Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মুঘল ঐতিহ্যের সাক্ষী বড় শরীফপুর মসজিদ

Icon

এমএ মান্নান, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মুঘল ঐতিহ্যের সাক্ষী বড় শরীফপুর মসজিদ

সংগৃহীত ছবি

কালের সাক্ষী হয়ে আছে তিন গম্বুজবিশিষ্ট বড় শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক মসজিদটি মুঘল স্থাপনার অনন্য নিদর্শন। বাইশগাঁও ইউনিয়নের বড় শরীফপুর গ্রামে মসজিদটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এখনো আগের মতোই। চারশ বছরেও এটির সৌন্দর্য একটুও নষ্ট হয়নি। প্রতিদিন তিন উপজেলার বাসিন্দারা এখানে এসে নামাজ আদায় করেন। মসজিদের পেছনে রয়েছে ২৭ বিঘা আয়তনের শান্ত জলের ‘নাটেশ্বর দীঘি’। এর পাড়ে বসে মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগ করেন আশপাশের এলাকার মানুষ।

জানা যায়, বড় শরীফপুর মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৯৪ মিটার। মসজিদের তিনটি গম্বুজে রয়েছে পদ্মফুলের নকশা। সামনের দেওয়ালে ফার্সি ভাষায় লিখিত শিলালিপিটি ঠিকমতো বুঝতে না পরলেও স্থানীয়রা জানান, শরীফপুর গ্রামে ১৬২০-১৬২৫ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন হায়াতে আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তি। প্রচলিত মতানুযায়ী, এর নির্মাতা এলাকার কোতোয়াল ছিলেন। তাই এটি কোতোয়ালি মসজিদ নামেও পরিচিত। হায়াতে আবদুল করিমের পরিচয় নিয়ে দুটি মত রয়েছে। একটি হচ্ছে, তিনি নাটেশ্বর নামের এক রাজার কর্মকর্তা ছিলেন। আরেকটি মত, তিনি সৈয়দ শাহ শরীফ বাগদাদি নামের এক দরবেশের মুরিদ ছিলেন। ১৯৫৯ সালে মসজিদটি সংরক্ষিত স্থাপনার স্বীকৃতি পায়। ১৯৬০-এর দশকে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। পরে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আরও সংস্কার করে।

মসজিদটির আকৃতি আয়তাকার : মসজিদের পূর্বদিকের অংশে তিনটি খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় দরজাটি অপেক্ষাকৃত বড়। দরজাগুলোর বিপরীতে পশ্চিম দেওয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাকি দুটি মিহরাবের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড়। মসজিদের চারকোণে চারটি বড় অষ্টভুজাকার মিনার রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় প্রবেশদ্বারের ওপরে দুটি অষ্টভুজাকার মিনার রয়েছে। তিনটি গম্বুজের মধ্যে কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড়। গম্বুজের ভেতরের অংশ পাতার নকশা শোভিত। এছাড়া বাইরের অংশে চক্রাকার নকশা রয়েছে।

মসজিদটির সীমানা : কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় হলেও মূলত ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি তিন জেলার মাঝে অবস্থিত। এর পাশেই চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা এবং দক্ষিণে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা। মসজিদের পেছনে রয়েছে ৩৫ দশমিক ২৯ একর আয়তনের সুবিশাল নাটেশ্বর দিঘি। এর মালিকানা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ ও চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার বাসিন্দাদের। দিঘির দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে রয়েছে শাহ শরীফ বোগদাদী (রহ.)-এর দরগাহ। দিঘি ও মাজারকে ঘিরে এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে বলে অভিমত স্থানীয়দের।

শরীফপুর শাহী জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সামছুদ্দোহা বলেন, ‘প্রতিদিনই অনেকে মসজিদটি দেখতে আসেন। বিশেষ করে শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে নামাজ পড়তে আসেন। আমরা চেষ্টা করি মসজিদের সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয়।’

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরী জানান, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। তারা ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনসহ সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করেন। ছয় বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদে সংস্কারকাজ করেছিল। বর্তমানে মসজিদের সৌন্দর্য রক্ষায় জরুরি কিছু সংস্কার দরকার। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করতে পারছেন না। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছেন তারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম