ইউনিসেফের বিবৃতি
আন্দোলনে নারী অংশগ্রহণ ঠেকাতে ধর্ষণের হুমকি
বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছে পুলিশ * জুলাই বিপ্লবে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক শিশু

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই বিপ্লবে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। তিনি বলেন, সেই সময় পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছিল। আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শতাধিক শিশু ছিল। ইউনিসেফ এই মৃত্যুর অনেকের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে এবং কত শিশু নিহত বা আহত হয়েছে তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবার জন্য শোক জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে ইউনিসেফ প্রতিনিধি আরও বলেন, প্রতিবেদনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, শারীরিক আক্রমণ ও ধর্ষণের হুমকি নথিভুক্ত করা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য ছিল নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা। সে সময় শিশুরাও রেহাই পায়নি। তাদের হত্যা করা হয়, পঙ্গু করা হয়, নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়, অমানবিক অবস্থায় আটক ও নির্যাতন করা হয়। ধানমন্ডিতে ১২ বছর বয়সি এক বিক্ষোভকারী ২০০টি ধাতব গুলির কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায়। আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। ৬ বছর বয়সি এক কিশোরী, যে তার ছাদ থেকে সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ৫ আগস্ট ছিল বিক্ষোভের সবচেয়ে মারাত্মক দিনগুলোর মধ্যে একটি। আজমপুরে একটি ১২ বছর বয়সি বালক অন্তত এক ডজন লাশের সাক্ষী। সে ‘বৃষ্টির মতো’ পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়েছে। এ ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদের আতঙ্কিত করে তুলবে এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে এটা ‘আর কখনো হবে না’ তা নিশ্চিত করার জন্য দেশটির কাছে আবেদন করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মকর্তাদের দেশটির শিশু, যুবক ও পরিবারগুলোকে সুস্থ ও আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্যের জন্য তিনটি মূল দিক নিয়ে জরুরিভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
প্রথমত, যেসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে এবং তাদের শোকাহত পরিবারের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত, যারা এখনো আটক আছে এবং যাদের জীবন এই ঘটনাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, এই সময়টাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সার্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতা, দল এবং নীতিনির্ধারকদের পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হতে হবে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায়, সহিংসতা, অপব্যবহার ও শিশুদের বেআইনি আটকের সব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত করতে হবে। শিশু সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিচার খাতের সংস্কার করতে হবে।