
প্রিন্ট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম

মাহবুব পলাশ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: যুগান্তর
চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা মীরসরাই ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জনপদে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) অবস্থিত। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১ আগামীর নতুন বাংলাদেশের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন হিসাবে বিবেচিত। এই আসনটিতে বিএনপির বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। তবে বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় জনগণ ভোট দিতে পারেনি।
৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ায় এখানে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। নির্বাচনে আসন না পেলেও সাম্প্রতিক সময় ভোটের বাজারে সমর্থন বাড়ছে জামায়াতের।
বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নির্বাচনে এখানে বিএনপি জয়ী হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এক সময় এই আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এখানে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় আসছে।
বিগত সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে এখান থেকে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বর্তমান উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন। যদিও তখনকার প্রেক্ষাপটে তিনি মাঠে দাঁড়াতেও পারেননি। এবার তিনি প্রার্থী হিসাবে মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি থেকে আরও প্রার্থীর মধ্যে আছেন উত্তর জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন। তিনি মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিকে সচল রাখাসহ ত্যাগী ও দুঃসময়ের কান্ডারি হিসাবে খ্যাত। এছাড়া উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম চৌধুরীও বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা, হুলিয়া থেকে শুরু করে সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছেন।
মীরসরাইয়ে দলের সাংগঠনিক পর্যায়ের বাইরের ব্যবসায়ীদেরও মনোনয়ন পাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। ২০০১ সালে এখান থেকে ক্লিফটন গ্রুপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তার ছোট ভাই এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন-এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন এ বিষয়ে বলেন, আমাকে গত সংসদ নির্বাচনে মাঠে কোনো প্রচারণা চালাতে দেয়নি, এমনকি গুম করে ফেলেছিল। ৫০টির উপরে মামলার শিকার হয়েছি। সহস্র প্রতিকূলতায়ও মাঠে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তবে এখন ভোটের অনুকূল পরিবেশে আশা করছি বিপুল ভোটে ধানের শীষ বিজয়ী হবে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী এই আসনে দলের ঢাকা মহানগর শূরা সদস্য এবং সুপ্রিমকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সাইফুর রহমান বলেন, আমি চেষ্টা করছি আমার উপজেলার প্রতিটি মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকার। দল যদি এই আসন থেকে আমাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি জনগণের সেবা করতে সদা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে তাদের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পলায়নের পর মূলত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনের চিন্তা এখনই নেই। তবে আলোচনায় রয়েছে, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসার সুযোগ পায় সেক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরিবারের বাইরে এবার দলের মনোনয়ন চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অপর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
মীরসরাই উপজেলায় জাতীয় পার্টির এক সময় বেশ সাংগঠনিক অবস্থান থাকলেও দীর্ঘদিন দলের হাল ধরার জন্য কেউ এগিয়ে না আসায় দলের অবস্থান অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এরশাদ উল্লাহ বলেন, একজন সুযোগ্য ও ভালো প্রার্থী দিলে এখানে জাতীয় পার্টি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।