কক্সবাজারে হেলমেট না পরা নিয়ে কথা কাটাকাটি
বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে সংঘর্ষে নিহত ১
দুর্বৃত্তরা ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায় বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে -আইএসপিআর

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিমে বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ছয়জন আহত হন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার সমিতি পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত শিহাব কবির নাহিদ (৩০) একই এলাকার নাছির উদ্দিনের ছেলে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তবে আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। হতাহতের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন জেলা সদর হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, দুপুরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলাকাবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল। দুপুর ১২টার দিকে সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মো. জাহিদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসছিলেন। তাদের বহনকারী গাড়িটি ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর চেকপোস্টে পৌঁছলে থামানো হয়। এ সময় জাহিদ হোসেনের হেলমেট না থাকা নিয়ে বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। এ সময় এলাকাবাসী জাহিদকে নিয়ে যেতে বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, এ সময় বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে বিক্ষুব্ধরা। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তাতে গুলিবিদ্ধ হন শিহাব কবির নাহিদ। লোকজন তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে আইএসপিআর-এর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানিয়েছেন, সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ঘটনাস্থলে ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীকে তল্লাশি চৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
১ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, কুতুবদিয়া পাড়ার জাহিদ নামের এক তরুণের হেলমেট না পরার ঘটনা নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত শিহাবের বাবা নাছির উদ্দিন কক্সবাজার পিটিআইয়ের সাবেক সুপার। মা আমেনা খাতুন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। থাকেন সমিতি পাড়ায়। গুলিতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে আমেনা খাতুন বলেন, ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় ছেলে (শিহাব) ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ একটি গুলি মাথায় এসে লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উপড়ে মগজ বেরিয়ে আসে। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাবোক্তগীন মাহমুদ বলেন, দুপুরে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। তার মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম হয়েছে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ ১৯টি গ্রাম-মহল্লা নিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড। ৭০ হাজার বাসিন্দার ৯০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। কয়েক বছর ধরে কিছু এলাকায় বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লোকজনের জন্য তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। দুই বছর আগে ২০টি ভবনে ৬০০ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে। এখন আরও ৮৫টি ভবন প্রস্তুত করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি সকালে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান।