Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভারতের ‘অবস্থান’ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঢাকায়

বক্তব্যের দায় নিতে না চাইলে হাসিনাকে ফেরত দিক

‘ফ্রি হ্যান্ড’ কথা বলার সুযোগ দেওয়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বক্তব্যের দায় নিতে না চাইলে হাসিনাকে ফেরত দিক

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশে বসে তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। তার বক্তব্যের জেরে দেশে এরই মধ্যে ঘটে গেছে বেশ কিছু ঘটনা। কিন্তু তিনি কথা থামাচ্ছেন না। বরং হুংকার দিচ্ছেন। তার বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে ঝড়। তারা বলছেন, শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। তার বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। যদিও শেখ হাসিনার বক্তব্যকে তার ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ আখ্যা দিয়ে এর জন্য ‘ভারত দায়ী নয়’ মর্মে দাবি করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। অর্থাৎ ভারত শেখ হাসিনার বক্তব্যের দায় নিচ্ছে না। শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং এ বিষয়ে ভারতের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা ভারতের এ ধরনের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে পালটা প্রশ্ন রেখেছেন-তাহলে শেখ হাসিনার বক্তব্যের দায় কার? তারা মনে করেন, ভারত এই দায় এড়াতে পারে না। এটা (শেখ হাসিনাকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ কথা বলার সুযোগ দেওয়া) তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ। আর ভারত দায় নিতে না চাইলে শেখ হাসিনাসহ ভারতে অন্যান্য আসামি যারা আছে, তাদের দ্রুত ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। তিনি (শেখ হাসিনা) পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে উসকানি দিচ্ছেন, একটা অরাজকতা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে সাপোর্ট করছে ভারতের পলিসিমেকাররা। এটা অদ্ভুত ব্যাপার। এটা তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ। একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ওপর আরেকটি রাষ্ট্রের এরকম অবস্থান চরমভাবে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি সব কিছু লঙ্ঘন করে।

এদিকে শনিবার কক্সবাজারে কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হলেও মানুষ সেই স্বাধীনতার সুফল পায়নি। দেশের শাসকরা মাথা উঁচু করে দেশ শাসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি শাসন করেছে এবং ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। সবশেষ ছাত্ররা ফ্যাসিজম থেকে দেশ মুক্ত করেছে। হাসিনার পলায়নের পর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা সহ্য হচ্ছে না। তাই দিল্লিতে বসে হাসিনা আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দেশবাসী বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার বিচার দেখতে চায়। সুবিচার হলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফাঁসি হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান যুগান্তরকে বলেন, ভারত যদি (শেখ হাসিনার বক্তব্যের) দায় না নিতে চায়, তাহলে ভারতকে বলব-তারা যেন শেখ হাসিনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কারণ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে ভারতের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভারত যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে তাদের দেশটিতে আশ্রয় দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে (শেখ হাসিনা) যুক্তরাষ্ট্রের ডিভাইস ব্যবহার করুক আর ভারতের ডিভাইস ব্যবহার করুক-এ জন্য দায়ী থাকবে ভারতের সরকার। সুতরাং ভারতের পক্ষ থেকে যে ধরনের দায়সারা বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, এই বক্তব্য কূটনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীন যুগান্তরকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে ধরনের কমেন্ট করা হয়েছে, এটা নিয়ে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের ফোরামের মাধ্যমে ডিল করতে হবে। ভারতের এই কথার একটা সমুচিত জবাব দিতে হবে। তার কারণ হচ্ছে, শেখ হাসিনা এখন একজন দাগী আসামি। সে শুধু একজন খুনিই নয়, তার ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট ইতিহাস আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি এখানে তাদের (ভারতের) অবশ্যই সংবেদনশীল মন্তব্য করা উচিত। অসংবেদনশীল মন্তব্য করে পরিস্থিতি আরও জটিল না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একই সঙ্গে তাদের দেশে (ভারতে) আশ্রয় দেওয়া এই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটা বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার কোনো বক্তব্যের জন্য দেশের মধ্যে যদি অশান্তি তৈরি হয় এবং ভারত যদি সেটাকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) বন্ধ না করে, তাহলে অবশ্যই ভারতকে তার দায় নিতে হবে। আর যদি তারা দায় না নিতে চায় তাহলে শেখ হাসিনাসহ ভারতে অন্যান্য যারা আসামি আছে, তাদের বাংলাদেশে হস্তান্তর করুক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম