অমর একুশে বইমেলা ২০২৫
বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ
ছবি ও সেলফি তোলায়ই ব্যস্ততা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বইমেলা শেষ হতে বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু বইয়ের বিক্রি ভালো নয়। মেলায় আগতদের বড় একটা অংশ বই হাতে নিয়ে সেলফি ও ছবি তোলাতে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তাদের অনেকেই বই কেনেননি। এ কারণে বইমেলার প্রায় সব প্রকাশনার স্টল আর প্যাভিলিয়নে অসন্তোষ। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, বিপুল মানুষের সমাগম হলেও প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা কম। এ কারণে বইয়ের বিক্রিও কম।
একটি সূত্র জানায়, শুধু বেসরকারি প্রকাশনীই নয়, বাংলা একাডেমির বই বিক্রিও গত কয়েক বছরের তুলনায় ভালো নয়। অবসর প্রকাশনীর ম্যানেজার মাসুদ রানা যুগান্তরকে বলেন, মেলায় অনেক মানুষের সমাগম হলেও জনগোষ্ঠীর একটি অংশ আসছেন না। আরেকটি বড় কারণ মোবাইল ফোন ম্যানিয়া। বই হাতে নিয়ে অনেকেই ছবি আর সেলফি তোলায় বেশি ব্যস্ত থাকেন। যতটা ছবি আর সেলফি তোলা হয়েছে-তার দুই শতাংশ বইও বিক্রি হলে অনেক বই বিক্রি হতো।
প্রথমার ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, এবার বইমেলায় অনেক মানুষের আগমন থাকলেও সিরিয়াস পাঠক নেই। বইমেলায় লেখকদের আগমনও কম। এবার বইমেলায় অনেক জনপ্রিয় লেখককেও দেখা যাচ্ছে না। ইউনিভার্সাল প্রেস কাউন্সিলের ম্যানেজার আবু ইউসুফ বলেন, বইমেলায় মানুষ আসছে ঠিকই। কিন্তু বই সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। যতটা আশা করেছিলাম ততটা পূরণ হয়নি। বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে “কায়কোবাদের সাহিত্যে ‘শ্মশানে’র চিত্রাবলি” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশ নেন হাবিব আর রহমান। সভাপতিত্ব করেন আবু দায়েন।
প্রাবন্ধিক ইমরান কামাল বলেন, কায়কোবাদ স্বশিক্ষিত মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। কবি হিসাবে তার যখন আবির্ভাব তখন বাংলার সাহিত্যধারা হিসাবে কাহিনিকাব্যের প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করে। কবি হিসাবে তিনি নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘পুরাতন’ পথের পথিক হিসাবেই। তিনি কাহিনিনির্ভর কবি। তার প্রায় সব কবিতা ও কাব্যই কাহিনির আশ্রয়ে শিল্পীত হয়।
আলোচকরা বলেন, কবি কায়কোবাদের মধ্যে খুব অল্প বয়সেই স্বদেশ চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। তিনি কেবল কাহিনিভিত্তিক কাব্যেরই কবি নন, গীতিকাব্যেরও কবি। দেশপ্রেমের যথার্থ আবেগ এবং অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য বেদনাবোধ ছিল তার সমাজসচেতন মনের পরিচয়। তিনি আন্তরিকভাবে হিন্দু-মুসলমানের মিলন কামনা করেছিলেন। গীতিকবিতার জন্য তিনি বাংলা সাহিত্য জগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আবু দায়েন বলেন, কবি কায়কোবাদ বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। কবি হিসাবে তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তার মধ্যে যে শাশ্বত মানবিকতার বোধ ছিল, তাই-একজন কবি বা সাহিত্যিকের মূল চেতনার জায়গা।
এদিন লেখক বলছি মঞ্চে-নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক হাবিব আর রহমান এবং কবি আমিরুল মোমেনীন মানিক।
সামাজিক বাস্তবতার বেড়াজালে আটকে পড়া শহুরে ও গ্রামীণ নারীর লড়াই করে টিকে থাকার গল্প নিয়ে ‘কমলা রঙের রোদ’ নামের বই মেলায় এনেছে শব্দশৈলী প্রকাশনী। বইয়ের ১০টি গল্প ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঘুরে দাঁড়ানো কয়েকজন নারীকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। এরা আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সংগ্রামরত নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। বইটি লিখেছেন লেখক সোমা দেব। বইটি মেলার ৩৪নং প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আল নোমান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : এদিন কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মালেক মুস্তাকিম, কবি ড. শাহনাজ পারভীন, কবি মোশাররফ হোসেন খান এবং কবি মমতাজ রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা পারভীন কেয়া, নায়লা তারাননুম চৌধুরী ও শাহিদা পারভীন রেখা।
শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার : রোববার সকালে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজা। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ১ম সৈয়দ মু. আননুর হায়দার, ২য় শাহরিয়াদ রহমান শিহাব ও ৩য় ওয়াফিয়া নূর। খ-শাখায় ১ম আসবাহ রহমান, ২য় শাহরিয়ার রহমান হাবিব, ৩য় দীপান্বিতা নন্দী। গ-শাখায় ১ম নুজহাত সালসাবিল মুন, ২য় জায়ান দেওয়ান, ৩য় মায়মুনা চৌধুরী ফাইজা।
আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ১ম ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া, ২য় মাহরীন নাওয়ার ও ৩য় মেহজারিন ইসলাম রূপকথা। খ-শাখায় ১ম বেহজারিন হাসান তারফি, ২য় শরীফ ইবতিহাজ ইসলাম এবং ৩য় সুনিপুণ বড়ুয়া চৌধুরী এবং গ-শাখায় ১ম নুজহাত করিম ফাইজা, ২য় আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং ৩য় তাজকিয়া সমৃদ্ধি সূচনা।
সংগীত প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ১ম আরোহী বর্ণমালা, ২য় লাইসা নূর বিনতে রহমান এবং ৩য় তাহানি আবসি। খ-শাখায় ১ম নীলান্তি নীলাম্বরি তিতির, ২য় সার্থক সাহা এবং ৩য় অনিরুদ্ধ ধর। গ-শাখায় ১ম রোদসী নূর সিদ্দিকী, ২য় তানজিম বিনতাজ প্রত্যয় এবং ৩য় তোকি ইয়াসার আয়মান।