Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভারতীয়রা আইন না মানলে সীমান্তে আরও কঠোর হবে বাংলাদেশ: বিজিবি মহাপরিচালক

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতীয়রা আইন না মানলে সীমান্তে আরও কঠোর হবে বাংলাদেশ: বিজিবি মহাপরিচালক

সীমান্তে ভারতীয়রা আইন না মানলে বাংলাদেশ আরও কঠোর অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিক। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক যুবক নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাতের এ ঘটনায় নিহত আল-আমিন মিয়া উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে। কক্সবাজার ব্যুরো ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধির খবরে বিস্তারিত-

কক্সবাজার : বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণ মাঠে শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নবসৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়নসহ (৬৪ বিজিবি) চারটি ইউনিট উদ্বোধন শেষে মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত হত্যা কোনোভাবে কাম্য নয়। ভারতীয় অনুপ্রবেশ যারা করে তাদের প্রতি সুন্দরভাবে নিয়মের মধ্যে আমরা গ্রেফতার করে হস্তান্তর করি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সীমান্ত হত্যা নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি প্রাধান্য এক নম্বরে ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহতের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে অত্যন্ত জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

বিজিবি প্রধান বলেন, বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনের পরে এই ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি যেন অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করে। তবে আমরা জোরালো শক্ত ও কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর পরে কিছু ছবি পেয়েছি। সেখানে সংঘবদ্ধ ১৫-২০ জন অবৈধভাবে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করছিল। তখন বিএসএফ বাধা দেওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়। সেই সংঘাতে বিএসএফ রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে ওই যুবকের পেটে লাগে। দুর্বল জায়গায় রাবার বুলেটও হত্যা ঘটাতে পারে। বাংলাদেশি যুবককে আহত অবস্থায় তারা (বিএসএফ) হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করিয়েছিল; তারপরও তাকে বাঁচানো যায়নি।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ হোক আর যাহোক হত্যা কোনো চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। আরও একটি (হত্যা) যদি হয় আমরা পরে আরও কঠোর অবস্থানে যাব।

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, কসবার ঘটনায় একজন বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে আছেন। আহত রক্তাক্ত অবস্থায় তার ছবিও আমরা পেয়েছি। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে এ ঘটনা ওই জায়গারই, তার প্রমাণ কী।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে বিজিবি ডিজি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ না করে (মাদক ছাড়া) তার নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বিজিবি, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কসবা উপজেলার বায়েক পুটিয়ার ভারত সীমান্তের ২০৫০ পিলার এলাকায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আল-আমিন মিয়া তার বাড়িসংলঘ্ন সীমান্তে শূন্যরেখায় যায়। এ সময় বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আল-আমিনকে বিএসএফ ভারতের বিশাল ঘর হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুক্রবার রাতেই সেখানে তিনি মারা গেছেন। শনিবার সকালে মারা যাওয়ার বিষয়টি বিজিবিকে নিশ্চিত করেছে বিএসএফ। এ ঘটনায় বিজিবির বিএসএফকে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।

এরপর শনিবার বিকাল পাঁচটার দিকে পুটিয়া এলাকার ২০৫০ পিলার এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী দুই দেশের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে আল-আমিনের লাশ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান। ভারতের বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের বিএসএফের ৪৯ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (সিও) অজিত কুমার।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান বলেন, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবকের আহত হওয়ার খবর রাতে দিলেও সকালে মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে বিএসএফ। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ আনা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ঘটনার জন্য বিএসএফ অনুতপ্ত হয়েছে।

নিহতের বাবা সুলতান মিয়া বলেন, আমার বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। বাড়ি থেকে গরু ছুটে গিয়ে শূন্যরেখায় চলে গেছে। গরু আনতে আমার ছেলে আল-আমিন গিয়েছিল। ভারতের বিএসএফ তাকে গুলি দিয়ে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ছেলেটি ৬ মাস আগে বিয়ে করেছিল। অল্প বয়সে অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূও বিধবা হয়ে গেল।

সীমান্তে যুবক নিহতের ঘটনায় জামায়াতের প্রতিবাদ : বাংলাদেশি যুবক আল আমিনকে গুলি করে হত্যা ও আরেক যুবক বিল্লালকে মারাত্মকভাবে আহত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানে এক বিবৃতিতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায়ই বিনা কারণে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করে এবং অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ৩ মাসে ভারতীয় বিএসএফ ৮ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং অনেককে আহত করেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সব সময়ই প্রতিবেশীদের কাছে বন্ধুসুলভ আচরণ কামনা করে। আশা করব ভারত সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে এবং বাংলাদেশি যুবক আল আমিনকে গুলি করে নিহত ও বিল্লালকে মারাত্মকভাবে আহত করার ঘটনার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম