Logo
Logo
×

শেষ পাতা

হাসিনার পিওনের অবৈধ সম্পদ

বিকাশের বিরুদ্ধে তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিকাশের বিরুদ্ধে তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিওন জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিকাশের কাছে একাধিকবার ডিস্ট্রিবিউশন হাউজটির তথ্য চেয়ে না পাওয়ার অভিযোগ করেছে তদন্ত সংস্থা। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশ কর্তৃপক্ষকে তথ্য দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

জানা যায়, গত বছরের ১ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। ২৬ নভেম্বর বিকাশ কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা মেহেদী মাকসুদ আবেদন করেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তথ্য না পাওয়ায় তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। তথ্য পেতে আদালতের নির্বাহী আদেশ চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, নোয়াখালীর চাটখিলে ‘স্কাই রি এরেঞ্জ’ নামে বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের মালিক পিওন জাহাঙ্গীর আলম। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তার চাহিদামতো তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।

জানা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কাই রি এরেঞ্জ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা ও উত্তোলন করা হয়। সাধারণ নিয়মে প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকউন্টে প্রতিষ্ঠানের অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকা থেকে টাকা জমা করার এবং ওই অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর হওয়ার কথা, যা ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের ব্যবসার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

সিআইডি জানায়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনায় আলামত পাওয়ায় অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তথ্য চেয়ে ২৬ নভেম্বর আবেদন করা হয়। এ আবেদনের পর বারবার বিকাশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও লিখিত জবাব পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে তাগাদাপত্র দেওয়া হলেও কোনো লিখিত জবাব দেয়নি বিকাশ কর্তৃপক্ষ। কাক্সিক্ষত তথ্য না পাওয়ায় জাহাঙ্গীরের মানি লন্ডারিং অপরাধের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সিআইডির আবেদনে পাঁচটি তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এরগুলোর মধ্যে রয়েছে-চাটখিলে স্কাই রি এরেঞ্জ লিমিটেড ও বিকাশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিনামার সত্যায়িত অনুলিপি। ডিস্ট্রিবিউশন হাউজটির কতটি এজেন্ট। বিকাশের সঙ্গে লেনদেনে হাউজটির কতটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। স্কাই রি এরেঞ্জের ১৫ বছরে বিকাশ থেকে বছরভিত্তিক ই মানি সংগ্রহের তথ্য। ১৫ বছরে হাউজটির মনিটরিংয়ের জন্য বিকাশের নিয়োজিত টেরিটরি ম্যানেজারের তথ্য। বর্তমানে স্কাই রি এরেঞ্জ পরিচালনাকারীর নাম ও ঠিকানা।

জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মেহেদী মাকসুদ বলেন, তবে আদালতের আদেশের পর বিকাশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে সম্মত হয়েছে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, আমাদের কাছ থেকে তথ্য পেতে সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবেদন পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বললে চাহিদামতো তথ্য পাঠানো হয়। এ পদ্ধতির বাইরে আর কোনো নিয়ম নেই। আমাদের দিক থেকে তথ্য না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক হিসাবগুলোয় ৫৯১ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ১০৭ টাকা বিভিন্ন সময়ে জমা হয়। এর মধ্যে ৫৮৯ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৬ টাকা উত্তোলন করা হয়। বর্তমানে তাদের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার ৮৫১ টাকা রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিওন জাহাঙ্গীর আলম ও স্ত্রী কামরুন্নাহারের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৯টি ব্যাংকে ২৯টি হিসাব খোলা হয়। ব্যাংকগুলো হলো-ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, রূপালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এরই মধ্যে পিওন জাহাঙ্গীর ও স্ত্রীর মালিকানাধীন ২৯টি ব্যাংক অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন এ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চার মেয়াদের প্রথম দুই মেয়াদের পুরোটা এবং তৃতীয় মেয়াদের প্রথমদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল এইড’ পদে কর্মরত ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ‘প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী’ পরিচয়ে তিনি তদবির, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করতেন। এছাড়া তিনি গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন।

সিআইডি জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী পরিচয় ব্যবহার করে জাহাঙ্গীর প্রতারণার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব টাকায় তিনি গাড়ি-বাড়িসহ নানা সম্পদ গড়েন। এছাড়া তিনি একে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে ডেভেলপার কোম্পানির মালিক ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম