অগ্নিঝরা মার্চ
মেজর জিয়ার ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই

মো. আশরাফ উদ্দিন
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পাকিস্তানিদের জুলুম, নির্যাতন আর বৈষম্য চিরতরে ঘোচানোর প্রতিজ্ঞায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানিরা রেলগাড়িতে বসার জায়গা দিত না বাঙালিদের। তিন বেলা ভাতে অভ্যস্ত বাঙালিদের তারা গমের রুটি খাওয়ার জন্য জোর-জবরদস্তি করত।
১৯৬৮ ও ৬৯ সালে গফরগাঁও ও ভালুকায় বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের ইপিআর, সেনা ক্যাম্প, রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্পসহ সাধারণ মানুষের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। অজপাড়াগাঁও থেকে ২৬ মার্চ তৎকালীন বিবিসি রেডিও থেকে আমরা এ খবর জানতে পারি। ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের ভাষণ শুনতে পাই এনইজি রেডিওতে। রেডিওর সেই ভাষণ শুনে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পরিকল্পনা করি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।
তখন ভালুকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য কেউ ছিল না। লোকমুখে জানতে পারি ভালুকা উপজেলার আফসার মেম্বার (মেজর আফসার) মল্লিকবাড়ি বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করছেন। এপ্রিলের শেষের দিকে মল্লিকবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখি আমার সহপাঠী নারায়ণ পাল ও ফজলুল বেগ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করছেন। আমিও সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত হই। সেখান থেকেই আমার মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হয়।
ভালুকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে যুদ্ধ করার মতো অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল না। ২৫ তারিখ পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় হামলা করার পর রেলে ময়মনসিংহ আসার পথে শ্রীপুরের কাওরাইদ রেলস্টেশনে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যারিকেড দেন। একদিন সেখানে আটকা থাকার পর বিমানবাহিনী আকাশপথে হামলা করে পাকিস্তানি বাহিনীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেখানে পাক বাহিনী অসংখ্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে যায়। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ভাওয়ালিয়া বাজু কুল্লব গ্রাম, বিরুনীয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে বাকশিবাড়ি এলাকা, পনাশাইল, সিডস্টোর, মেদিলা বাঘের বাজার, ডাকাতিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা ছিল আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র। অস্ত্র ও গোলাবারুদের জন্য ভালুকা থানায় দুবার হামলার পর তৃতীয়বারের হামলার সময় ভালুকা মুক্ত। ওইসব যুদ্ধে আমার সঙ্গে থাকা আব্দুল মান্নান ও মেজর আফসার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন শহিদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন এক নয়। ১৯৭১ সালে একটা দেশ স্বাধীনের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি এবং একটা স্বাধীন পতাকা ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। আর ২৪-এ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুধু একটি স্বৈরাচারী রাজনৈতিক দলের পতন হয়েছে। ১৬ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি।
কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়ে তার পতন হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন। প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন লোক সরকারি চাকরি পাননি। এইসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সরকারি চাকরি পেয়ে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার ও ব্যাংকগুলোকে দেওলিয়া করেছে।