সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
ন্যায়বিচার ছাড়া পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরবে না

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো পুলিশ সদস্য ও তাদের নির্দেশদাতাদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা না হলে কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না। একইভাবে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, নিখোঁজ, গ্রেফতার বাণিজ্য এবং দুর্নীতিতে যুক্ত পুলিশ সদস্য ও তাদের নির্দেশদাতাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানও অপরিহার্য। ন্যায়বিচার ছাড়া পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার অসম্ভব। শনিবার অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। এর আগে গত ১-৫ জানুয়ারি আংশিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল কমিশন।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কে এক গভীর ক্ষত রয়েছে। এর শিকড় রোপিত হয় ঔপনিবেশিক আমলে। সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে এটি তীব্র আকার ধারণ করে। এই ক্ষত একদিনে সারানো সম্ভব না। দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ এটি। পুলিশ সংস্কার কমিশন এই ক্ষত নিরাময়ের জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু সুপারিশ করেছে। যা পুলিশকে জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে সহায়তা করবে বলে কমিশনের আশা। কমিশনের সুপারিশে মানবাধিকার রক্ষা, বলপ্রয়োগ নীতির সংস্কার, পুলিশের জবাবদিহিতা বাড়ানো, আইনি কাঠামোর সংস্কার, দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, দুর্নীতি দমন, পুলিশের কল্যাণ এবং জনসম্পৃক্ততাসহ নানা বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির আগে কমিশন জনমত জরিপ, অংশীজনদের মতামত এবং সংশ্লিষ্ট দলিলাদির সহায়তা নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ও জনগণের সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হবে অপরাধে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আর কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ এবং নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসাবে উপস্থাপন করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রায়শই গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে, তাদের ছবি ও পরিচয় প্রচার করে। এতে বিচারের আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সমাজের চোখে দোষী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যান। অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে নানারকম আপত্তিকর বিশেষণও ব্যবহার হয়।