Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রেশন ও ভাতা বাড়ল ৫৫ হাজার আনসারের

মিজান চৌধুরী

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রেশন ও ভাতা বাড়ল ৫৫ হাজার আনসারের

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত থেকে সুরক্ষায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৫৫ হাজার সদস্যের দৈনিক ভাতা (রেশন) বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে রেশনসামগ্রীর পরিমাণও। স্থায়ী আনসার সদস্যদের জন্য দৈনিক রেশন ভাতা ১০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া চাল ও আটার পরিমাণ ঠিক রেখে তেল, চিনি এবং ডালের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ভাতা ও রেশনসামগ্রীর পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বর্ধিত রেশনসামগ্রীর জন্য বাজেটে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনমুখী হয়ে পড়েছিলেন এ বাহিনীর সদস্যরা। রেশন ভাতা ও সামগ্রীর পরিমাণ বৃদ্ধি চলমান অস্থিরতা প্রশমনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের রেশনসামগ্রী বাড়ানোর প্রস্তাব আসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রীর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এরপর অনুমোদনের জন্য দেওয়া হয় অর্থ উপদেষ্টার কাছে। অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, আনসার সদস্যদের বর্তমান যে পরিমাণ রেশন দেওয়া হয় তা দিয়ে ন্যূনতম জীবনযাপন কষ্টকর। কাজেই অতিরিক্ত সামগ্রী (অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক) অন্তর্ভুক্তকরণের যৌক্তিকতা রয়েছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দৈনিক ভাতা ভিত্তিতে চাকরি করছেন। তাদের ভাতার পরিমাণ ৫৪০ টাকা।

এদিকে টানা মূল্যস্ফীতি মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলছে। নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছর আগে একশ টাকার পণ্য এখন কিনতে হচ্ছে ১১১.৭২ টাকায়। শুধু এক বছর নয়, টানা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণ জীবন মানে চরমভাবে আঘাত এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে আনসার সদস্যদের যে পরিমাণ রেশন দেওয়া হয় সেটি দিয়ে ন্যূনতম জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এই কষ্ট থেকে কিছুটা লাঘব দিতে রেশনসামগ্রী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বর্তমানে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি ও মুগ ডাল দেওয়া হচ্ছে রেশনসামগ্রী হিসাবে। তবে পরিমাণের দিক থেকে বিবাহিত ও অবিবাহিত সদস্যদের জন্য ভিন্নতা আছে। চিনি ও মুগ ডাল অবিবাহিত সদস্যের তুলনায় এক কেজি বেশি পাচ্ছেন বিবাহিত সদস্যরা।

বর্তমানে এ বাহিনীর একজন বিবাহিত ও অবিবাহিত সদস্য মাসে চাল ২৮ কেজি, আটা, গম ২৮ কেজি ও ভোজ্যতেল ২ লিটার পাচ্ছেন। এছাড়া বিবাহিত সদস্যরা চিনি ও মুগ ডাল ২ কেজি করে পাচ্ছেন। একই পণ্য অবিবাহিতরা পাচ্ছেন ১ কেজি করে।

সারা দেশে ৪৭ হাজার ১৮৭ জন বিবাহিত সদস্য এবং ৮০৯৫ জন অবিবাহিত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন। নতুন রেশনসামগ্রী বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত সদস্যরা আগের নিয়মে বেশিই পাবেন।

নতুন রেশনসামগ্রীর পরিমাণের মধ্যে বিবাহিত ও অবিবাহিত সদস্যদের জন্য ২৮ কেজি চাল, গম ও আটা ২৮ কেজি, ভোজ্যতেল তিন লিটার, চিনি বিবাহিত সদস্য তিন কেজি, মুগ ডাল তিন কেজি। এছাড়া অবিবাহিত সদস্যের জন্য চিনি দুই কেজি ও মুগ ডাল দুই কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন রেশনসামগ্রীর মধ্যে এক লিটার ভোজ্যতেল, এক কেজি চিনি ও এক কেজি মুগ ডাল অতিরিক্ত যুক্ত করা হয়েছে। চাল, গম ও আটার পরিমাণ বাড়ানো হয়নি।

সূত্রমতে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের রেশন দিতে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে আনসারদের খাদ্য বাজেটে ১১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এখন থেকে বর্ধিত রেশন কর্মসূচি চালু করা হলে অর্থ সংকট দেখা দেবে। কারণ সে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ নেই। ফলে এই অতিরিক্ত অর্থ আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। ফলে নতুন রেশন কর্মসূচি অনুমোদন হলেও সেটি কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।

বাংলাদেশের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দৈনিক ভাতা ভিত্তিতে চাকরি করছেন। রাজস্ব খাত থেকে এ ভাতা মেটানো হয়। আনসারদের মতে তাদের যে কার্যালয়ে মোতায়েন করা হয়, সেখান থেকে তাদের বেতন দেওয়া হয়। আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের কাছে প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বা ইনস্টিটিউট থেকে গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য চাওয়া হয়। ৯০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ৩ বছরের জন্য আনসার সদস্যদের ওইসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া হয়। একজন আনসার সদস্য দৈনিক বেতন পান ৫৪০ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম