Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বাদীর আইনজীবী শিশির মনির

উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ধ্বংস করা হয় আলামত

সাগর-রুনী হত্যা মামলা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ধ্বংস করা হয় আলামত

ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যার তদন্তে আওয়ামী লীগ সরকারের তরফ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ওই সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ধ্বংস করা হয় মামলার আলামত। তদন্তে তৈরি করা হয় প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে তদন্ত আগায়নি। মঙ্গলবার বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্সের তদন্তের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। শিশির মনির আরও বলেন, উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন।

এদিকে সাগর ও রুনী হত্যা মামলায় আগের সরকার জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন রুনীর ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম রোমান। মঙ্গলবার হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাগর-রুনীর ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। অপরদিকে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৩ বছরেও সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, সাংবাদিকদের জীবন অভিশপ্ত জীবন। সবাই চায় আমাদের দমিয়ে রাখতে। বিগত সরকার আমাদের ভয় দেখানোর জন্য সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি। এই ১৩ বছরের কত মন্ত্রী এলো গেল, কিন্তু সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে সবাই উদাসীন ছিলেন। সমাবেশ থেকে সাগর-রুনী হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আজ (বুধবার) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাবেশ থেকে বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠনের দাবি জানানো হয়। ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, মোতাহার হোসেন মাসুম, রাজু আহমেদ, ডিআরইউর বর্তমান কমিটির সহসভাপতি গাযী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমএম বাদশা, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, মাছরাঙা টেলিভিশনের সিএনই রাশেদ আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক কুদরত-এ-খুদা প্রমুখ।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। আর রুনী ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।

ওই হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এ মামলা তদন্ত করেছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। ৪ দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। পরে আদালত র‌্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু তদন্তের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশে ২৩ অক্টোবর এ মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর র‌্যাবের হাত থেকে পিবিআই ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব বুঝে নেয়। তারপর তারা সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, এটি চাঞ্চল্যকর এবং দুর্ভাগ্যজনক। ১৩ বছরেও এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমি মনে করি এটি রাষ্ট্রীয় লেভেলে বড় ধরনের ব্যর্থতার ফল। এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। এই টাস্কফোর্স ৪ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্তের সারবত্তা পেশ করবে।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কিছু ডেভেলপমেন্ট (অগ্রগতি) হাতে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে এই ডেভেলপমেন্ট নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন সাবমিট করা হবে। অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি; এই মর্মে তদন্ত রিপোর্টে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি। এ আইনজীবীর আশা, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে স্পর্শকাতরতা আছে। এক ধরনের গোপনীয়তা আছে। তবে যাদের এক্সামিন করা হয়েছে, আলোচনা করেছেন, আলাপ করেছেন, অন্য মামলায় জেলে আছেন, এরকম ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। যারা কিছুটা বক্তব্য দিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ব্যাপারে তারা মুখ খুলেছেন।

আদালতের বাধ্যবাধকতার কারণে বর্তমানে সবটুকু জানানো উচিত নয় মন্তব্য করে শিশির মনির বলেন, কিছু ইন্ডিকেশন (আলামত) আসছে যে, অতীতে তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। স্বার্থান্বে^ষী মহলের ইন্টারেস্ট ইম্পিলিমেন্ট করার জন্য তদন্ত প্রক্রিয়াকে সঠিক আইনি পথে পরিচালিত হতে দেওয়া হয়নি। এগুলো তদন্তের অংশ হবে। পেছনে কারা কারা ছিলেন, কারা বাধা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন এগুলো আসবে। যারা রিট করেছেন তারা কেন রিট করেছিলেন, কেন র‌্যাবকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? র‌্যাব তো কোনো তদন্তকারী সংস্থা নয়। সেটিও খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংস্থা। শিশির মনির আরও বলেন, অতীতে উচ্চপর্যায় থেকে এখানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উচ্চপর্যায় চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসবে।

রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, তদন্ত তো আমরা বুঝি না। তারপরও সব কিছু দেখে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই। আমরা সব সময় মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী কথাবার্তা বলেছেন সব কিছুতেই আমাদের সন্দেহ তৈরি হয়। যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেডরুম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার না। এসব থেকে আমরা মনে করি, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এটার সঙ্গে জড়িত। সরকার আন্তরিক হলে ১২ বছর ধরে তদন্ত চলত না। তিনি বলেন, এতবার আশাভঙ্গ ঘটেছে যার ফলে আমরা আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু পাচ্ছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত রিপোর্ট কী আসছে সেটা জানতে পারছি।

সাগর-রুনী দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, আগে তো কিছু হতো না। এখন তো দেখছি যে ওরা (তদন্ত সংস্থা) কাজ করছে। একটু হলেও আমরা আশাবাদী। আশা করা যাচ্ছে, পজিটিভ কিছু একটা শুনতে পাব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম