
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৩ এএম

আব্দুর রাজ্জাক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি একজন সশস্ত্র সৈনিক হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে ৪টি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার লক্ষ্মীপুর যুদ্ধ (লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশ), ঈশ্বরগঞ্জে উচাখিলা যুদ্ধ, ফুলবাড়ীয়ার রাঙামাটি যুদ্ধ এবং কংস নদীতে (ফকিরের বাজার) যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। আমাদের অনেক সহযোদ্ধা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ময়মনসিংহ শহর ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল পাক সেনাদের দখলে চলে যাওয়ার পর আমরা শহর ছেড়ে অনেকেই চলে যাই। মধুপুর এবং ভৈরব ব্রিজে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আর্মি, বিডিআর, পুলিশ এবং আনসারদের নিয়ে আমি একটি বাহিনী তৈরি করি।
আমাদের অস্ত্রের মধ্যে ছিল একটি ব্রিটিশ এলএমজি, ১৪টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, বেশ কিছু গ্রেনেড, ২টি এসএমজি, একটি বাটাগান ও একটি রিভলভার। বাটাগান ও রিভলভারটি আমিই বহন করতাম। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ১০-১২টি একনলা, দোনলা বন্দুক আমাদের কাছে ছিল। তখনও ভারতে ট্রেনিং শুরু হয়নি। বেশিরভাগ ফুলবাড়ীয়ার যোদ্ধাদের নিয়ে আমি ফুলবাড়ীয়ার গভীর বনাঞ্চলে আশ্রয় নেই।
গোলাবারুদ নিতে ভালুকায় গিয়ে থানায় হামলা করার প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ কোম্পানির দুর্ধর্ষ যোদ্ধারা রাজি হয় এবং ৭১ সালের ২ মে ভালুকা থানায় হামলা করে থানার সব রাইফেল-গুলিসহ থানার পুলিশদের ধরে মল্লিকবাড়ি বাজারে নিয়ে আসি। এ যুদ্ধে তৎকালীন আফছার মেম্বার পরবর্তীতে মেজর আফছার ছিলেন। মল্লিকবাড়ি থেকে এ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ফুলবাড়ীয়ার রাঙামাটিতে আমরা চলে আসি। পরে মেজর আফছার একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। সেনাবাহিনীর বিধি মোতাবেক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা প্লাটুন ও সেকশনে যার যার দায়িত্ব পালন করেন।
কোম্পানির মধ্য থেকে ৩৩ জনের একটি ‘সুইসাইডাল’ টিম গঠন করে লক্ষ্মীপুরে অ্যামবুশ করি। এ কারণে এ যুদ্ধের নাম লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশ নামে পরিচিত। যা সেনাবাহিনীর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। পাক বাহিনীর গাড়ি অ্যামবুশের এরিয়ার মধ্যে আসা মাত্রই আমিসহ ৩৩ জন যোদ্ধা ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে সামরিক কায়দায় এলএমজি, এসএমজি, গ্রেনেড ও রাইফেলের গুলিতে পাক বাহিনীর গাড়ি ধ্বংস করি। পাক বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে দেওখলা থেকে দশমাইল পর্যন্ত ৭০০ বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলে। ময়মনসিংহের দক্ষিণে এটাই ছিল প্রথম যুদ্ধ। যা তৎসময়ে বিবিসি থেকে প্রচারিত হয়েছিল।
কোম্পানির দুর্ধর্ষ সৈনিক এলএমজি চালক দাপুনিয়ার খোরশেদ নদীর ওপারের পাটখেত থেকে ব্রিটিশ এলএমজি দিয়ে ৯ ম্যাগাজিন গুলি টানা চালিয়ে মাঝ নদী থেকে আমাদের উদ্ধার করে। যুদ্ধের স্মৃতি আমাকে এখনো কাতর করে এবং সাহস জোগায়। যুদ্ধের সময়কালীন আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী, দৃঢ়চেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন প্রজন্ম জানতে পারলে তাদের মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।