ছেলে সাদিকের আনা যন্ত্রে ধ্বংস হাসানাতের বাড়ি
বুলডোজারও ভাঙতে পারেনি আমুর বাড়ির দেওয়াল
![বুলডোজারও ভাঙতে পারেনি আমুর বাড়ির দেওয়াল](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/07/ezgif-2134258a8c299-67a54335e27fc.jpg)
টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পরও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনের একটি ইটও ভাঙতে পারেনি শক্তিশালী বুলডোজার। বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডের তিনতলা ওই ভবনটিকে বাড়ি না বলে প্রাসাদ বললেও কম বলা হবে। বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর রাত পর্যন্ত বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে ভবনের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ও সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর কালীবাড়ি রোডের বাসভবন। পারিবারিক কোটায় পাওয়া মনোনয়ন ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে মেয়র হওয়া তার বড় ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহর আনা বুলডোজার দিয়েই সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই বুলডোজারে ভাঙা পড়ে মা সাহান আরা বেগমের নামে সাদিকের প্রতিষ্ঠিত শিশু পার্কটিও।
বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শিক্ষার্থীদের অভিযানের পরই বরিশালে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বিষয়টি জানতে পেরে কালীবাড়ি সড়কে থাকা হাসানাত আব্দুল্লাহর বাসভবনে প্রবেশের সব পথে অবস্থান নেন সেনা সদস্যরা। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ওই এলাকায় পৌঁছান ছাত্র-জনতা। শুরুতে সেনাবাহিনী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে সরে দাঁড়ায়। এরপর গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে বাড়ি ভাঙা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার দিকে বুলডোজার এসে পৌঁছলে আরেক দফা বাধা দেন সেনা সদস্যরা। বুলডোজারের চাবিও নিয়ে যান তারা। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে চাবি ফেরত দেন তারা। এরপর বুলডোজার দিয়ে ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যে বাড়িটি ভেঙে ফেলেন তারা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে মেয়র হওয়ার পর এই বুলডোজারটি নগর ভবনের জন্য সংগ্রহ করেছিলেন হাসানাতের ছেলে সাদিক। নগরের অবৈধ ভবন আর স্থাপনা উচ্ছেদের কথা বলে এটি সংগ্রহ করেন তিনি। যদিও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই বুলডোজারটি বেশি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। যে তালিকায় শুধু বিএনপি নেতারাই নন নগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিমউদ্দিনও ছিলেন। সবশেষ সেই বুলডোজারেই ভাঙা পড়ল তার বাপ-দাদার বাড়ি আর মায়ের নামে গড়া পার্ক।
হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়ির পর ছাত্র-জনতা বুলডোজার নিয়ে নগরীর বগুড়া রোডে আমির হোসেন আমুর বাড়িতে যান। ভূতের বাড়ি নামে খ্যাত আমুর বাসভবনের গেট ভেঙে ঢুকলেও প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পরও মূল ভবনের একটি ইটও নড়াতে পারেনি বুলডোজার। আড়াই ঘণ্টা চেষ্টায় ভবনের নিচতলায় থাকা একটি জানালার একাংশ স্থানচ্যুত করা ছাড়া আর কিছুই করা যায়নি। তবে ভবনের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি সব মালামাল বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্র-জনতা। এর আগে ৫ আগস্ট ওই বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছিল। তখনও মূল ভবনের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি কেউ। গত ৬ মাসে অবশ্য সেই ক্ষতি মেরামত করে ভবনটিতে বসবাস শুরু করেছিলেন আমুসংশ্লিষ্ট লোকজন। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে শিক্ষার্থীরা যখন যান তখনও ভেতরেই ছিলেন তারা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কারা ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল তা জানাতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় প্রশাসনকে। অন্যথায় কঠিন অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনের বরিশাল মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা কাজী আবু যাঈদ।
বহু চেষ্টা চালিয়েও আমুর বাসভবনের দেওয়াল ভাঙা যায়নি খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাড়িটি দেখতে ভিড় জমাতে থাকেন উৎসুক নারী-পুরুষ। বিনা অনুমতিতে প্রবেশের সুযোগ না থাকায় বাড়িটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহও ছিল সবার। ৫ আগস্টের ভাঙচুরের পর খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে গেট ও সীমানা দেওয়াল মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয়েছিল।
দুপুর ২টা নাগাদ সেখানে গিয়ে চোখে পড়ে বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী-পুরুষের ভিড়। তিনতলা ভবনের ভেতরটা ঘুরে দেখছেন তারা। ডুপ্লেক্স স্টাইলে গড়া ভবনের সিঁড়ি নিচতলা থেকে উঠে গেছে তিনতলার ছাদে। প্রতিটি কক্ষে দামি মার্বেল টাইলস থেকে শুরু করে বহু মূল্যবাস ফিটিংস রয়েছে। বিশাল আয়তনজুড়ে নির্মিত বাড়ির আঙ্গিনায় সুদৃশ্য বাগান। সেখানে থাকা দোলনায় দোল খাচ্ছিলেন ৩ তরুণী। পাশেই থাকা কৃত্রিম ছাতার নিচের বেঞ্চে আড্ডায় কয়েক তরুণ। বাকিরা ব্যস্ত সেলফি আর বাড়ির ছবি তোলায়। অবশ্য বেলা সোয়া ৩টা নাগাদ সবাইকে বাইরে বের করে ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও বাড়ির আঙ্গিনায় রাত পর্যন্ত লেগে থাকে অগণিত মানুষের ভিড়।
আশপাশের বাসিন্দারা জানান, আমির হোসেন আমুর বাড়ি নির্মাণে কম করে হলেও ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয় মিনি পার্ক। বিপত্নীক আমুর বাড়িটি দেখে চোখ জুড়াতেন নগরবাসী। হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়ি ভাঙা আর আমির হোসেন আমুর বাড়ি ভাঙার চেষ্টা ছাড়াও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নগরের চৌমাথা এলাকায় সাহান আরা বেগম পার্কটিও ভাঙা শুরু করেন ছাত্র-জনতা।