Logo
Logo
×

শেষ পাতা

তেরো কারণে জনবান্ধব হতে পারছে না পুলিশ

Icon

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তেরো কারণে জনবান্ধব হতে পারছে না পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

যত সংস্কারই হোক না কেন-পুলিশ জনবান্ধব হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ না হবে। অন্য বিভাগ জনবান্ধব হলে পুলিশের পক্ষে তা অনেকটাই সহজ হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও সরকারের মনোভাব এবং নাগরিকদের মনোজগত শুদ্ধ হতে হবে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই মত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ জনবান্ধব না হওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট ১৩টি কারণও তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জনবান্ধব’ বিষয়টি সংক্রামক। পুলিশ ছাড়া অন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যেহেতু জনবান্ধব হতে পারেননি, তাই পুলিশের একার পক্ষে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বলা হয়, পুলিশে যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়, সেটি যথাযথ নয়। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢেলে সাজাতে হবে। এছাড়া পুলিশের আচরণগত সমস্যা চরম। জনবান্ধব পুলিশ তৈরি করতে হলে আগে পুলিশের আচরণ ঠিক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কাজের ব্যাপ্তি তুলে ধরে বলা হয়, মাঠপর্যায়ে কাজের ভলিউম বেশি। এ কারণে পুলিশের পক্ষে সেবাপ্রার্থী সবাইকে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সেবাপ্রার্থীকে একই কাজে বারবার থানা বা অন্যান্য স্থানে যেতে হয়। সেবাদানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যত্র থাকায় যথাসময়ে সেবা পাওয়া যায় না। এ কারণে যেসব ক্ষেত্রে সেবাপ্রার্থীর যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো নেওয়া সম্ভব হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামির অবস্থান জানানোর পরও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা অন্যত্র দায়িত্বে থাকায় আসামি গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। সেবাপ্রার্থীর কাছে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, সেগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ অধর্তব্য বলে মনে করে। এতে সেবাপ্রার্থী কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হন। ফলে পুলিশ সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব কাজে ব্যক্তিগত ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সন্তুষ্টির সম্ভাবনা থাকে না, নিজের আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে লাভবান হওয়ার বিষয় থাকে না, সেসব কাজ পুলিশ করে না।

এতে আরও বলা হয়, জেলা পর্যায়ে বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও কোনো রেফারেন্স ছাড়া কেউ পুলিশের কাছে সেবার জন্য গেলে তার বক্তব্য যথাযথভাবে শোনা হয় না। তাই যথাযথ সেবা পাওয়া যায় না। এটাকে বাস্তবতা উল্লেখ করে বলা হয়, পুলিশের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হয় সেগুলোর তদন্ত হয় দায়সারাভাবে। পুলিশের বিভাগীয় বিচার পদ্ধতির এই অবস্থার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া আইন ও বিধির বাইরে গিয়ে পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে যায়। বিষয়টি জনসাধারণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে অতিরিক্ত নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের পুলিশ রাজনৈতিক একটি পক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করে। এটি পুলিশের জনবান্ধবতা সৃষ্টিতে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বলা হয়, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি-দাওয়া আদায়সংক্রান্ত কর্মসূচির সঙ্গে বিদ্যমান আইন ও বিধির অনেক সাংঘর্ষিক বিষয় জড়িত। একইভাবে সরকারের অনেক নির্দেশ পুলিশকে অতিরঞ্জিত ও বিধিবহির্ভূতভাবে পালন করতে হয়। উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-‘গার্মেন্টস শ্রমিককে তার মালিক বেতন দিচ্ছেন না। বিষয়টি গার্মেন্ট মালিকের সুরাহা করার কথা। মালিক সমাধান দিতে না পারলে বিজিএমইএ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমাধান করবে। এটি শ্রমিক, মালিক ও সরকার-ত্রিপক্ষীয় বিষয়। বাস্তবে অবস্থা এমন যে, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে রাজপথেই সমাধান চান সবাই। এ ক্ষেত্রে ভোগান্তি হচ্ছে লাখো মানুষের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকরা অধিকার বা দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নামেন। যখন রাজপথ বন্ধ হয়ে যায় তখন বিঘ্ন ঘটে জননিরাপত্তার। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে আইনি কাঠামোর এক জায়গায় আনতে না পারার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একইভাবে বিরোধী দলগুলোর রাজপথ দখল, সহিংস কর্মকাণ্ড এবং এ সংক্রান্ত পুলিশের কার্যক্রম আইনি কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে বাধ্য করার বিষয়ও রয়েছে। সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বলা হয়, পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমেই পুলিশ কাঙ্ক্ষিত জনবান্ধব রূপ পেতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম