Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শাহবাগ অবরোধ করে শিক্ষকদের বিক্ষোভ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শাহবাগ অবরোধ করে শিক্ষকদের বিক্ষোভ

ছবি: যুগান্তর

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকরা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। ছত্রভঙ্গ করতে ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। সেই সঙ্গে ব্যবহার করে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস। এতে দুই শিক্ষকসহ চারজন আহত হন। তবে মূল সড়ক থেকে সরানো গেলেও তারা ওই এলাকা ছেড়ে যাননি। সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা লেখা পর্যন্ত শিক্ষকরা পৃথকভাবে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন।

প্রাথমিকের শিক্ষকরা বলছেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন চলছে। অন্যদিকে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা বলছেন, নিয়োগযোগ্য নিবন্ধিত শিক্ষকদের দিয়ে শূন্যপদ পূরণ না করে, নতুন করে প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। এটি হতে পারে না। আগে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে। যতক্ষণ নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষক ও নিয়োগপ্রত্যাশীরা। এতে শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে রাস্তা থেকে তুলে দেয়। সাড়ে ৩টার দিকে আবারও রাস্তা অবরোধ করেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। তারা সায়েন্স ল্যাবমুখী রাস্তায় অবস্থান নেন। এ সময় শাহবাগ থেকে বাংলামোটরগামী সড়কে গাড়ি চলাচল করছিল। পরে পুলিশ সাড়ে ৪টার দিকে তাদের সড়ক ছেড়ে যেতে বলে। কয়েকজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নেয় পুলিশ। বাকিদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন প্রাথমিকের শিক্ষকরা জাদুঘরের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাদের পাশেই অবস্থান নেন এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

শাহবাগ মোড়ের এ যানজট ছড়িয়ে পড়ে বাংলামোটর, কাওরান বাজার, মৎস্য ভবন, সায়েন্স ল্যাব, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের অলিগলিতে। এর প্রভাব পড়ে নগরীর অন্য এলাকায়ও। যানজট নিরাসনে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও নিরলস কাজ করতে দেখা গেছে। 

প্রাথমিক শিক্ষকরা বলছেন, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। এর ফল প্রকাশ করা হয় ২১ এপ্রিল। ১২ জুন ভাইভা সম্পন্ন হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সুপারিশপ্রাপ্ত হননি-এমন ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের নিয়োগ বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।

আন্দোলনকারী আখলিমা আক্তার জানান, সুপারিশ পেয়েও যোগ না দিতে পেরে ৬ হাজার ৫৩১টি পরিবার সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। সবাই একধরনের মানসিক বিপর্যয় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা বলছেন, এনটিআরসিএ সিস্টেম দুর্নীতি করছে। ইনডেক্সধারীদের সুযোগ দিয়ে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট তৈরি করছে। আবার গণবিজ্ঞপ্তির শূন্যপদগুলো আবেদন করা যোগ্য প্রার্থীদের দিয়ে পূর্ণ করা হচ্ছে না। যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও স্বজনপ্রীতি ও ঘুস বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক জিএম ইয়াছিন বলেন, এনটিআরসিএ এখন পর্যন্ত ১৭টি নিয়োগ পরীক্ষার সুপারিশ করলেও মাত্র ৫টি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে। এতে প্রায় ১৩ হাজার যোগ্য শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বহু নিবন্ধিত শিক্ষক একাধিকবার পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরির সুপারিশ পাননি। অথচ কিছু লোক আবেদন ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে আমরা লাগাতার মানববন্ধন করে আসছি। এনটিআরসিএ-এর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আজও আমাদের নিয়োগ অনিশ্চিত। গত ১৭ অক্টোবর ও ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার এপিএস সাব্বির আহমেদ আমাদের দ্রুত নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। দাবি আদায় না হলে এখানেই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।

শিক্ষকসহ আহত ৪ : পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও জলকামানে আহত হয়ে দুই শিক্ষক ও দুই পথচারী শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন বগুড়া সদরের নিবন্ধিত শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধরগ্রামের সহকারী শিক্ষিকা নাজমুন নাহার কণা, ঢাবির সংগীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সিমা আক্তার এবং ইডেন কলেজের ইসলামের ইতিহাসের অনার্স প্রথম বর্ষের তানজিলা আক্তার।

আহত শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, শাহবাগ এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে পুলিশ লাঠিপেটা করছিল। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকেও লাঠিপেটা করে। সিমা আক্তার বলেন, আমি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরও আমাকে টেনে থানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। নিয়োগপ্রত্যাশী রিয়াজউদ্দিন বলেন, পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ, জলকামান নিক্ষেপ করে। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আহতদের অবস্থা তেমন নয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, তাদের বারবার বলা হয়েছে, সড়ক ছেড়ে আন্দোলন করুন। কিন্তু তারা সড়কেই ছিল। তাই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় কয়েকজন পুলিশের ওপর মারমুখী অবস্থান নেয়। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের থানায় রেখেছি। যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর কাউকে গ্রেফতার দেখানো হলে পরে জানানো হবে।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম