অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ইফতারে তারেক রহমান
বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হচ্ছে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আবারও ওয়ান-ইলেভেনের মতো বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, যদি একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, দেশের অধিকাংশ মানুষের ভোটের সমর্থন বিএনপির পাওয়া যত বেশি উজ্জ্বল হয়েছে, ততবেশি দেখেছেন বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হচ্ছে। সোমবার সকালেও দেশের কয়েকটি পত্রিকায় কিছু ঘটনা দেখলাম। দেখার পর কেন্দ্রীয় অফিসে যখন খবর দিলাম, তারা যাচাই করে আমাকে জানাল ঘটনা ঘটেছে এক রকম, পত্রিকার পাতায় উপস্থাপন করা হয়েছে আরেক রকমভাবে। একটি মহল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তাদের অবস্থান থেকে যেসব মিডিয়া হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তাদের মাধ্যমে ঠিক ওয়ান-ইলেভেনের সময় যেভাবে বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন করা হয়েছিল, একইভাবে কোনো একটি প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা করছে।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সম্মানে এক ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এ অভিযোগ করেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর তত্ত্বাবধানে এ আয়োজনে ৩১ দফার ওপরে একটি ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের জন্য একটি জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মতপার্থক্য ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী দিনের সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি। দেশের উন্নয়নে সব সময় বিএনপি ভূমিকা রেখেছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, সংসদের মাধ্যমে জবাবদিহিতার সরকারই প্রকৃত উন্নয়ন করতে পারবে। স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিএনপিই আড়াই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে। এগুলো তরুণ ভোটারকে বোঝাতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, যে ষড়যন্ত্র ছিল দেশের জনগণ, গণতন্ত্র ও দেশের বিরুদ্ধে-সেই ষড়যন্ত্র আবারও শুরু হয়েছে। এটি শুধু কথার কথা নয়। এটি শুধু বক্তব্য রাখার জন্য বলছি না, আমরা বা আমাদের বক্তব্যের প্রতি মানুষ যাতে আকর্ষণ বোধ করে বা আকর্ষিত হয় তার জন্য বলছি না। আসলেও এ রকম একটি ষড়যন্ত্র ধীরে ধীরে পাক খাচ্ছে, গড়ে উঠছে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদী শক্তি সবকিছুর বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।
এ ব্যাপারে অ্যাক্টিভিস্টদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনারা যারা অ্যাক্টিভিস্ট আছেন নিশ্চয়ই তা অনুধাবন করছেন। আমার একান্ত আহ্বান থাকবে, অনুরোধ থাকবে আপনাদের কাছে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু আপনারা এই মুহূর্তে যে প্রেক্ষাপট বা যে পরিস্থিতিতে কাজ শুরু করেছেন বিএনপি তার সব অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সহযোগিতা যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন বলে মনে করে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন, আগামী দিনে বিএনপি কী করতে চায় যুক্তিতর্ক দিয়ে তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারবেন। জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারবেন।
জনগণ যে নির্বাচনে ভোট দিয়ে তার মতামত দিতে পারবে সেই নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি বলেও জানান তারেক রহমান। স্বৈরাচারের আমল থেকে শুরু করে এই মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোনো সরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একজন বক্তা নতুন ভোটের কথা বলেছেন, তাদের কী চিন্তাভাবনা। এগুলো এখনো আমরা সঠিক জানি না। আমি তো মনে করি, নতুন যারা ভোটার তাদের কাছে যুক্তি-তর্ক সবকিছু দিয়ে আপনারা (অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট) তাদের মোটিভেট করতে সক্ষম বলে বিশ্বাস করি।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যখন থেকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্রের ঘাড়ে স্বৈরাচারে চেপে বসেছিল, তখন থেকে আপনারা সংগঠিত হয়ে জনগণ ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের কথা তুলে ধরেছেন। যে যুদ্ধ আপনারা করেছেন, যার কারণে আপনাদেরও বিভিন্ন অত্যাচার ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তারা এসেছেন সেজন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান। বিগত আন্দোলনে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার প্রশংসার পাশাপাশি নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলায়ও তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারেক রহমান।
সংস্কার বলতে বিএনপিই করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দেখুন দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশে সংস্কার বলতে অথবা মানুষের অথবা দেশের জন্য ভালো কিছু করলে সেটা স্বাস্থ্য খাত বলুন, শিক্ষা খাত বলুন, কৃষি খাত বলুন, খাদ্য উৎপাদন বলুন, শিল্প খাত বলুন, বেকার কর্মসংস্থান বলুন, বিদেশে কর্মসংস্থান বলুন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ বলুন। আমরা যেভাবে যেটি বলি না কেন, প্রত্যেকটির ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার ডাটা দিয়ে প্রমাণ করে দিয়ে দেওয়া যাবে যে, বিএনপি যতবার জনগণের সমর্থনে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে এসব প্রত্যেকটি বিষয়ে বিএনপিই সবচাইতে বেশি অবদান রেখেছে, রাখতে সক্ষম হয়েছে। হতে পারে আরও কিছু করার হয়তো আমাদের ছিল, আমরা করতে পারিনি। সেটি আমাদের সীমাবদ্ধতা। এই মুহূর্ত পর্যন্ত যে সেক্টরগুলোর উন্নতি হলে জনগণের ভাগ্যের উন্নতি হয়, দেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, দেশকে এগিয়ে যাওয়া বলে এ রকম প্রত্যেকটি কাজ সবচেয়ে বেশি করেছে বিএনপি। যুক্তি-তর্ক দিয়ে এগুলো আমরা উপস্থাপন করে দিতে পারি।
দুর্নীতি নির্মূলে স্বাধীন দুর্নীতি কমিশন গঠনসহ বিএনপির কয়েকটি পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ইনটেনশন ভালো বলেই আজ থেকে আড়াই বছর আগে আমরা ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি।
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে আমাদের নতুন করে সেই যুদ্ধ করতে হবে। ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে আমাদের যোদ্ধারা পারবেন এই যুদ্ধে জয়ী হতে এই বিশ্বাস আমার আছে।
জাতীয়তাবাদী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদি আমিন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে ওয়াহিদ উন নবী, রেজাউনুল হক শোভন, নাসিফ ওয়াহিদ ফয়জাল, মোস্তফা কামাল পলাশ, ইয়াসীন মাহমুদ প্রমুখ।