
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১০ এএম

কিশোরগঞ্জ ব্যুরো ও দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ এবং কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে দেশের স্মরণকালের বৃহৎ দুটি ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোর-এ শহীদ ময়দানে এবারও বিপুলসংখ্যক মুসল্লির সমাগম ঘটে। আয়োজকরা মুসল্লির সংখ্যা উল্লেখ না করলেও বিশাল এ জামাতে একসঙ্গে লাখো মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে দেশি-বিদেশি সাত লাখেরও বেশি মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা।
গোর-এ শহীদ ময়দান : বিশাল এ ঈদগাহে সোমবার খুব সকাল থেকেই সমবেত হতে শুরু করেন মুসল্লিরা। সকাল ৯টায় শুরু হয় জামাত। ইমামতি করেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান। নামাজ শেষে দেশের অগ্রগতি, মুসলিম উম্মাহর শান্তি, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণের শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। বৃহৎ এই ঈদের জামাতে দিনাজপুর ও আশপাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নামাজ আদায় করতে আসেন মুসল্লিরা। অনেক দূর থেকে এসে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি তারা। এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বরগুনা থেকে আসা মুসল্লি ইদ্রিস আলী জানান, শুনেছি এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ জামাত। তাই এই জামাতে এসেছি নামাজ আদায় করতে। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, এতবড় জামাতে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পেরে।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান জুয়েল বলেন, এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ এই জামাতে এসেছে নামাজ আদায় করতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক একরামুল হক আবির বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলো। আলাদাভাবে বাস বা ট্রেনের ব্যবস্থা করা না হলেও মুসল্লিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছেন। তিনি বলেন, এবার জামাতটি অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বাইরে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। আর এজন্য অতীতের চেয়ে এবার অনেক বেশি মুসল্লির সমাগম ঘটেছে বলে জানান তিনি।
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান : পুলিশ, র ্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকের পুলিশের পাঁচ স্তরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থায় এ জামাতে দেশি-বিদেশি সাত লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন আসা-যাওয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। রেওয়াজ অনুযায়ী বন্দুকের চারটি গুলি ছুড়ে জামাতের প্রস্তুতির জানান দেওয়া হয় এবং সর্বশেষ পঞ্চম গুলি ছোড়ার মাধ্যমে শুরু হয় এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত। এবার ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। ইমামতি করেন মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। নামাজ শেষে জাতীয় অগ্রগতি, সংহতি, কল্যাণ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ময়দানের বিভিন্ন প্রবেশপথে ছিল আর্চারি, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। নামাজ শুরুর আগে পুরো ময়দান তল্লাশি করা হয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। ময়দানে প্রবেশকালে মুসল্লিদের জায়নামাজ, ঘড়ি ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কিছু বহন করতে দেওয়া হয়নি।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম, প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলী, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তি এই ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।