
প্রিন্ট: ৩১ মার্চ ২০২৫, ১২:১০ পিএম
কখনোই জেতেনি ধানের শীষ
বরিশালের ৫ আসনে লড়াকু প্রার্থীর খোঁজে বিএনপি
জয় দূরে থাক, জামানত হারানোর ইতিহাসও রয়েছে কোনো কোনো আসনে * দুইটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে

আরও পড়ুন
সাগরপারের দুই উপজেলা কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৪ নির্বাচনি এলাকা। যেখানে নিরপেক্ষ ভোটে কখনোই জিততে পারেনি বিএনপি। কেবল এই একটি নয়, বরিশাল অঞ্চলে থাকা আরও ৪টি আসনে একই অবস্থা দলটির। জয় দূরে থাক, জামানত হারানোর ইতিহাসও রয়েছে এর কোনো কোনো আসনে। আগামী নির্বাচন ঘিরে তাই আলোচনায় এখন এসব নির্বাচনি এলাকা। নেতাকর্মীদের মতে, ‘ক্লিন ইমেজের শক্তিশালী প্রার্থী না হলে এবারও মুশকিল হবে এসব আসনে ভোটে জেতা। সময়ের সঙ্গে খাপ খেয়ে যারা এগোবে তারাই পারবে জয় দলকে এনে দিতে।’
পিরোজপুর-১ (সদর-ইন্দুরকানী-নাজিরপুর) : ’৯১-এ এখানে দলের মনোনয়ন পান মরহুম গাজী নুরুজ্জামান বাবুল। প্রায় ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের কাছে হারেন তিনি। ’৯৬-র নির্বাচনেও তাকেই মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এবার চতুর্থ স্থানে থেকে জামানাত হারান বাবুল। এরপর আর এখানে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি। ২০০১ ও ২০০৮-এর নির্বাচনে জোটসঙ্গী জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেয় তারা। নির্বাচন করে পরপর দুবার এমপি হন মরহুম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আগামী নির্বাচনে এই আসনে সাঈদীর বড় ছেলে মাসুদ সাঈদীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। ইতোমধ্যে প্রচারণায়ও নেমে পড়েছেন তিনি। মাসুদ সাঈদীর মতো শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন বিএনপির ৩ নেতা। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন এবং নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান। নেতাকর্মীদের মতে, এখনই এখানে মনোনয়নের সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া উচিত বিএনপির। সেক্ষেত্রে সহজ হবে মাঠ তৈরি করা। নয়তো কঠিন হবে মাসুদ সাঈদীর মতো শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয় পাওয়া।
পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠি) : নির্বাচনে ভরাডুবি বলতে যা বোঝায় তার সব ইতিহাসই বিএনপির আছে এই নির্বাচনি এলাকায়। ’৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৫টি নির্বাচনের (উপ-নির্বাচনসহ) ৩টিতেই এখানে জামানত হারায় ধানের শীষ। জামানত হারানো ওই ৩ নেতা হলেন মরহুম নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, বিএইচ হারুন ও আবুল ওয়াহাব হাওলাদার। ২০০১-এর নির্বাচনে ১৭ হাজার এবং ২০০৮-এর নির্বাচনে ৬৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারেন মঞ্জুর। ১৯৯৬ সালে হারান জামানত। একই অবস্থা ছিল বিএইচ হারুন ও আব্দুল ওয়াহাবের। ভোটযুদ্ধে অজেয় হিসাবে পরিচিত জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এই এলাকায় এবার মরহুম সাঈদীর মেজো ছেলে শামিম সাঈদীকে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শক্ত পাল্লা শামিমকে আটকাতে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইছেন কিংবদন্তি সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাইয়ের ছেলে ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শিল্পপতি মাহমুদ হোসেন, মরহুম বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে ভাণ্ডারিয়া বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর ও দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম লাবু। নেতাকর্মীদের মতে, পারিবারিক পরিচিতি ও জনসম্পৃক্ততায় এরই মধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন মাহমুদ। বাবা মরহুম মঞ্জুরের পথ ধরে সোহেলও আছেন মাঠে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া’র ঐতিহ্যে ভর করে ভোটে জিততেন মঞ্জু। এবার তো বোধহয় তিনি আর নির্বাচন করতে পারবেন না। তাছাড়া পিরোজপুর সদর আসনে কখনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। দুটি আসনেই এবার শক্ত অবস্থান আমাদের। ইনশাআল্লাহ একটি আসনেও হারবে না ধানের শীষ।’
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) : ’৯১-পরবর্তী ৪টি নির্বাচনেই এখানে জিতেছে আওয়ামী লীগ। কেবল জেতা নয়, ধানের শীষকে বলতে গেলে গোহারা হারিয়েছে নৌকা। ২০০৮-এ এখানে গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তখন এলাকায় অনেকটাই অপরিচিত ছিলেন তিনি। রাজনীতিতেও ছিলেন না সক্রিয়। তখনকার প্রায় অপরিচিত রনির কাছেও ৫৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারে বিএনপি। নদী-সমুদ্রে ঘেরা এই এলাকায় রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভোটব্যাংক। যে কারণে ভোটে সুবিধা করতে পারে না বিএনপিসহ কোনো দল। তবে এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে তার। উলটাপালটা কিছু না হলে জিতবেন মামুন, এমনই আশা স্থানীয় বিএনপির।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) : সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ঘেঁষে থাকা এই নির্বাচনি এলাকাতেও কখনো জয় পায়নি বিএনপি। নিম্নে ৯ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এখানে নৌকার কাছে হারে ধানের শীষ। আওয়ামী লীগের ভোটের ঘাঁটি বলতে যা বোঝায় তার অন্যতম এটি। যদিও সেই ঘাঁটির অনেকটাই এখন দখলের দাবি বিএনপির। দলের নেতাকর্মীদের মতে, ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতনে ভেঙেছে নৌকার দুর্গ। তাছাড়া গত ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি সাধারণ মানুষ। তার ওপর রয়েছে নতুন ভোটারদের ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ। সবমিলিয়ে এখন বিএনপিই এগিয়ে। এখানে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান এবং কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মজিবর রহমান টোটন বলেন, ‘এটা ঠিক যে, এই দুই নির্বাচনি এলাকায় সাংগঠনিক শক্তির প্রশ্নে পিছিয়ে ছিলাম আমরা। তবে সেই পরিস্থিতি আর নেই। হাসান মামুন ও মোশাররফকে ঘিরে উজ্জীবিত পটুয়াখালী-৩ ও ৪ নির্বাচনি এলাকা। ইনশাআল্লাহ আগামী নির্বাচনে দুটি আসনেই জিতবে বিএনপি।’
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) : ২০০১-এ এখানে নৌকা হারিয়ে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মরহুম দেলোয়ার হোসেন। আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী প্রার্থীর এই লড়াইয়ে বিএনপির জয় আশা করা হলেও জামানত হারান ধানের শীষের প্রার্থী। এই একটি হিসাব থেকেই বোঝা যায় কী করুণ অবস্থা এখানে ধানের শীষের। এমন বাস্তবতায় এবার এখানে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন বিএনপির সহ বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ জামান মামুন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজভিউল কবির। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম শফিকুজ্জামান মাহফুজ বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচনে ভুলের কারণেই এখানে বারবার হারছে বিএনপি। আমাদের দরকার শক্তিশালী এবং লড়াকু প্রার্থী। সবদিক বিবেচনা করে যদি সঠিক মনোনয়ন দেওয়া হয় তবে আর কখনোই হারবে না ধানের শীষ।’