কাঠগড়ায় কামাল মজুমদারের কান্না
আর আ.লীগ করব না
পুলিশের জন্য কি না করেছি-সাবেক আইজিপি শহিদুল হক * সালমান-আনিসুলসহ ৬ জন নতুন মামলায় গ্রেফতার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আদালতের কাঠগড়ায় কাঁদতে কাঁদতে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর করব না। আজ থেকেই অব্যাহতি নিলাম।’ সোমবার সকালে কাফরুল থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কারাগারে ডিজিটাল কুরআন চেয়ে আকুতি প্রকাশ করেন কামাল মজুমদার। তিনি বলেন, আপনার (বিচারক) কাছে আমার আবেদন, আপনার কাছে সুবিচার চাই। একের পর এক মামলা দিয়ে আমাকে অত্যাচার করা হচ্ছে। এখন নাতি-নাতনিদের নিয়ে খেলা করার সময়। কিন্তু জেলখানায় অত্যাচার করা হচ্ছে। এখন আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডিজিটাল কুরআন ও ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দিচ্ছে না। আমাকে ডিজিটাল কুরআন, ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দেওয়া হোক। এরপর কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, আমার বয়স ৭৬, আমি ডায়াবেটিসের রোগী। চোখের ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নিতে পারছি না। তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করব না। আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করলাম।
এরপর কাঠগড়া থেকে নামার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, রাজনীতি থেকে একেবারে অব্যাহতি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি নিলাম। আমার দলীয় কোনো পদ নেই। ৭৬ বছর বয়সে রাজনীতি করা যায় না। আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। এরপর তাকেসহ অন্য আসামিদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় প্রবেশ করানো হয়।
এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক কাফরুল থানার এক হত্যা মামলায় শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ৬ জনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেফতার দেখানো অন্যরা হলেন-সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অপর সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র তাদের গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। এছাড়াও মোহাম্মদপুর থানার আরেক হত্যা মামলায় আনিসুল হককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাদের আদালতে তোলা হয়। এসময় সবার দুহাতে হাতকড়া লাগিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা হয়। এর মধ্যে কামাল আহমেদ মজুমদার ছাড়া সব আসামির মাথায় পুলিশের হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেখা যায়। সবাই মাথা নিচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যান।
এরপর আদালতের কাঠগড়ায় রাখা হলে আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, কামাল মজুমদার ও কামরুল ইসলাম তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তবে এসময় নীরব ভূমিকায় দেখা যায় পুলিশের সাবেক দুই প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহিদুল হককে।
পুলিশের জন্য কি না করেছি-সাবেক আইজিপি শহিদুল হক : এদিন কাফরুল থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর ওপর শুনানি শেষে কাঠগড়া থেকে সব আসামিকে একে একে নিচে নামানো হচ্ছিল। তবে বিপত্তি বাধে পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহিদুল হককে নামানোর সময়। তিনি আদালতের পুলিশ পরিদর্শক ফারুককে উদ্দেশ করে বলেন, তিনি তার শ্যালকের সঙ্গে দেখা করতে চান। তবে তার এ আবেদনে সায় দেননি পুলিশ পরিদর্শক ফারুক। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে উদ্দেশ করে ধমক দেন সাবেক আইজিপি। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা শহিদুল হককে বলেন, যার সঙ্গেই কথা বলেন না কেন, আদালতের অনুমতি নিতে হবে। পরে শহিদুল হক আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘পুলিশের জন্য কী না করেছি।’ পরে শহিদুল হকসহ অন্য আসামিদের আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।