদূত ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ও হত্যা মামলার পরও কি শুভেচ্ছাদূত আছেন-সাংবাদিকরা জানতে চান তার কাছে। জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের শঙ্কা; এমনও হতে পারে সাকিব দুদকের মামলায় আসামি হয়েছেন। রোববার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ঈদ-পরবর্তী এই ব্রিফিংকালে কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে-দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত টিউলিপ সিদ্দিকের বিলেতি আইনজীবীর পাঠানো পত্রের জবাব আমরা দিইনি। অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি বলেই ব্রিটেনের দুর্নীতি নিবারণের মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রবল সমর্থন সত্ত্বেও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দুদক তার আইনজীবীকে এবং আইনজীবীর মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিককে জানিয়ে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে দালিলিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই আদালতে দুর্নীতির চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আদালতে হাজির হয়ে তারা যেন অভিযোগের মোকাবিলা করেন। চিঠি লেখালেখি করে এ মামলার পরিণতি নির্ধারিত হবে না। আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। আদালতে তার অনুপস্থিতি অপরাধমূলক পলায়ন বিবেচিত হবে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কেবল টিউলিপ সিদ্দিক নন, দুর্নীতির প্রশ্নে সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে যে কোনো সাধারণ নাগরিকের বেলায়ও দুর্নীতি দমন কমিশন একই প্রমিত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে।
প্রসঙ্গত, পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ১০ মার্চ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্যসহ ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৮টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করে দুদক। শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে তিন মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ-সদস্য সাকিব আল হাসান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। তাই সব বলা যাচ্ছে না, পরে অনুসন্ধান শেষে বোঝা যাবে কী হয়।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে দুদকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। দুদকের হটলাইন-১০৬ সেবা উদ্বোধনকালেও তার সঙ্গে কাজ করে দুদক। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ২০২২ সালে সাকিবের সঙ্গে চুক্তি না রাখার কথা জানায় সংস্থাটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ জুয়ার ব্যবসা ও জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতি ও নির্বাচনি হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মিলহানুর রহমান নাওমী। গত বছরের ৮ নভেম্বর সাকিবের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা জানায় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত বছরের ৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আরও অনেকের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে সাকিবকে।