Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: বগুড়া-২

বিএনপির ৫, জামায়াতের ১ জন মাঠে, সক্রিয় মান্না

Icon

নাজমুল হুদা নাসিম, বগুড়া

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির ৫, জামায়াতের ১ জন মাঠে, সক্রিয় মান্না

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটিতে প্রাধান্য মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। স্বাধীনতার পর ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পাঁচবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, আওয়ামী লীগ একবার, জামায়াতে ইসলামী একবার, ফ্রিডম পার্টি একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামি জলসা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। কেউ প্রকাশ্যে, কেউবা ইঙ্গিতে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রমতে, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের কাসিম উদ্দিন আহমেদ, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আবুল হাসানাত চৌধুরী, সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাফফর হোসেন, ১৯৮৮ সালে ফ্রিডম পার্টির সৈয়দ মাসকুরুল আলম চৌধুরী, ১৯৯১ সালে জামায়াতের মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির রেজাউল বারী ডিনা, ১৯৯৬ সালের জুনে বিএনপির একেএম হাফিজুর রহমান, ২০০১ সালে বিএনপির রেজাউল বারী ডিনা, ২০০৮ সালে বিএনপির একেএম হাফিজুর রহমান নির্বাচিত হন। এরপর আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে চলে যায়।

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক করেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেত্রী বিউটি বেগমের সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান ছিল দুই হাজার ৭৪৯টি। বগুড়া-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে।

বিএনপি থেকে অন্তত পাঁচজন টিকিট চাইবেন। তারা তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান। প্রার্থীরা হাইকমান্ড তথা লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে চেয়ে আছেন। তারা বলছেন, দল যাকে টিকিট দেবে, তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ আসনে নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে একজনের নাম শোনা গেলেও আর কে কে নির্বাচন করবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে, প্রার্থী যতই হোক, নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন : বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মীর শাহে আলম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি এমআর ইসলাম স্বাধীন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সাবেক শিবগঞ্জ পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান মতিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজুর রহমান।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও জেলা জামায়াতের শূরা সদস্য, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান। গণঅধিকার পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ও শিবগঞ্জ উপজেলার সদস্য সচিব সেলিম সরকার রেজাও প্রার্থী হবেন।

৫ আগস্টের পর অসংখ্য মামলায় জর্জরিত তিনবারের সাবেক এমপি জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্না সুযোগ পেলে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। একই অবস্থা গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগমের। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তিনিও প্রার্থী হবেন।

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে তৎপর হয়েছেন। জামায়াত ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে। বিএনপিও ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করছে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নিজে ও তার নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন। বিএনপির টিকিটপ্রত্যাশী মীর শাহে আলম, এমআর ইসলাম স্বাধীন, মতিয়ার রহমান মতিন, ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল ও অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজুর রহমান প্রচার চালাচ্ছেন। এখানে বিএনপির বহিষ্কৃত বিউটি বেগমও জনপ্রিয়। তিনি মূলত বিএনপি প্রার্থীর ভোট কাটবেন।

বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ স ম আবদুল মালেক জানান, এ আসনে দলীয় প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরও মাঠ জরিপে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান বলেন, তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় জামায়াত থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। তিনি বলেন, জনগণ তাকে চাইছেন। তাই নির্বাচনে অংশ নিলে জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম বলেন, তিনি ১৯৮৮ সালে শিবগঞ্জ বন্দর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে আটমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন। ২০১৫ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন।

বর্তমানে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন দিলে তিনি আগামী নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনে প্রার্থী হবেন। তিনি স্বনির্ভরতা, দুর্নীতি নির্মূল, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবেন।

অপর প্রার্থী এমআর ইসলাম স্বাধীন বলেন, ১৯৮৩ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯১ সালে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। ২০০০ সালে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্মসম্পাদক ছিলেন। ২০২২ সালের কমিটিতে সহসভাপতি হন। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে টিকিট চাইবেন। বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান মতিনও।

এদিকে ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হয়েছেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অল্পের জন্য পরাজিত হন। আইনি কোনো জটিলতা না থাকলে তিনিও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম