চট্টগ্রামে সরগরম ‘ইফতার রাজনীতি’

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: যুগান্তর
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও একে সামনে রেখে চট্টগ্রামে চলছে ‘ইফতার রাজনীতি’। ১৬ বছর ব্যাকপুটে থাকা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো এবার ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপিসহ ছোট দলগুলোও পিছিয়ে নেই। দলীয়ভাবে ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা ব্যক্তিগতভাবেও নিজ এলাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছেন। অন্য কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার আয়োজন করলে সেখানেও আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে হাজিরা দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হিসাবে প্রার্থী হতে চান বা দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চান-এমন নেতাদেরই ইফতার আয়োজনে বেশ সরব দেখা যাচ্ছে। শুধু চট্টগ্রাম মহানগরী নয়; জেলার বিভিন্ন উপজেলা তথা সংসদীয় আসনেও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের ইফতার আয়োজন বেশ লক্ষণীয়। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূলে ইফতার আয়োজন করছে বিএনপি। ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ছোট ছোট ইফতার মাহফিলে যাচ্ছেন বড় নেতারা। নগরীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতার আয়োজনের নির্দেশনা রয়েছে দলের হাই কমান্ডের। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর জামায়াতের নেতারাও নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ইফতার আয়োজনে সরব রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে নানা দমন-পীড়ন, নির্যাতন, গ্রেফতার আতঙ্কে চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াত মাঠে সক্রিয় থাকতে পারেনি। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে আসতে পারেনি। তবে বর্তমানে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, না হয় আত্মগোপনে আছেন। আবার শত শত নেতাকর্মী অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার হয়ে আছেন জেলে। কোথাও কোনো ধরনের তৎপরতা নেই এই সংগঠনের।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয় নগরীতে। সেখানে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের একাধিক আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাব-চট্টগ্রামের ইফতার মাহফিলেও অংশ নেন তিনি। আমির খসরুর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সেলিম যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে শত ব্যস্ততার মাঝেও স্যার চট্টগ্রামে দলীয় বা দলের বাইরে বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজিত বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন।
রোজার শুরু থেকে বলতে গেলে চট্টগ্রামেই পড়ে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি হাটহাজারী থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি হাটহাজারীতে বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দিচ্ছেন প্রায় প্রতিদিন। শুক্রবার উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে যোগ দেন। আগের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণসভা ও ইফতার মাহফিলেও যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিও পড়েছে হাটহাজারীতে। পাঁচলাইশ থানা বিএনপির সহসভাপতি ও ব্যারিস্টার মীর হেলালের মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা আসিফ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূলে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন মীর হেলাল। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন ইফতার আয়োজনে যাচ্ছেন তিনি।
সীতাকুণ্ডে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী শুক্রবার সলিমপুরে একটি ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। তিনি এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। ৭ বছর জেলে থেকে ৫ আগস্টের পর মুক্তি পেয়ে পুনরায় মাঠে সক্রিয় হন এই বিএনপি নেতা।
পটিয়া থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম তৃতীয় রমজান থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়নে ইফতার আয়োজনে অতিথি হয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।
আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস কর্ণফুলীর ৫ ইউনিয়নের লোকজনের জন্য ইতোমধ্যে ইফতার আয়োজন করেন নিজ উদ্যোগে। প্রয়াত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তার বাড়ি রাউজান হলেও তিনি রাঙ্গুনিয়া থেকেই মনোনয়ন চাইবেন। রাঙ্গুনিয়ার কাদের নগর গোডাউন এলাকায় স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দেন তিনি। রাউজানে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে ইফতার আয়োজন করছেন। কোনো কোনোটিতে তিনি নিজেও উপস্থিত হচ্ছেন।
চন্দনাইশে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ওমর ফারুক সানি দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। এ আসনে এলডিপি থেকে অলির পরিবর্তে সানি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর চারটি এবং জেলার ১৪টিসহ ১৬টি আসনেই বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন।
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার আয়োজনের মধ্যদিয়ে মাঠের উপস্থিতি জানান দেয়। ইতোমধ্যে এই দল চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের জন্য তাদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। সাতকানিয়া আসনে নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়া জামায়াত নেতারাও ইফতার আয়োজনে উপস্থিত হয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, চট্টগ্রাম মহানগরের পক্ষ থেকে আজ রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীদের সম্মানে হোটেল আগ্রাবাদ ইছামতি হলে ইফতার অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও স্থানীয় নেতারা।