
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) শেখ হাসিনার শাসনামলে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে চরম অনীহা প্রদর্শনের অভিযোগ ওঠেছে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সংস্থাটির পরিচালনা বোর্ডের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রায় এক ডজন নথিভুক্ত অভিযোগ থেকে জানা যায়, স্বৈরাচার আমলে তথ্য মন্ত্রণালয় বাসসের দুর্নীতিতে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা। অন্যদিকে তদন্ত কার্যক্রমে দুদক গ্রহণ করে বৈষম্যমূলক অবহেলার নীতি। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাসসে ফ্যাসিবাদী লুটতরাজ আরও বেগবান হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ড পালন করছে নীরব দর্শকের ভূমিকা। বাসস সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটালেও দরিদ্র জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে তার বিন্দুমাত্র আঁচ লাগেনি। সংস্থাটিতে ফ্যাসিবাদী আমলের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং লুটপাট এখনো অব্যাহত রয়েছে। স্বচ্ছতা-জবাবদিহির অভাবে চলছে সরকারি অর্থের হরিলুট। এই লুটপাটের সিংহভাগই ব্যয় হচ্ছে ফ্যাসিবাদের অনুচরদের পুনর্বাসন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানে। একই সময়ে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বিধি-২০১৫ লঙ্ঘন করে সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা নির্বিচারে খরচ করা হচ্ছে বিধিবহির্ভূত খাতে।
প্রাপ্ত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনা আমলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভিন্নমতালম্বীরা দুদক এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েও সুবিচার পায়নি। সংস্থাটির সাবেক বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম মানিক ৫ বছরে দুদকে কমপক্ষে ১০ বার আবেদন করেন। এসব আবেদনের সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং অকাট্য প্রমাণও দাখিল করা হয়। কিন্তু ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ার অপরাধে দুদক তার একটি আবেদনও আমলে নেয়নি। দুদকের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিকার চেয়ে ২০২২ সালের ২৫ মে তিনি একটি বিশদ আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি। তবে সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ আগস্ট অভিযোগকারীর সর্বশেষ ২০০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির আবেদনটি আমলে নিলেও তদন্ত কাজে আজও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আবুল কালাম মানিক দুদক এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথমবার আবেদন করেন ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর।
সূত্র আরও জানায়, পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে বাসসকে ফ্যাসিবাদী প্রচারণার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। তারই সুবাধে সেখানে কায়েম হয় আওয়ামী গোষ্ঠীতন্ত্র। একই সঙ্গে শুরু হয় সরকারি অর্থ হরিলুটের মচ্ছব। অনিয়ম-দুর্নীতিকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা। শেখ হাসিনা বাসসে অবৈধ নিয়োগ এবং লুটপাটের দায়দেনা মেটাতে দুই দফায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এই সুযোগে নিয়মনীতি ভঙ্গ করে শতাধিক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডার ঢুকে পড়েন বাসসে। দফায় দফায় এদের পদোন্নতি এবং উচ্চতর বেতন গ্রেড ও হরেক রকমের অবৈধ ভাতা প্রদান করা হয়। হাসিনা আমলে বাসসের কোনো নিয়োগেই পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নেই। প্রচলিত আইনে এদের উপার্জিত বেতন-ভাতা সবই অবৈধ ও দুর্নীতির নামান্তর। এতে সরকারি তহবিল থেকে লোপাট হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫০০টি বেআইনি অফিস আদেশ জারি করে এসব অপকর্ম হালাল করা হয়। স্বৈরাচারী আমলের সর্বশেষ ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা ও প্রধান সম্পাদক (এমডি) আবুল কালাম আজাদ একাই জারি করেন ৩৫০টি আদেশ। এর বাইরে আরও ৫০ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, চুরি এবং ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে। সরকারি অর্থ হরিলুটের কারণে বাসসের বর্তমান ঋণ ও দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি টাকা। অথচ সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে উদ্বৃত্ত সরকারি বরাদ্দ পেয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, হাসিনা আমলে অবৈধ নিয়োগে উপকারভোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, যুবলীগ নেতা ড. উৎপল কুমার সরকার, মির্জা আমিনুল ইসলাম (মির্জা গোলাম আজমের ভাই), মনোজ কান্তি রায়, অজিত কুমার সরকার, সুভাষ চন্দ বাদল, কানাই চক্রবর্তী, স্বপন বসু, মধুসূধন মন্ডলসহ আরও অনেকেই। এছাড়াও মাহবুবুর রহমান নামে বগুড়ার এক অযোগ্য ও বয়সোত্তীর্ণ ব্যক্তিতে নয়াদিল্লিতে তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে সরকারের ২ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়। তিনি বগুড়ার একটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এটাই ছিল তার একমাত্র যোগ্যতা।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরের দিন ৬ আগস্ট তৎকালীন এমডি আবুল কালাম আজাদ ৪০টি বেআইনি অফিস আদেশ জারি করে সংস্থার মাসিক ব্যয় বাড়িয়ে দেন ১০ লাখ টাকা। এতে বকেয়া পাওনা দাঁড়ায় ৮ কোটি টাকা। এ দিনের একটি অফিস আদেশে গোপালগঞ্জের যুবলীগ নেতা এবিএম নূর আলম (বাদল নূর) বাসসে স্থায়ী নিয়োগ পান। কিন্তু বর্তমান এমডি মাহাবুব মোর্শেদ জ্ঞাতসারে আজাদের অবৈধ আদেশগুলো বাতিল না করে বিগত এমডির অনুচরদের পরামর্শক্রমে বাস্তবায়ন করেন। পরে পরিচালনা বোর্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন অবৈধ আদেশগুলো অনুমোদনের জন্য।
বাসসে অবৈধ গাড়ি ভাতা খাতে লুট হয়েছে দুই কোটি টাকা। পরিচালনা বোর্ডের অজান্তে চালু করা হয় বিতর্কিত এই ভাতা। সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদ, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ এক কমিটি গঠন করে এই টাকা লুট করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আবুল কালাম আজাদ বিধি লঙ্ঘন করে দুটি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। একটি নিজে এবং অপরটি পরিবারের সদস্যদের জন্য। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে জ্বালানি খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ। সাবেক এমডির দুই ড্রাইভার রুবেল হাওলাদার এবং মাসুদ রানা মাসিক ওভারটাইম বিল নিয়েছেন গড়ে ৩৫ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে দুদকে সম্পূরক অভিযোগ দায়ের করা হয় ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। কমিশন স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে চোখ বন্ধ রাখার নীতি বজায় রাখে।
এছাড়াও প্রভিডেন্ট ফান্ড, সাংবাদিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিল এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিগত ১৬ বছরে ৫ কোটি টাকা সুদ দেওয়া হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। বর্তমানে প্রভিডেন্ট ফান্ডের নিকট বাসসের অবৈধ ঋণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। বাজেট ম্যানেজমেন্ট কমিটির নামে আত্মসাৎ হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। সাবেক এমডি আজাদ একাই নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়েছেন ৭ লাখ টাকা। করোনা প্রণোদনার নামে লুট হয়েছে আরও ৩৫ লাখ টাকা। বাসায় অবস্থান করে সাবেক এমডি আজাদ নিজেই নিয়েছেন ১ লাখ টাকা আর আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুককে দিয়েছেন এক মাসের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। বিগত আওয়ামী শাসনামলে গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ১২ কোটি টাকাও তছরুপ করা হয়েছে। এতে অবসরপ্রাপ্ত অনেক সাংবাদিক-কর্মচারী যথাসময়ে পাওনা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মরহুম সিনিয়র সাংবাদিক মুজিবুল হক ভূঁইয়া অন্যতম। জানা গেছে, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সহযোগিতায় সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদ বাসস অফিসের পেটি ক্যাশ থেকে ব্যক্তিগত অজুহাতে খরচ করেছেন ১০ লাখ টাকা। শুধু ফুলের তোড়া কেনার বাহানায় গত ১০ বছরে খরচ করেছেন কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা। ভুয়া বিল-ভাউচারে আত্মসাৎ করা হয়েছে এই টাকা। এসব ভাউচারে সই রয়েছে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার।
এছাড়াও সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদের লুটপাটে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন ও প্রধান প্রশাসনিক কর্র্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান অপুর বিরুদ্ধে। সাবেক এমডিকে অহরহ নানা কৌশল বাতলে দিয়ে অধস্তন এই দুই কর্মচারী বিভাগীয় প্রধানের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন পরিচালনা বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই। সাবেক এমডি বেআইনিভাবে এই দুজনকে ৪টি ইনক্রিমেন্টসহ সর্বোচ্চ বিশেষ বেতন গ্রেড প্রদান করেন। এদের মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ২ লাখ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, সরকারের শীর্ষ আমলা সচিবের মূল বেতন যেখানে ৭৮ হাজার টাকা সেখানে তাদের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। সাবেক এমডি যেসব অবৈধ ভাতা নিয়েছেন তার সবকটিতেই ভাগ বসিয়েছে অপু-জসীম। এদের প্রত্যেকের মাসিক বিধিবহির্ভূত ভাতার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। সাবেক এমডির মতোই এদের হাতে রয়েছে আলাদিনের চেরাগ। খুব অল্প সময়েই ঢাকা শহরে হয়েছে গাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদ।
জসীম পদ দখলের পরপরই সরকারি অর্থের হরিলুট ত্বরান্বিত করতে সংস্থার বার্ষিক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার নিয়মটি বন্ধ করে দেন। ঘুস দিয়ে সরকারি অডিট আপত্তি মোকাবিলার নীতি গ্রহণ করেন। সরকারের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বিধি-২০১৫ লঙ্ঘন করে নির্বিচারে নিয়মিত সরকারি বরাদ্দ, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটির কোটি কোটি টাকা খরচ করতে থাকে। অনিয়ম ও চুরির দায় মেটাতেই এই পথ বেছে নেয় আজাদ-জসীম জুটি।
এখানেই শেষ নয়, সরকারি অর্থ লুটের পাশাপাশি জসীম-অপু যেসব অবৈধ ভাতা এবং বিল নিচ্ছেন সেগুলোর অন্যতম হলো বাজেট ম্যানেজমেন্ট কমিটির নামে প্রতিবছরে এক মাসের মূল বেতন। এই খাতে তারা প্রত্যেকে লুট করেছেন ৭ লাখ টাকা। মাসিক বেআইনি গাড়ি ভাতা ২৮ হাজার টাকা, একই সঙ্গে স্থানীয় যাতায়াত ভাতা ১০ হাজার টাকা। মোবাইল ফোন বাবদ ৫০০ টাকা, ইন্টারনেট বিল ১০০০ টাকা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় তারা প্রতি মাসে পত্রিকা বিল বাবদ নিচ্ছেন ৪৫০০ টাকা, যার মধ্যে বিদেশি বেশকিছু ইংরেজি দৈনিক এবং ম্যাগাজিন রয়েছে। অথচ বাসসের সিনিয়র সাংবাদিকরা পাচ্ছেন মাত্র ৩টি দেশীয় পত্রিকার বিল।
সূত্র জানায়, হাসিনা আমলের ৩৮ কোটি টাকার অডিও ভিজ্যুয়াল প্রকল্পের প্রথম পর্বে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্টুডিওটি এক বছরের মাথায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বে চলমান ভবন সংস্কার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ভেন্স ইনকরপোরেশনকে’ পুরো ৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার আগেই। অনুমোদিত ডিজাইন বাদ দিয়েই চলছে কাজ। পুরাতন গ্রিল রং করে ব্যবহার করা হচ্ছে, পুরাতন টাইলসের ওপর নতুন টাইলস লাগানো হচ্ছে। পুরাতন আস্তরণ সম্পূর্ণ অপসারণ না করেই দেওয়া হচ্ছে নতুন আস্তরণের প্রলেপ। এখানে বিন্দুমাত্র জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। প্রকল্প খাতে লুটপাটের চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদ, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্তকর্তা পরস্পর যোগসাজশে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সব ভাউচার, বিল এবং সাপোর্টিং ডকুমেন্ট পুড়িয়ে ফেলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসসের একজন সাংবাদিক জানান, হাসিনা আমলে ফ্যাসিবাদী প্রচারণার অন্যতম আস্তানা বাসসে শত শত কোটি টাকা লুট হলেও বর্তমান ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে নবনিযুক্ত এমডি মাহাবুব মোর্শেদ এ ব্যাপারে একবারেই নিস্পৃহ। বিগত এমডির অনিয়ম-দুর্নীতির নিত্যসঙ্গী প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাই বর্তমান এমডির মূল চালিকা শক্তি। তার বিগত ৭ মাসের কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিবাদের চিহ্নিত দোসররা সুরক্ষা পেয়েছে এবং স্বৈরাচারী আমলের অনিয়ম-লুটপাট নতুন মাত্রা লাভ করেছে। তার স্বেচ্ছাচারী, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক আচরণে অন্তর্বর্তী সরকারের সুনাম দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি বাসস চাকরিবিধি এবং পরিচালনা বোর্ডের এখতিয়ার লঙ্ঘন করে নিচ্ছেন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বাসস এমডি মাহবুব মোর্শেদ স্বৈরাচার আমলের দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ জন্য তিনি প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন। উদ্দেশ্য সাধনে তিনি ১৮ মার্চ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। অভিনব এই কমিটির নাম, ‘স্পর্শকাতর দাপ্তরিক নথি ও তথ্য পাচার প্রতিরোধ বিষয়ক তদন্ত কমিটি’। এটি গঠিত হয় যুগান্তর পত্রিকায় ‘অভ্যুত্থানের উলটো স্রোতে বাসস’ শীর্ষক একটি উপসম্পাদকীয় ছাপার ঠিক পরের দিন। উপসম্পাদকীয়টিতে হাসিনা আমলে বাসসে সংঘটিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের এক খণ্ড চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।