বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি-ছিনতাই
থানায় মামলা, জড়িত ৭ জন শনাক্ত
সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ * বাড়ির মালিক ও দারোয়ানের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি ও কুপিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার দুদিন পার হলেও কাউকে আটক করা যায়নি। সোমবার বিকালে ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় ৭ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
বাসার দারোয়ানকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিবিসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থা অপরাধীদের ধরতে কাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে বাড়ির মালিক বা দারোয়ানের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী। রাত ১১টার আগেই গেটে তালা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তিযুক্ত জবাব নেই দারোয়ানের। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। পরে রামপুরা থানা পুলিশ এসে আশ্বস্ত করলে সড়ক ছেড়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
পরিবার ও স্বজনরা জানান, রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে বনশ্রীতে আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে সঙ্গে থাকা ২শ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আনোয়ারকে তার স্ত্রীর সামনেই কোপায় সন্ত্রাসীরা। স্বামী বাইরে চিৎকার করলেও বাসায় ঢোকাতে পারেননি তিনি। গেটের চাবির জন্য বাড়ির মালিকের কাছে গেলেও চাবি দেয়নি বলে অভিযোগ তার।
আনোয়ারের স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, দোকান আর আমার বাসার দূরত্ব ১ মিনিটের। প্রতিদিনের মতো রোববার রাতেও দোকানের মালামাল ও টাকাসহ সবকিছু নিয়ে বাসায় আসছিলেন আনোয়ার। এদিন রাত ৯টার দিকে দেশের পরিস্থিতি খারাপের কথা বলে বাসার দারোয়ান (নিরাপত্তাকর্মী) আমার স্বামীকে একটু আগে বাসায় আসতে বলেন।
তিনি বলেন, আনোয়ার বাসায় আসার আগে গেটের সামনে দুটি মোটরসাইকেল দেখেন দারোয়ান পিয়ারুল ইসলাম। পরে তিনি গেটে তালা দেন। এর পাঁচ মিনিট পর আনোয়ার বাসায় এলে তাকে ঘিরে ধরেন মোটরসাইকেল আরোহী ৭ দুর্বৃত্ত। সঙ্গে থাকা স্বর্ণ ও টাকা না দেওয়ায় আনোয়ারকে তিনটি গুলি ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে। তখন আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি। বাসার দারোয়ানও গেট খোলেনি। সবাই শুধু দেখেছে।
দারোয়ান পিয়ারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে। বাসার গেট খুলি নাই কেন সেটি নিয়ে সন্দেহ করছে। তিনি বলেন, বাড়ির দায়িত্বে থাকা রেজওয়ান স্যারের নির্দেশে গোলাগুলির ঘটনার আগে আমি সবাইকে সচেতন করেছি, যে দেশের অবস্থা ভালো না, সবাই যেন রাত ১১টার মধ্যে বাসায় আসেন। এর ৫ থেকে ১০ মিনিট পরই এই গোলাগুলির ঘটনা হয়। আমি ভয় পেয়ে যাই। কী দিয়ে কী হয়ে গেছে বুঝি নাই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গুলি করে ও কুপিয়ে ব্যবসায়ীর স্বর্ণলুটের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বনশ্রীর বাসিন্দারা। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
বনশ্রীর এফ ব্লকের বাসিন্দা তানভীর হোসেন বলেন, যারা ব্যবসা করেন তাদের দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রাত ১১টার পরে বের হতে হয়। সামনে ঈদ, সবারই রাতে কাজ থাকবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি এমন হয় তাহলে আমরা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারব না। এছাড়া বনশ্রী সোসাইটির নেতারা যখন নির্বাচন করেন, তখন তারা ওয়াদা করেন বনশ্রীর প্রতিটি রোডে সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা থাকলেও তার কোনো খবর নেই। সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীরাও সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ তার।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার চিকিংসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের জানান, গত এক সপ্তাহ আগে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় দুর্বৃত্তরা। আমাকে বলেছিল আমি নাকি অবৈধ স্বর্ণ কিনি। আমার নামে নাকি মামলা আছে। এসব কথা বলে তারা আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। পরে তাদের আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তখন আমি তাদের ফোন দিই যে ভাই সরাসরি এসে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যান। তখন ওই ব্যক্তি ফোনের ওপার থেকে জানায়- ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি, পরে এসে দেখা করব।’
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, তার কাঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যার কারণে তিনি ওই হাতটি এখন নড়াচড়া করতে পারছেন না। তবে সেখানে অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যস্ত এক্স-রে করে শরীরের ভেতরে গুলি দেখতে পাইনি। ধারণা করছি, তার অণ্ডকোষে একটি গুলি লেগেছে। সেটির অপারেশন করা হবে। আবারও অণ্ডকোষ ও কোমরে এক্স-রে করা হবে। তাহলে বলা যাবে যে, তার শরীরে কোনো গুলি এখনো আছে কি না। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। আশঙ্কার কোনো কিছু নেই।
এ বিষয়ে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে সোমবার বিকালে মামলা করেছেন। বাসার দারোয়ানকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছেন তারা। এ ঘটনায় মোট সাতজন সরাসরি জড়িত। তাদের ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ওসি আরও বলেন, জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে চলে যান।