
প্রিন্ট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফুরিয়ে গেল রমজান। শেষ হলো রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস। সারা দিন রোজা রেখে সারারাত তেলাওয়াত আর তাহাজ্জুদের সুখস্মৃতিতে মুমিনের চোখ আজ অশ্রুসজল হয়ে উঠবে। ইতিকাফে নিমগ্ন সায়েমরা আজ ফিরে যাবেন নিজ নিজ ঘরে। দীর্ঘ আরেকটি বছরের অপেক্ষা। আবার কবে ফিরে আসবে কুরআন নাজিলের মাস রমজান। কুরআনের ঐশী সুরে হৃদয় শীতল হবে। রমজান এলে মুমিনের প্রাণ জেগে ওঠে। আত্মার প্রশান্তি লাভ করে। সিয়াম ও কুরআনের নুরে সুরভিত হয় গোটা দেশ। সৌভাগ্যবান তারা, যারা রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাকওয়ার রঙে নিজে রঙিন করে তুলেছেন। আমরা যারা রহমতের এ সুবর্ণ সুযোগ হেলায় কাটিয়েছি-আমাদের জন্য আফসোস। কিন্তু নিরাশার কিছু নেই। আল্লাহ বলেছেন, ‘লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ-তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ হয়ো না।’ ইমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করার দৃঢ় শপথ নিন। তাওবা করুন। মাফ চান মাবুদের দরবারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করবেন।
আজ সন্ধ্যায় চাঁদ উঠলে মুবারক মাহে রমজানের বিদায় ঘটবে। এর পরই আসবে মহা-পুরস্কারপ্রাপ্তির দিন ঈদুল ফিতর। আগামীকাল সকাল হবে ঈদের সকাল। হিজরি সালের শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখকেই বলা হয় ঈদুল ফিতর। ঈদ আরবি শব্দ। এর অর্থ বারবার প্রত্যাবর্তন করা। যেহেতু প্রতিবছর দুবার নিয়মিত এ উৎসবটি ঘুরেফিরে আসে তাই একে বলা হয় ঈদ। কোনো কোনো মুহাদ্দিসের অভিমত, এই দিনে আল্লাহর বিশেষ রহমত বান্দার প্রতি প্রত্যাবর্তন করে বা আল্লাহ বান্দার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান, তাই এর নামকরণ হয়েছে ঈদ। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ রোজার অবসান। এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় ক্ষুধা-তৃষ্ণার পর এ দিনটিতে তৃপ্তিপূর্ণ আহারের আনন্দ লাভ হয় বলে একে বলা হয় ঈদুল ফিতরের দিন। আর ঈদের এ আনন্দময় আয়োজন যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য এ দিনে ফিতরা বা সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে। কবির কণ্ঠে বলি-
জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
ঈদের মূল স্প্রিট হচ্ছে গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের যে প্রশিক্ষণ নিয়েছে সায়েম, তা বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন হলো ঈদুল ফিতর। আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির নূরে সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে আলোকিত করার দিন ঈদ। আমির-ফকির আর উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কাতারে শামিল হওয়ার ডাক দিতে এসেছে ঈদ। এ ডাকে যারা সাড়া দেবে তারাই সফল সায়েম। তাকওয়ার মানুষ। মুত্তাকি।
হে আল্লাহ! মুবারক এ মাসে যেভাবে তোমার ইবাদত-বন্দেগি করার ছিল আমরা তা করতে পারিনি। তাকওয়া অর্জনের যে সুযোগ তুমি আমাদের দিয়েছিলে আমরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। তোমার রহমতের অসিলায় আমাদের সিয়ামকে কবুল করে নাও! জীবনের বাকিটা পথ আমাদের তাকওয়ার সঙ্গে চলার তাওফিক দিও মাবুদ। আমিন!!!
লেখক : খতিব, পির ইয়ামেনী জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা