বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস
তিনশ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য
মাঠ থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে জমে উঠেছে বেচাকেনা * গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের দাম বেশি

ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আর মাত্র চারদিন পর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস-ভ্যালেন্টাইন’স ডে। সঙ্গে ঋতুরাজ বসন্তবরণে আনন্দে মেতে উঠবে সব বয়সের মানুষ। সেদিন বাসন্তী ও লাল রঙের শাড়িতে তরুণীরা সাজবে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে। ভালোবাসার মানুষকে দেবে লাল গোলাপ। বাহারি রঙের ফুলে ভরে উঠবে চারদিক। এছাড়া কিছুদিন পরই ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস। সেদিনও শহিদদের স্মরণে সবার হাতে থাকবে ফুল। আর এই তিন দিবস ঘিরে কৃষক পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরায় জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুল বাণিজ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিবসগুলো ঘিরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ফুল বাণিজ্য শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার যশোর, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে ফুল উৎপাদন বেড়েছে। এসব জায়গা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা ফুল নিতে ভিড় করছেন। এতে বিক্রিও বেড়েছে। গত বছর এ দিবস ঘিরে সারা দেশে ২৫০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এবার আশা করা যাচ্ছে, ৩০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। এর মধ্যে যশোরে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হবে। পাশাপশি সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। বাকিটা রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁও ফুলের বাজারসহ দেশের অন্যান্য স্থান পূরণ করবে। তিনি জানান, এবার ১৪ ফেব্রুয়ারি শবেবরাত। এ দিনেই বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস। এর মধ্যে এ বছর ঠান্ডা অনেক কম। আর ফুলও বেশি উৎপাদন হয়েছে। এতে শেষ সময়ে ফুলের দাম কমে যেতে পারে। তবে মূল্য কম হলেও আশা করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা, তা পূরণ হবে। এছাড়া ২৬ মার্চ ও ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখও আছে। তাই এ লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
যশোরের গদখালী ইউনিয়নের ফুলচাষি নাসরিন নাহার আশা যুগান্তরকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ফুলের কদর বেশি থাকে। তাই বিক্রিও বেশি হয়। এতে ফুলচাষিদের লাভও হয়, যা বছরের অন্য সময় হয় না। তবে যে দামে মাঠ থেকে আমরা ফুল বিক্রি করি, তা খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ দামে ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়। এতে লাভ যা করার, খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা করেন। তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে ভালোমানের প্রতি শ গোলাপ ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের ৭০০-৮০০ টাকা। ১০০ রজনিগন্ধা বিক্রি হয়েছে ৩০০-৪০০ টাকা। গ্লাডিওলাস প্রতি শ বিক্রি হচ্ছে রংভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা। জারবেরা প্রতি শ ৫০০-১০০০, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি শ ২০০-২৫০, গাঁদাফুল প্রতি হাজার ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাঠ থেকে এই ফুল স্থানীয় পাইকারি বাজারে ১০০-২০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কথা হয় সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের (গোলাপ গ্রাম) ফুলচাষি নাসিরের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছর আমরা এ সময়টার জন্য বসে থাকি। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় লাভও হচ্ছে।
এদিকে সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট ও আগারগাঁওয়ে ফুলের পাইকারি মার্কেট থেকে ফুল কিনে থাকেন। সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে শুক্র ও শনিবার বিক্রি বেশি হয়। প্রতিদিন শুধু রাজধানীর পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। আর বিশেষ দিবস যেমন: পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি বেশি হয়। রোববার শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ে ফুলের বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি পিস ফুলের দাম ১০-৩০ টাকা বেশি। সেক্ষেত্রে মানভেদে একটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। একটু ভালোমানের গোলাপ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ২০-৪০ টাকা, গাডিওলাস ২০-৫০ টাকা ও রজনিগন্ধা ১০-২০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া ৩৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদাফুল।
আজিমপুর থেকে শাহাবাগের ফুলের বাজারে ফুল কিনতে আসা শারমিন আক্তার বলেন, এবার ফুলের দাম অনেক। বিক্রেতারা ইচ্ছা করে বেশি দামে বিক্রি করছে। আর এ দাম দুইদিন পর আরও বেশি হবে। বিক্রেতারা একপ্রকার জিম্মি করে ফুল বিক্রি করবে।
শাহবাগের অনন্যা পুষ্পবিতানের মালিক মো. লোকমান হোসেন বলেন, তিন দিবস ঘিরে ফুল বিক্রি চাঙা হয়ে গেছে। তিন দিবস ঘিরে মৌসুমি বিক্রেতারাও ফুল কিনতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি ভিড় এড়াতে খুচরা ক্রেতারাও আগেভাগে দিবস উদযাপনের জন্য ফুল সংগ্রহ করছেন। সব মিলে বিক্রি জমে উঠেছে। তবে পরিবহণ ভাড়া বাড়ায় এবার ফুলের দাম একটু বেশি। আগারগাঁও পাইকারি ফুল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, প্রতিদিন শহরের প্রায় ৮০০ পাইকারি দোকানে ফুল বাণিজ্য হবে।