হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ
অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে সমর্থিত

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছা দিয়ে সমর্থিত বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট খারিজের পূর্ণাঙ্গ আদেশে সম্প্রতি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর (আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ) বক্তব্যে এসেছে। উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক অনন্য পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেষ্টামূলক মতামত গ্রহণ করেন। মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা দিয়ে সমর্থিত।
পূর্ণাঙ্গ আদেশে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা আমাদের ইতিহাসের অংশ এবং আশা করি আগামী বহুবছর জনগণ যত্নে থাকবে। রিটটি ভ্রান্তধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করে তা সরাসরি খারিজ করা হয়।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিমকোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের বিষয়ে বলা আছে। অনুচ্ছেদটি বলছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হয়, আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি (রাষ্ট্রপতি) প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারবেন। ওই বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জানাতে পারবেন।
সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত ডিসেম্বরে রিটটি করেছিলেন। রিট আবেদনকারীপক্ষের ভাষ্য, যে বিষয় (অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) সংবিধানে নেই, সে বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া যায় না। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের রুলস অনুসরণ করতে হবে। আপিল বিভাগের রুল অনুসারে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যদের নোটিশ দিয়ে শুনানি করতে হবে। শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য, রেফারেন্সের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ করা হয়েছিল। তিনি শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এসএম মনিরুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব।
রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়। মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্যপরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ওইরূপ নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।