
প্রিন্ট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম

ময়মনসিংহ ব্যুরো ও যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
এগারো বছরের রাব্বির ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে আরেক কিশোর। ব্লেড ও চাকু দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়েছে তার সারা শরীরে। পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে সে এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বেডে। সোমবার মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের আকুয়া দারুস সালাম মসজিদ এলাকায়। আটকে রেখে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতবিক্ষত করা হয়। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢামেক হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০৩ নম্বর বেডে বসে আছে রাব্বি। তার মাথা, বুক ও হাতে ব্যান্ডেজ মোড়ানো। মুখে দগদগ করছে ক্ষতচিহ্ন। পাশেই বসে আছেন তার খালা মমতা বেগম।
তিনি জানান, রাব্বিকে ফুসলিয়ে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে জখম করে বস্তায় ভরা হয়। আকুয়া দারুস সালাম মসজিদ এলাকায় নিয়ে তার চোখ বাঁধে রাকিব নামের এক কিশোর। ব্লেড দিয়ে তার বুক, পিঠ, মাথা ও ঠোঁট কেটে দেয় সে। একপর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে রাব্বি একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ওই বাড়ির সদস্যরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাব্বিকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে রাব্বির ওপর অমানবিক নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। স্বজনরা জানান, রাব্বিকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে ওই কিশোরকে সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বৃহস্পতিবার বিকালে ময়মনসিংহের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে ওই এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা, শিশু রাব্বির ওপর নির্যাতনকারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
রাব্বির রিকশাচালক নানা নায়েব আলী অভিযোগ করেন, বাচ্চাদের খেলাধুলা নিয়ে পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আমার ছোট মেয়ে মমতার। এ নিয়ে ওই ভাড়াটিয়ার ছেলে রতন (১৯) রাব্বিকে মারার হুমকি দেয়। তার ধারণা, রতন ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার রাকিবসহ তিনজন মিলে তার নাতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এমন নির্মমভাবে সারা শরীর ব্লেড ও চাকু দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে।
রাব্বি নগরীর সানকিপাড়া বাজারে যে মুরগির দোকানে কাজ করত, পাশেই একই কাজ করত গ্রেফতার হওয়া কিশোর রাকিব। বাজারের লোকজন জানায়, মাস দুয়েক আগে রাকিবের সঙ্গে রাব্বির ঝগড়া হয়। সে সময় রাব্বিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় রাকিব।
কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান জানান, শিশু রাব্বির ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রাতেই কিশোর রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার কিশোর রাকিব একাই এই নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে। আদালতের নির্দেশে ওই কিশোরকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।