মিরপুরে বাড়ি দখলে কথিত পিরের অপতৎপরতা
সাজানো মামলায় একটি পরিবারকে হয়রানি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে কথিত এক পিরের সাজানো মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর মিরপুর এলাকার একটি পরিবার। মিথ্যা অভিযোগে ইতোমধ্যে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। এ নিয়ে আদালত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শারমিন জাহান নামের এক গৃহবধূ। তার অভিযোগ-সৈয়দ এম সাইদুর রহমান আল মাহবুবী নামের এক ভণ্ডপির মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছেন। এছাড়া হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন পিরের অনুসারীরা।
লিখিত বক্তব্যে শারমিন জাহান বলেন, তার স্বামী জিয়াউদ্দীন রিপন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে মিরপুরে তার পৈতৃক বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি বাড়িটির ওপর স্থানীয় কথিত পির এম মাহবুবীর নজর পড়ে। মিরপুর এলাকায়ই তার আস্তানা হওয়ায় দলবল নিয়ে প্রায়ই তিনি বাড়ি দখলের চেষ্টা করেন। তবে রিপনের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত তিনি সফল না হওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির পথ বেছে নেন।
শারমিন বলেন, প্রতিদিনের মতোই গত ১৯ ডিসেম্বর রিপন অফিস শেষে বাসায় ফেরেন। একমাত্র শিশু সন্তানের সঙ্গে খুনসুটি করে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে হঠাৎ বাড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে রিপনের ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলে দেওয়া হলে কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ রিপনকে তুলে নিয়ে যায়। পরে কাফরুল থানায় গিয়ে তারা জানতে পারেন রিপনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা চালিয়ে এক ব্যক্তিকে আহত করার অভিযোগে মামলা আছে।
শারমিনের অভিযোগ, গ্রেফতারের আগেও পিরের চক্রান্তে মিরপুর আর্মি ক্যাম্পে তার স্বামীকে ডেকে নেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে জানার পর সেনাক্যাম্প থেকে খুব বেশি চাপ দেওয়া হয়নি। পরে ১৯ জুলাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করে ১০ ডিসেম্বর থানায় সাজানো মামলা দায়ের করা হয়।
শারমিন বলেন, মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাদী নিজেও আসামিকে চেনেন না। তারপরও জামিন মিলছে না। ইতোমধ্যে পিরের সমর্থকরা বিভিন্ন লোক মারফত জানিয়ে দিয়েছেন পির সৈয়দ এম সাইদুর রহমান আল মাহবুবীর হাত অনেক লম্বা। সরকারের বিভিন্ন জায়গায় তার নিজস্ব লোক রয়েছে। শত চেষ্টা করলেও জামিনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই গৃহবধূ বলেন, আমি একজন নারী। ভণ্ডপিরের লোকজনের ভয়ে ৩ বছরের কন্যা সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছি। এই ভণ্ডপির তার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলহাজতে রেখেছে। শত চেষ্টা করেও জামিনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। পিরের লোকজন আরও মামলা-মোকদ্দমা ও জীবনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় ন্যায়বিচারের জন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।