Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

সরকারের ব্যর্থতা দেখছে বিএনপি ও জামায়াত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের ব্যর্থতা দেখছে বিএনপি ও জামায়াত

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে সরকারের ব্যর্থতা দেখছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, জানমালের নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। নাগরিক জীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। নেতারা আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দরকার নির্বাচিত সরকার। না হলে জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না। তারা মনে করেন, দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকসহ দ্রব্যমূল্যের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সবাই উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার থাকতে হবে। যাদের জনগণের সমর্থন থাকতে হবে, জনগণের আস্থা থাকতে হবে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের কাছে সরকার জবাবদিহি থাকবে। তারাই এর সমাধান করতে পারবে। ওয়ান-ইলেভেনেও কিন্তু পুলিশ-মিলিটারি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা দ্রব্যমূল্য দাম কমাতে পারেনি। বরং আরও খারাপ হয়েছে। তাতে কি লাভ হয়েছে? কোনো লাভ হয়নি।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। যে কারণে কোনো দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা নেই। সরকারের রাজনৈতিক উইং নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো-জনগণের সমর্থন ব্যতীত বর্তমান পরিস্থিতি নিরসন করার উপায় নেই। জনগণ থেকে সরকার বিচ্যুত হয়ে গেছে। সুতরাং জনগণের নির্বাচিত, সমর্থন ব্যতীত রাজনৈতিক সমর্থন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে, কোনো সরকারই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। নির্বাচিত সরকার থাকলে দলের নেতাকর্মীরা দায়বদ্ধ থাকবে জনগণের কাছে। তখনই এগুলো কাজ করে। সেটা আইনশৃঙ্খলা হোক আর দ্রব্যমূল্য হোক।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার এই পরিস্থিতিতে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি এটা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দুবর্লতা ও ব্যর্থতা। তারা পুরোপুরি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এসব ব্যাপারে আগাম যেসব প্রস্তুতি নিতে হয়, তা তারা নিতে পারছে না। এতে করে পুরো জাতি উদ্বিগ্ন। আমরা এটাও মনে করি যে, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর যারা দেশে আছে, প্রচুর কালো টাকার মালিক, তারা কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজ, ছিনতাই উসকে দিয়ে দেশকে একটা অরাজকতা তৈরি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে সরকার ও জনগণকে বিব্রত করা-এর পেছনে তাদের হাত থাকতে পারে। এ বিষয়ে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জানমালের নিরাপত্তা, নাগরিক জীবনের শান্তি ফিরে আনার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের ছয় মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য না। রাষ্ট্রের কাছে মানুষের প্রথম ও প্রধান চাওয়া হলো নিরাপত্তা; সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ও দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। তাই আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা উচিত।’

চরমোনাই পির প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা জানি যে পুলিশ প্রশাসনে স্বৈরাচারের অবশিষ্টাংশ থাকতে পারে যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ হয়তো নিচ্ছে না।’ কিন্তু সরকারকে মনে রাখা প্রয়োজন, এই সরকার দেশের কোটি কোটি বিপ্লবী জনতা সমর্থিত সরকার, যে জনতা স্বৈরাচারের পালের গোদাকে দেশছাড়া করেছে। ফলে স্বৈরাচারের কোনো অবশিষ্টাংশ প্রশাসনে থেকে গেলে তাদেরকে এতদিনেও ছুড়ে ফেলা গেল না কেন? কেন স্বৈরাচারের অপকর্মের হোতাদের এখনো প্রশাসন থেকে সমূলে উচ্ছেদ করা যায়নি? কোথায় দুর্বলতা? জাতি জানতে চায়।

তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী শক্তি পরিকল্পনা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করতে পারে। তবে সেটা প্রতিহত করার দায়িত্ব সরকারের। সেই দায়িত্ব নিতেই হবে।

এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘বাস ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিসহ সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নির্যাতন, খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মব সন্ত্রাস জনগণের জানমালের নিরাপত্তাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এক্ষেত্রে সরকার চরম দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব ঘটনার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।’

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যকর অবস্থার পর রোববার সাড়ে ৩টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাসভবনে নাটকীয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু দায়িত্বহীন নয়, সত্যের অপলাপ মাত্র। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আর দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার নেই।’ বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের কর্মকাণ্ড ও অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক। এ বিষয়গুলোকে প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকার না দিয়ে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠনের নানা ধরনের অপতৎপরতা চলছে, যা সরকারের আপাত নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম