
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর-৩ (সদর) আসনটি সব রাজনৈতিক দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জেলা সদরের আসনে দীর্ঘদিন হেভিওয়েট প্রার্থীরাই লড়েছেন। সাবেক মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের রওশন আলী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো, আলী রেজা রাজুর মতো জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন এ আসনের কাণ্ডারি। তারা কেউ বেঁচে নেই। নতুন প্রজন্মের নেতারাই হাল ধরেছেন। সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী। দলে তিনি নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। তৃণমূলের সঙ্গেও রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। নেতাকর্মীদের কাছে তিনিই এ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী। এ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আবদুল কাদের পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবেও জামায়াতকে শক্তিশালী করতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। বিএনপি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি সমমনা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সক্রিয় হয়েছে। তবে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তেমন কেউ মাঠে নেই।
সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৩ আসন গঠিত। আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৪৭ জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৪ জন, হিজড়া ভোটার ৬ জন। এ আসনে রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এজন্য সব রাজনৈতিক দলের হিসাব-সমীকরণে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে আসনটি। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের রওশন আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির তরিকুল ইসলাম, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির খালেদুর রহমান টিটো, ১৯৮৮ সালে জাসদের আবদুল হাই, ’৯১ সালে আওয়ামী লীগের রওশন আলী, ’৯৬-র ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির তরিকুল ইসলাম, ’৯৬-র ১২ জুন আওয়ামী লীগের আলী রেজা রাজু, ২০০১ সালে বিএনপির তরিকুল ইসলাম, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের খালেদুর রহমান টিটো সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বদলে গেঠে ভোটের সমীকরণ। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।
নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। নজিরবিহীন কারচুপির সেই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। কিন্তু রাজনীতির মাঠ থেকে বিন্দুমাত্র সরে যাননি অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আমলে জুলুম নির্যাতন, হামলা, মামলা উপেক্ষা করে দল সংগঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি খুলনা বিভাগের অন্য জেলায় বাস্তবায়ন না হলেও তিনি যশোরে সফল করেছেন। রাজপথে পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েছেন। নেতাকর্মীদের আগলে রেখে আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তরিকুল পরিবার। শহরের ঘোপে তাদের বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলায় বারবার কারাবরণ করেছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘১৬ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে আছি। যশোর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক মামলার আসামি হয়েছি। সাতবার কারাবরণ করেছি। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক। জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি লড়াই করছে।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বদলে গেছে রাজনৈতিক দৃশ্যপট। মাঠের রাজনীতিতে সামনের সারিতে চলে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। গত ৬ মাসে যশোর শহরের একাধিক বড় জমায়েত করে কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে পথসভা ও কর্মী সম্মেলন হয়েছে। যশোর-৩ (সদর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও ব্যবসায়ী আবদুল কাদের। এই আসনে জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা সাংগঠনিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তারা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে সাংগঠনিকভাবে আমরা ব্যাপক কাজ করছি। সম্ভাব্য প্রার্থীও সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে। আমরা মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।