আওয়ামী দোসররা বহাল তবিয়তে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান কবে?

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসররা এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। এখান থেকে বিদায়ি সরকারের অনেক দোসরকে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়োগে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান কবে শুরু হবে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই বিপ্লবের বিষয়ে বিদেশে কোনো ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংস্কারের কোনো ছোঁয়াও লাগেনি। এমন ব্যর্থতার জন্যে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে দায়ী করা হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের আমলে ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব নেন ফরেন সার্ভিসের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন। হাসিনার আমলে এই কর্মকর্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রটোকল বিভাগে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি দিল্লিতে তিন বছর, টোকিওতে তিন বছর, ইসলামাবাদে এক বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও তিনি দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, তিনি গ্রিস, কাতার ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
প্রফেসর ইউনূসের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা তুলে ধরে বহির্বিশ্বে তেমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ব্যর্থতা পররাষ্ট্র সচিবের এ ব্যাপারে উদাসীনতার ফল। বহুপক্ষীয় কূটনীতিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আওয়ামী দোসরদের অনেককে তিনি বঞ্চিত কর্মকর্তা অভিহিত করে সুপারিশ প্রণয়ন করেছেন। ফ্যাসিস্ট আমলে জসীম উদ্দিন জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন। ওই সময়ে তিনি শেখ হাসিনার হাত থেকে এই পদক গ্রহণ করেন। ওই ছবির একটি পোস্ট তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে আপলোড করে লিখেছেন, ‘২০১৮ সালের ২৩ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ করি।’ কট্টর আওয়ামী সমর্থক ছাড়া কাউকেই জনপ্রশাসক পদক দেওয়া হতো না। শুধু তাই নয়, ফ্যাসিস্টদের গণহত্যার বিপক্ষে এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়েও বিভিন্ন দেশে থাকা মিশনগুলোতে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। দ্বিপক্ষীয় বহুপক্ষীয় কূটনীতির ক্ষেত্রেও কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এছাড়াও, অনেক ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লেজে-গোবরে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কারণে দেশ অগ্নিগর্ভ হলেও জসিম হাসিনা সরকারের অনুগত ছিলেন। তিনি নিজের ফেসবুকে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে পোস্ট দিয়েছেন। হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এবং দিল্লিতে বসে হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধের ব্যাপারে তিনি ভারতের ওপর সামান্যতম চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি দূতাবাস বর্তমানে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত তার এলাকার প্রায় ৩০ কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করছেন। পলাতক সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজশাহীর নিজের নির্বাচনি এলাকা থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় ৯০ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান মোজাম্মেল হককে প্রফেসর ইউনূসের একান্ত সচিব হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোজাম্মেল সরকারি নির্দেশ মোতাবেক বেইজিংয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করে ঢাকা আসেন। জসীম তখন দুবাইতে অবস্থান করছিলেন। জসীম পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করে মোজাম্মেলের নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। জসীম পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলেন, মোজাম্মেল একান্ত সচিব হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যোগ দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জসীমের অনুরোধে আলী ইমাম মজুমদারকে ফোন করে মোজাম্মেলের নিয়োগ বাতিলের অনুরোধ করেন। এতে মাত্র একদিনের মাথায় ২৭ অক্টোবর মোজাম্মেলের সেই নিয়োগ বাতিল হয়। মোজাম্মেল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা। বিগত ১৫ বছর তাকে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। জসীম উদ্দিন ডিসেম্বরে কনসালটেশনের নামে অনেক গুরুত্বহীন দেশ সফর করে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করেছেন।