
প্রিন্ট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম

আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আটটিতেই শুরু হয়েছে মনোনয়নযুদ্ধ। এসব আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেন্দ্র এবং এলাকায় সমানতালে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তিনটি আসনের প্রার্থীদের এখন পর্যন্ত নির্ভার দেখা যাচ্ছে। আটটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব বিরাজ করছে। এরই মাঝে জেলার নাঙ্গলকোট, লাকসাম, দেবিদ্বার, চান্দিনা, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব বেড়েছে। এদিকে বেশির ভাগ সম্ভাব্য প্রার্থীই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশপাশের লোকজনের কাছেও ধর্না দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে জেলার সব প্রার্থীই মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মনোনয়ন অনেকটা চূড়ান্ত বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাই তিনি এবং তার কর্মী-সমর্থকরা মনোনয়ন নিয়ে নির্ভার রয়েছেন।
কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন-কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া, খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস এমএ মতিন খান, প্রয়াত মন্ত্রী এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কাইজার।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ। আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দৃশ্যমান আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এতে তিনি অনেকটাই নির্ভার রয়েছেন বলে জানা গেছে।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সি, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রিজবীউল আহসান মুন্সি।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন এবং বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম মিজানুর রহমান। এ আসনে মনোনয়নের জন্য ত্রিমুখী লড়াই শুরু হয়েছে। তিন প্রার্থী তাদের কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে মাঠে রয়েছেন কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া। তাছাড়া বিএনপি নেতা কায়ছার জামান বাপ্পী, প্রয়াত মন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন, খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকুর নাম শোনা যাচ্ছে।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে জোটের প্রার্থী হিসাবে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের নাম শীর্ষে রয়েছে। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল ইসলাম শাওন। এ দুজনের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বিরাজ করছে।
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে বিএনপির একক প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনের নাম রয়েছে। এ আসনে দৃশ্যমান আর কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনি এবং তার কর্মী সমর্থকরা অনেকটা নির্ভার রয়েছেন।
কুমিল্লা-৯ (সদর দক্ষিণ-লালমাই-নাঙ্গলকোট) আসনটিতে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে বেশ আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক সংসদ-সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী। তাছাড়া নাঙ্গলকোট উপজেলার মোবাশ্বের আলম ভুইয়া এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া নামে আরেকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। মনোনয়নের জন্য এখানে শুরু হয়েছে ত্রিমুখী লড়াই।
কুমিল্লা-১০ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম। এখানেও দুটি গ্রুপের মাঝে যুদ্ধংদেহী অবস্থা বিরাজ করছে।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রভাব থাকলেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিয়াজ মাখদুম মাসুম এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. কামরুল হুদা।
আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেটে রেখে এসব প্রার্থীরা এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোপূর্বে লন্ডন সফর করেছেন। তবে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পাননি বলে শুনেছি। লন্ডনে দৌড়ঝাঁপ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আশপাশের লোকজনের কাছেও তারা ধরনা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে এসব প্রার্থী মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
কুমিল্লা-৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ-সদস্য হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন বলেন, গত ১৬ বছর যাবত বহু অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অসংখ্য মামলায় আসামি হয়েছি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে দলের হাল ধরে রেখেছি। কর্মী-সমর্থকদের সুবিধা ও অসুবিধায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে মনোনয়ন পাব। কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া বলেন, পরিচ্ছন্ন ইমেজ এবং এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন প্রার্থীরাই আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাবেন। দলের হাইকমান্ড প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততা এবং এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। তাছাড়া বিগত ১৬ বছর ওই প্রার্থীদের পারফরম্যান্স, আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ততাসহ সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। একজন প্রার্থী দলের সব ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে পারলেই মনোনয়ন পেতে পারেন।
তিনি বলেন, এবার বিএনপি মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের নানা বিষয়ে কঠোরভাবে যাচাই বাছাই করবে।