
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৯ পিএম
আধিপত্য নিয়ে আ.লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ
জাজিরায় পালটাপালটি ৫০০ হাতবোমার বিস্ফোরণ
নারীসহ আহত ২০ * বাড়িঘর ভাঙচুর, এলাকা পুরুষশূন্য

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকরা ৫ শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকাসহ বিভিন্ন মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
জানা গেছে, বিলাশপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস ব্যাপারী এবং পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে এলাকায় একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রাণহানিসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা বিচারাধীনও রয়েছে।
ঈদ সামনে রেখে উভয় পক্ষের সমর্থকরা বাড়ি আসে। বাড়ি এসেই তারা একে অপরকে কটাক্ষ করে কথা বলতে শুরু করে। ঈদের দিন রাতে কুদ্দুস ব্যাপারীর সমর্থকরা এলাকায় বোমা ফাটিয়ে শক্তির জানান দেয়। এ খবর পেয়ে জলিল মাদবরের সমর্থকরাও তাদের শক্তি জাহির করতে এলাকায় বোমা ফাটায়। এর জেরে শনিবার সকালে জলিল সমর্থকরা ব্যাপারীকান্দি থেকে শুরু করে মাদবরকান্দি ও মুন্সিকান্দি পর্যন্ত ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় হাতবোমা ফাটিয়ে পদ্মাপারে চলে যায়। সেখানে আধা ঘণ্টা দুই পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে কুদ্দুস সমর্থকদের বোমা শেষ হয়ে গেলে তারা পিছু হটে। তখন জলিল সমর্থকরা তাদের ধাওয়া করে পদ্মা নদীর ওপারে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল ও ৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের জাজিরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বোমার শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঈদে বেড়াতে আসা লোকজন আটকা পড়েন। পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। র্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কোনো অস্ত্র বা বোমাও উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। সংঘর্ষের পর জলিল মাদবর ও কুদ্দুস ব্যাপারী মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন।
অন্যদিকে দুপক্ষের সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে অনেকের হাতে বালতি ও অনেককে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা গেছে। বালতি থেকে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পরে সেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করছে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এত বোমা এলো কোত্থেকে : সংঘর্ষে জড়ানো ব্যক্তিরা এত হাতবোমা কোথায় পেলেন-সচেতন মহলে এমন প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) নজরুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার মানুষ দেশীয় নানা অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। এই বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান তারা কীভাবে হাতে পেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন অভিযান চালিয়ে সেসব উদ্ধার করা হবে।