পাতানো নির্বাচন সফল করায় পুরস্কার
নিয়মবহির্ভূত ৭৫০ পুলিশ পদক

পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক), পিপিএম (রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক) পদক মর্যাদা হারাচ্ছে। নথিপত্রে কাঠামো ঠিক থাকলেও গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ শাসনামলে এ পদক দেওয়া হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। পেশাগত জীবনে সৎ ও নির্ভীক কর্মকর্তাদের অধিকাংশই এই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে সহযোগীদের কৌশলে ‘সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ’ অবদানের আওতায় এনে নির্বাচনি পুরস্কার হিসাবে শত শত পদক দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের গচ্চা গেছে কোটি কোটি টাকা।
বিশেষ করে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর প্রায় সাড়ে ৭শ পুলিশ সদস্যকে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই পদক দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্তত ৯০ ভাগ নাম এসেছে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা প্রলয় জোয়ার্দারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুপারিশে। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে মর্যাদাশীল পদকের জন্য এ তালিকা করে পুরস্কৃত করা হয়। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসদ্ধানে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য বেরিয়ে আসে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বলা হয় ‘রাতের ভোটের নির্বাচন।’ প্রভাবশালী উচ্ছৃঙ্খল পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তায় দিনের ভোট রাতের অন্ধকারে বাক্সবোঝাই করায় চার ধরনের পদকে পুরস্কৃত করা হয় ৩৪৯ জনকে। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পদকধারী আনুমানিক ৫০ জন ছাড়া প্রায় সকাইকে দলীয় বিবেচনায় রাতের ভোট সফলের জন্য পুরস্কৃত করার অভিযোগ আছে।
মঙ্গলবার ২০১৮ সালের পদক পেয়েছেন এমন ১০৩ জনের পদক প্রত্যাহার করেছে সরকার। ২০২৪ সালে আয়োজিত নির্বাচনের পর দেওয়া হয় আরও ৪শ পদক। ওই সময় এত বিপুলসংখ্যক সদস্যকে পুলিশ পদক দেওয়া হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একক সিদ্ধান্তে। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের সিনিয়র একাধিক কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনি পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০৩ জনের পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব পদক চিহ্নিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া চলমান।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পুলিশ পদকসহ বিগত সরকারের আমলে যতগুলো পুলিশ পদক দেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগই নির্বাচনি পুরস্কার হিসাবে বিবেচিত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। জনগণের ট্যাক্সের টাকা এভাবে অপচয় করতে দেওয়া যায় না। এই অপচয় রোধ করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ সদর দপ্তর। চূড়ান্ত হলেই বাতিলের প্রক্রিয়া করা হবে।
এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে গিয়ে যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখা থেকে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ পদক বাড়ানোর একটি দাপ্তরিকপত্র পাওয়া যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব সিরাজুম মুনিরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে এই পত্র দেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম সেবা) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম সেবা)-এর ৪টি ক্যাটাগরিতে ৯০টির স্থলে ১১৫টি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিপিএম ১০টির স্থলে ১৫টি, বিপিএম (সেবা) ২০টির স্থলে ২৫টি, পিপিএম ২০ থেকে উন্নীত করে ২৫ ও পিপিএম সেবা ৪০ থেকে ৫০টি করা হয়। ১১৫টি পদকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিপত্রের কথা জানানো হয়।’
এই চিঠির পর পুলিশ পদক বাড়ানোর বিষয়ে আর কোনো পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়নি।
জানা গেছে, বিপিএম পদকের জন্য এককালীন ১ লাখ টাকা পুরস্কারের পাশাপাশি প্রতি মাসে একজন পদকধারী আজীবন পেয়ে থাকেন ১৫শ টাকা, বিপিএম সেবা পদকধারী ৭৫ হাজার টাকা এককালীন এবং আজীবন প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা, পিপিএম পদক ৭৫ হাজার টাকা এবং আজীবন ১ হাজার টাকা এবং পিপিএম সেবা পদকধারী এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
নিয়মানুযায়ী প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ‘পুলিশ সপ্তাহ’র অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই পদক বিতরণ করতেন।
জানতে চাইলে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে আসে সে অনুযায়ী পদকের অর্থ ছাড় করা হয়। আসলে এর বাইরে এই হিসাব শাখার কোনো দায়িত্ব নেই।
বিতর্কিত ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর দ্বিগুণের বেশি পদক দেওয়া হয় শুধু মৌখিক নির্দেশে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সরাসরি আদেশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য এসব পদক পেয়েছিলেন। পদকের এই তালিকায় সম্পৃক্ত করা হয় কক্সবাজারের বহুল আলোচিত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমারকেও।
২০১৮ সালে তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী এই তালিকা চূড়ান্ত করতে পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক প্রলয় জোয়ার্দারকে সদস্য সচিব করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স একটি কমিটি গঠন করে দেয়। কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। প্রলয় কুমার জোয়ার্দারকে সহায়তার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে নেছার উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম দায়িত্ব পান। নির্বাচন শেষে এই ৩ জনকে পুলিশ পদক দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে পুলিশ পদকপ্রাপ্ত এডিশনাল আইজিরা একেকটা রেঞ্জ বা বিভাগের মনিটরিং প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন সব রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনার। ওই নির্বাচনের পর ১৮তম বিসিএসের ১ জন, ২০তম বিসিএস ২৯ জন, ২১তম বিসিএসের ১২ জন, ২২তম বিসিএসে ৮ জন এবং ২৪তম বিসিএসে ১৪ জনসহ ৬৪ ছিলেন নির্বাচনি পুরস্কারের আওতায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২১তম ব্যাচের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কথায় আছে না-নামে নামে জমে টানে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে এসপি দেলোয়ার হোসেনের ক্ষেত্রে। তার আসল নাম দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। ২০০৩ সালে পুলিশে যোগদান করেন তিনি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর নামের শেষে ‘সাঈদী’ থাকায় সমস্যায় পড়েন। তখন নাম পরিবর্তন করে রাখেন দেলোয়ার হোসেন।
নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিচয় দিতে সাঈদী নাম নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সাঈদী নাম বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জামালপুরের এসপি হিসাবে পোস্টিং পেয়েছিলেন। এভাবে পুলিশের পেশাদারত্ব ও আত্মমর্যাদা দলীয়করণের মাধ্যমে শেষ হয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে।
পুলিশ পদকের জন্য প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ মাসের কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ায় ২০২৩ সালের পুলিশ সপ্তাহ ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় এসপিরা পুরস্কৃত হলেও ২০২৫ সালের পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ পদক পাওয়ার কথা।
অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এক বছরের কর্মকাণ্ডের জন্য ২০২৫ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ পদক পাওয়ার কথা। কিন্তু দলীয় এসপিদের চাপে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত সময়কে অর্থাৎ ১৩ মাস ১০ দিনকে বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ পদক দেওয়া হয়। পুলিশ পদক ঘোষণা করার জন্য ডিসেম্বর ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নিয়ে ৩টি বছরকে স্পর্শ করা হয়, যা পুলিশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে তৎকালীন জেলার এসপিরা পরবর্তী এক বছর ধৈর্য ধরতে রাজি হননি। ২০২৪ সালে মোট ৪শ জনকে ৪টি ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হয়। ১১৫ জনের সরকারি আদেশের বিপরীতে ৪শ জনকে পুলিশ পদক দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে পুলিশ পদক ৯০টির স্থলে দেওয়া হয় ৩৪৯ জনকে। সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে এভাবেই পুরস্কৃত করা হয়েছিল দলীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের।
তথ্যানুসন্ধানে পাওয়া পদক তালিকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ৩৪৯ জনকে এই ৪ ধরনের পদকে ভূষিত করা হয়। ওই সময় র্যাব মহাপরিচালক হিসাবে বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির পুলিশ কমিশনার হিসাবে মো. আছাদুজ্জামান মিয়া (তিনি আগেও ৩ বারের অধিক পুলিশ পদক পেয়েছেন), ডিআইজি অপারেশনস হিসাবে মো. আনোয়ার হোসেন (আগেও কমপক্ষে ৩ বার পুলিশ পদক পেয়েছেন), ওই সময় ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান (আগে কমপক্ষে ২ বার পুলিশ পদক পেয়েছেন), সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহহার আকন্দ (আগে কমপক্ষে ৪ বার পুলিশ পদক পেয়েছেন)। মেজর সিনহা হত্যা মামলার সময় কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনও বিপিএম পদক পেয়েছেন।
সিটিটিসির ডিসি হিসাবে প্রলয় কুমার জোয়ার্দারও (এর আগে কমপক্ষে ২ বার পুলিশ পদক পেয়েছেন) বিপিএম পদক পেয়েছেন। ওই তালিকায় বাদ যাননি ওসি প্রদীপও। ২৬ নম্বর ক্রমিকে ওসি প্রদীপও বিপিএম পদক পেয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বেনজীর আহমেদ, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, মো. ইকবাল বাহার, মোশারফ হোসেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, নিবাস চন্দ্র মাঝি, মো. কামরুল আহসান, খন্দকার গোলাম ফারুক, মো. শফিকুল ইসলাম, আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, বনজ কুমার মজুমদার, গোলাম কিবরিয়া, ড. হাসান উল হায়দার, মো. হুমায়ুন কবির, ওয়াইএম বেলালুর রহমান, মো. মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ, মীর রেজাউল আলম, মোহাম্মদ আলী মিয়া, দেবদাস ভট্টাচার্য, মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ, কৃষ্ণপদ রায়, একেএম হাফিজ আক্তার, ড. খ. মহিদউদ্দিন, মো. আবদুল বাতেন, চৌধুরী মনজুরুল কবীর, মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান, শেখ নাজমুল আলম, মো. আমিনুল ইসলাম, একেএম নাহিদুল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান, সরদার রকিবুল ইসলাম, জয়দেব কুমার ভদ্র, মোহাম্মদ মাহবুব আলম, মাহবুব হোসেন, মো. দিদার আহম্মদ, মো. আতিকুল ইসলাম, এম খুরশিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান, এসএম মোস্তাক আহমেদ খানসহ তৎকালীন সব জেলার এসপিদের পদক দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলার এসপির বাইরে সহেলী ফেরদৌস, মো. হামিদুল আলম, মো. আসাদউল্লাহ, প্রবীরকুমার রায়, ড. এএইচএম কামরুজ্জামান, ফারক আহমেদ, মাসুদ আহাম্মদ, নাসিয়ান ওয়াজেদ, মো. ফারুক উল হক, মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান, আবদুল্লাহ আল জহির, নেছার উদ্দিন আহমেদ, নাবিদ কামাল শৈবাল, ড. মন্জুরে আলম প্রামাণিক, মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, ছাইদুল হাসান, মো. শহীদুল ইসলাম, ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম, মো. আসাদুজ্জামান (সাবেক এসপি, ঢাকা) এবং মো. শাহাদাত হোসেন পুলিশ পদক পেয়েছেন। বাদ যাননি মোল্লা নজরুল ইসলামের মতো বিতর্কিত কর্মকর্তাও। পদক পেয়েছেন মো. আনিসুর রহমান, বিপ্লব কুমার সরকার, মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান, এএফএম আনজুমান কালাম, মো. মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (সাবেক এসপি, দিনাজপুর), খোন্দকার নুরুন্নবী, আবদুল মান্নান মিয়া, এসএম মেহেদী হাসান, আবিদা সুলতানা, মো. আলিমুজ্জামান, মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন, কাজী শফিকুল আলম, তেজগাঁও থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কক্সবাজার ৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে দলীয়ভাবে অকৃতকার্য করিয়ে জাতিকে ও বিশ্ববাসীকে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখানোর চেষ্টা করা হয়। নির্বাচনের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর শেষরাত পর্যন্ত সাইমুম সরওয়ার কমলের পক্ষে ভোট কাস্ট হয়নি। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ভোর ৩টার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কমলকে নির্বাচিত করার আদেশ আসে। অন্যথায় কমল আত্মহত্যার হুমকি দেন।
অতিরিক্ত বিলম্বের কারণে সিল মারার কাজে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপারগতা প্রকাশ করলে পুলিশ একাই ভোর পর্যন্ত নৌকায় সিল মেরে কমলকে পাশ করান। ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য জানান। সেই নির্বাচনে কমল ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ওই সময় কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন এবিএম মাসুদ হোসেন। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলার নির্বাচন তুলে আনা হয়। কমল সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ খন্দকারের আপন ভায়রা।
২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর জননিরাপত্তা বিভাগের আদেশে ২৪তম বিসিএসের ছাত্রলীগ করা ১২ জনকে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এবিএম মাসুদ হোসেন সেই ১২ জনের একজন। ৫ আগস্টের পর তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদায় অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে নিয়মিত পদায়ন পেয়েছেন।